You are currently viewing খলীফা আমীন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের কারণগুলি বর্ণনা কর।
খলীফা আমীন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের কারণগুলি বর্ণনা কর।

খলীফা আমীন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের কারণগুলি বর্ণনা কর।

প্রশ্নঃ খীলাফত দখলের ব্যাপারে খলীফা আমীন ও মামুনের বিরোধ ও গৃহযুদ্ধের কারণগুলি বর্ণনা কর।

  • ভূমিকা
  • প্রথম কারণ, আমীনের চুক্তি ভঙ্গ
  • দ্বিতীয় কারণ, চরিত্রগত পার্থক্য
  • তৃতীয় কারণ, আমীনের বিলাসিতা
  • চতুর্থ কারণ, আমীনের কু-শাসন
  • পঞ্চম কারণ, জাতি ভেদাভেদের দ্বন্দু
  • ষষ্ঠ কারণ, আব্বাসীয় রাজতন্ত্র
  • উপসংহার

উত্তর :- ( সংক্ষিপ্ত)ভূমিকা:- খলীফা আমীন ও মামুন উভয় ছিলেন আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশিদের পুর স্ত্রী যুবাইদার গর্ভে আমীন ও

মারাজিলের গর্ভে মামুন উভয় ভ্রাতার মধ্যে খিলাফতের ব্যাপারে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং পরে তা যুদ্ধের আকার ধারণ করে।

তাঁদের এই বিরোধ ও যুদ্ধে কতকগুলি কারণ ছিল- যা নিচে বর্ণনা করা হল।

প্রথম কারণ, আমীনের চুক্তি ভঙ্গ:- খলীফা হারুন মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় আমীনকে এবং তার পরবর্তীতে অপর পুত্র মামুনকে খিলাফতের

উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন এবং স্থির হয় যে, আমীনের মৃত্যুর পর মামুন খলীফা নিযুক্ত হবেন।

আর, এই চুক্তিপত্রটি চূড়ান্ত করার জন্য কাবাগৃহের দেওয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে খলীফা আমীন চুক্তি ভঙ্গ করে আপন শিশুপুর মুসাকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন এবং এবং কা’বা গৃহে রক্ষিত

চুক্তিপত্রটি টুকরো করে ছিড়ে ফেলে দেন। এ চুক্তিভঙ্গই ছিল আমীনের সঙ্গে খলীফা মামুনের বিরোধের প্রদান কারণ।

দ্বিতীয় কারণ, চরিত্রগত পার্থক্য:-আমীন ও মামুনের মধ্যে চরিত্রগতভাবে অনেক পার্থক্য ছিল। আমীন ছিলেন উগ্র প্রকৃতির,

বিলসপ্রিয়, অযোগ্য ও অকর্মণ্য। অপরদিকে মামুন ছিলেন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সকলে প্রিয়পাত্র। এই চরিত্রগত পার্থক্য গৃহযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

তৃতীয় কারণ, আমীনের বিলাসিতা:- খলীফা আমীন রাজপাট ছেড়ে দিয়ে সর্বদা বিলাসিতায় ময় হয়ে পড়েন। রাজদরবারে নতকী ও

গায়িকাদের নিয়ে আমোদ-প্রমদে লিপ্ত থাকতেন। রাজ্যের কোতাগার থেকে অঢেল অর্থ আমোদ-প্রমোদে উড়িয়ে দিতেন।

যার ফলে রাজকোশ শূন্য হয়ে পড়ে এবং দেশের উন্নিতর কাজে ব্যাঘাত ঘটে। খলীফ আমীনের প্রধানমন্ত্রী ফজল বিন-রাবীর

অযোগ্যতা ও অপশাসনের ফলে জনগণ বিদ্রহী হয়ে ওঠে এবং খলীফা মামুনের নেতৃত্বে সকলে আমীনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানান।

ফলে উভয়ের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

চতুর্থ কারণ, আমীনের কু-শাসন:- আমীনের উশৃঙ্খলতা ও তাঁর কুশাসনের ফলে সাম্রাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছিল,

ফলে জনসাধারণ তাঁর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। খলীফা মামুন সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে স্বীয় শাসনক্ষমতা ও চরিত্রগুণে সকলের

প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। সকলেই তাঁকে খলীফাপদে বসাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তা দেখে আমীন খলীফা মামুনের

প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন ও তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন।

আমীনের প্রধানমন্ত্রী ফজল বিন রাবীর স্বার্থপরতা ও বিশ্বাসঘাতকতা ছিল আমীন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য কারণ,

তাছাড় খুতবা থেকে মামুনের নাম বাদ দেওয়া বিরোধের একটি অন্যতম কারণ ছিল।

পঞ্চম কারণ, জাতি ভেদাভেদের দ্বন্দু: খলীফা আমীনের শাসনামলে আরব ও পারসিকদের মধ্যে জাতিভেদের দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।

খলীফা আমীন ছিলেন মাতা যুবাইদার দিত হতে খাঁটি আরব, আর মামুন ছিলেন মাতা মারাজিলের দিক হতে পারসিক।

ফলে আব্বাসী সাম্রাজ আরব ও পারসিক দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে পরিণত হয়, যার কারণে আমীন ও মামুনের মধ্যে

সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে।

ষষ্ঠ কারণ, আব্বাসীয় রাজতন্ত্র:- বলা অসাত নয় যে, খলীফা আমীন ও মামুনের গৃহযুদ্ধ ও ভ্রাতৃদ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হল— আব্বাসীয় রাজতন্ত্র।

পিতার মৃত্যুর পর ওয়াশি সূত্রে খলীফা নির্বাচনের অভিশাপ। আর, এই অভিশাপই সর্বদা ইসলামি সাম্রাজ্যের উজ্জ্বল চেহারাকে মলিন করেছে।

উপসংহার:- উল্লিখিত কারণগুলির পরিণতিতে ৮১১ খ্রিস্টাব্দে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। আমীন যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে

মদীনাতুল মনসুর দূর্গে আশ্রয় নেন। অবশেষে আততায়ীদের হাতে নিহত হন।

Leave a Reply