বাংলা চিত্রকলা: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০১৭,১৮,১৯,২০ সালের।
বাংলা চিত্রকলা

বাংলা চিত্রকলা: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০১৭,১৮,১৯,২০ সালের।

দ্বাদশ শ্রেণী | বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতির ইতিহাস: ২০১৭,১৮,১৯,২০ সালের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর – bnginfo.com

Class 12 Bangla: Wbbme And Wbchse 2017,2018,2019,2020 Board Exam Important Questions With Answers.

🔲পাঠ্য সূচিপত্র :

  1. বাংলা চলচ্চিত্রে মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।
  2. বাংলায় চিত্রকলা চর্চার ক্ষেত্রে নন্দলাল বসুর অবদান আলোচনা করো।
  3. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
  4. বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান সম্বন্ধে আলোচনা করো।
  5. বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায়ের অবদান আলোচনা করো।
  6. বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে মেঘনাদ সাহার অবদান আলোচনা করো।
  7. বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
  8. বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান আলোচনা করো ।
  9. বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
  10. বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

🟦বাংলা চলচ্চিত্রে মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।

➡️বাংলা সিনেমায় নতুন ধারা নিয়ে আসেন মৃণাল সেন। ১৯৫৫ থেকে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে তাঁর যাত্রা শুরু। টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম, ডকুমেন্টারি ফিল্ম এবং পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি সব মিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ (১৯৫৫)। ‘রাতভোর’-এ ব্যর্থ হলেন পরিচালক মৃণাল সেন। কিন্তু সেই ব্যর্থতা তাঁকে দমাতে পারেনি।

পরবর্তী ছবি নীল আকাশের নীচে’ এবং তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রবাণ’। চলচ্চিত্র পরিচালনার আগে চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখালেখি থেকেই মৃণাল সেনের ছবি তৈরির ভাবনা শুরু হয়। মৃণাল সেন পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল – ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৫৮), ‘বাইশে শ্রাবণ’ (১৯৬০), ‘আকাশ কুসুম’ (১৯৬৫), ‘ভুবন সোম’ (১৯৬৯), কলকাতা ৭১’ (১৯৭২), ‘পদাতিক’ (১৯৭৩), ‘আকালের সন্ধানে’ (১৯৮২), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৯১) ইত্যাদি। সারা জীবনে মৃণাল সেন অসংখ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।

তাঁর নির্মিত তথ্যচিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ‘মুভিং পারসপেকটিভ্স’ (১৯৬৭), ‘ত্রিপুরা প্রসঙ্গ’ (১৯৮২), ‘ক্যালকাটা মাই এলডোরাডো’ (১৯৮৯), ‘অ্যান্ড দি শো গোজ অন’ (১৯৯৬)। এ ছাড়াও তিনি ‘তসবির আপনি আপনি’ (১৯৮৯) নামে একটি দূরদর্শন চিত্র, বহু দূরদর্শন ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য রচনা করেন (যেমন দশ সাল বাদ’, ‘আজনভি’, ‘শাল’, ‘সালগিরা’, ‘জিত’, ‘দোহ বহেন’, ‘আজকাল’, ‘রবিবার’, ‘আয়না’, ‘স্বয়ম্ভব’, ‘কভি দূর কভি পাস’, অপরাজিত’)। ‘রাজধানী থেকে’ (১৯৫৮), ‘কানামাছি’ (১৯৬১), ‘জোড়াদীঘির চৌধুরী পরিবার’ (১৯৬৬) এবং ‘কাচকাটা হীরে (১৯৬৬)-র চিত্রনাট্যও মৃণাল সেনের রচনা।

🟦বাংলায় চিত্রকলা চর্চার ক্ষেত্রে নন্দলাল বসুর অবদান আলোচনা করো।

➡️বিহারের মুঙ্গের জেলায় বসবাসকারী খড়গপুরের এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নন্দলাল বসু। তিনি ছেলেবেলায় কুমোরদরে দেখাদেখি মূর্তি গড়তেন। তাঁর পিসতুতো ভাই অতুল মিত্রের ভর্তি হন পরামর্শে নিজের আঁকা ছবি নিয়ে নন্দলাল আর্ট কলেজে ১৯০৬-১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’, ‘শোকার্ত সিদ্ধার্থ’, ‘নটরাজের তাণ্ডব’, ‘ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা’, ‘জতুগৃহদাহ’, ‘পার্থসরথি’, ‘শিব মুখমণ্ডল’, ‘যম ও নচিকেতা’, ‘মহাপ্রস্থানের পথে যুধিষ্ঠির’, ‘উমার ব্যথা’, ‘প্রত্যাবর্তন’ প্রভৃতি। পৌরাণিক বিষয়কে ভিত্তি করে আঁকা তাঁর এই ছবিগুলিতে রূপনির্মাণের বিশেষ ভঙ্গি ধরা পড়েছে।

ভগিনী নিবেদিতার বইয়ের চিত্রসজ্জা রচনা করা ছাড়াও তিনি রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথেরও বহু বইয়ের অলংকরণ করেন। লেডি হেরিংহ্যামের সহকারী হিসেবে তিনি অজন্তা গৃহচিত্রের নকল করার কাজ করেন (১৯০৯)। তাঁর স্মরণীয় কীর্তির মধ্যে রয়েছে গোয়ালিয়রের বাগ্‌ গুহার ভিত্তিচিত্রের প্রতিলিপিগ্রহণ, জগদীশচন্দ্রের আহ্বান ‘বসু বিজ্ঞানমন্দির’ অলংকরণ, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিচিত্র ক্লাবে শিল্প শিক্ষকতা, ইত্যাদি। শিল্পচর্চা’ ও ‘রূপাবলী’ তাঁর লেখা শিল্পসংক্রান্ত গ্রন্থ। তিনি রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনিকে কালীঘাটের রঙিন পটের মতো করে রূপদান করেন। ভারতীয় সংবিধান তাঁরই আঁকা চিত্রে ও নির্দেশে অলংকৃত হয়।

🟦বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।

➡️রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রশিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। অবনীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণে ইটালিয়ান গিলার্ডি এবং ইংরেজ শিল্পী পামার-এর কাছে প্যাস্টেল, জলরং, তেলরং এবং প্রতিকৃতি অঙ্কন শেখেন। কিন্তু সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি ভারতীয় চিত্রাঙ্কন-রীতি পুনরুদ্ধারের সাধনা শুরু করেন।

ভারতীয় রীতিতে আঁকা তাঁর প্রথম দিকের বজ্রমুকুট, ঋতুসংহার, বুদ্ধ, সুজাতা, কৃষ্ণলীলা প্রভৃতি বিষয়ক ছবিতেও ভারতীয় আঙ্গিকেতর অনুকরণ প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ কলকাতার আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ হন। তিনি জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে জাপানি অঙ্কনরীতি শিক্ষা করেন। শিক্ষকরূপে সারা ভারতে ভারতীয় চিত্রাঙ্কন-রীতি পুনরুদ্ধারের যে ব্যাপক আন্দোলন অবনীন্দ্রনাথ শুরু করেন, তার মাধ্যমেই ভারতীয় শিল্প নবজন্ম লাভ করে।

শেষ জীবনে তিনি ‘কুটুম-কাটাম’ নামে বিখ্যাত আকারনিষ্ঠ সৃষ্টি করেন। ভগিনী নিবেদিতা, স্যার জন উডরক, হ্যাভেল প্রমুখের উদ্যোগে অবনীন্দ্রনাথের শিল্পাদর্শ জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি’ স্থাপিত হয়। ভারত ছাড়াও লন্ডনে, প্যারিসে, জাপানে তাঁর ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর আঁকা বিখ্যাত কিছু ছবির নাম – সাহাজাদপুর দৃশ্যাবলি, আরব্যোপন্যাসের গল্প, কবিকঙ্কন চণ্ডি, প্রত্যাবর্তন, জারনিস এন্ড, সাজাহান প্রভৃতি। এ ছাড়াও তিনি বহু মুখোশের পরিকল্পনাও রচনা করেছিলেন।

🟦বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান সম্বন্ধে আলোচনা করো।

➡️১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের বিক্রমপুর জেলার রাড়িখাল গ্রামে জগদীশচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন।

জগদীশচন্দ্র কলকাতায় এসে প্রথমে হেয়ার স্কুলে, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। ফাদার লাফোঁর সংস্পর্শে এসে তাঁর কাছ থেকেই জগদীশচন্দ্র প্রকৃতিবিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব হাতেকলমে পরীক্ষার দ্বারা আয়ত্ত করেন।

দেশসেবার জন্য জগদীশচন্দ্র বিজ্ঞানী হওয়ার সংকল্পে কেমব্রিজে গিয়ে ক্রাইস্টান কলেজে ভরতি হন। চার বছর বিলেতে থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও উদ্ভিদবিদ্যায় বুৎপত্তি অর্জন করে দেশে ফেরেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময় থেকেই তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে দেশীয় কারিগর দিয়ে নিজ ব্যয় যন্ত্রপাতি তৈরি করান।

ক্রমে আকাশস্পন্দন ও আকাশসম্ভব জগৎ, বিদ্যুৎ রশ্মির দিক পরিবর্তন, বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি, বিনা তারে সংবাদপ্রেরণ, এক্স-রে, কাচ ও বায়ুর রশ্মিপথ পরিবর্তন করার শক্তি, জীব ও জড় পদার্থের উপর বিদ্যুৎ রশ্মিপাতের ফলের ক্ষমতা, জড় ও জীবের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়ে পৃথিবীর নানা গবেষণাগারে মূল্যবান গবেষণা করেন।

তাঁর লেখা বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থগুলি হল – Physiology of Ascent of sap, Physiology of Photosynthesis, Nervous Mechanism Mechanism of Plants ইত্যাদি। বাংলায় লেখা তাঁর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলি অব্যক্ত গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর নিয়ে তিনি বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর গিরিডিতে এই কর্মবীর বিজ্ঞানসাধকের মহাপ্রয়াণ ঘটে।

🟦বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায়ের অবদান আলোচনা করো।

➡️১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পরে বাংলা চলচ্চিত্রের দুঃসময়ে সত্যজিৎ রায় (2.5.1921 – 23.৪.১৯৯২)-এর আবির্ভাব হয়। তাঁর হাতে একের পর এক ছবি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করে।

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট মুক্তি পাওয়া সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী-র প্রথম প্রদর্শন হয় নিউ ইয়র্ক-এর মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট-এ। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পথের পাঁচালি’ পুরস্কৃত হয়। এরপর ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬), ‘অপূর্ব সংসার’ (১৯৫৯) চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যে দিয়ে অপু ট্রিলজি সম্পূর্ণ করেন সত্যজিৎ রায়। ‘অপরাজিত’ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত। ‘অপরাজিত’ আর ‘অপুর সংসার’-এর মধ্যবর্তী সময়ে সত্যজিৎ রায় দুটি অসামান্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ‘জলসাঘর’ এবং ‘পরশপাথর’।

রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোটোগল্প নিয়ে ‘তিনকন্যা’, নষ্টনীড় উপন্যাস অবলম্বনে ‘চারুলতা’, পরবর্তীতে ‘ঘরে-বাইরে’ (১৯৮৪), এছাড়াও সত্যজিৎ রায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দুটি উপন্যাস ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-রও চলচ্চিত্রায়ণ করেন। নিজের কাহিনি নিয়ে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ (১৯৬২), ‘শাখা প্রশাখা’ (১৯৯০); ‘আগন্তুক’ (১৯৯২), ছোটোদের জন্য ‘সোনার কেল্লা’ (১৯৭৪), ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ (১৯৬৮) এবং ‘হীরক রাজার দেশে’ (১৯৮০) তৈরি করেন তিনি।

সত্যজিৎ তাঁর পরিচালিত সিনেমায় শুধু কাহিনি বা চিত্রনাট্য রচনাতেই নয়, সংগীত পরিচালনাতেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। ‘তিনকন্যা’, ‘নায়ক’ (১৯৬৬), ‘চারুলতা’ ‘হীরক রাজার দেশে’ইত্যাদি ছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেন। তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘লিজিয়ন অব অনার’-এ ভূষিত হন। নিউ ইয়র্কের ‘অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স’ কর্তৃক ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’-এর জন্যে বিশেষ ‘অস্কার’ সম্মান, ‘ভারতরত্ন’ সম্মান সহ ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে তিনি শতাধিক পুরস্কার ও সম্মান পান।

🟦বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে মেঘনাদ সাহার অবদান আলোচনা করো।

➡️বাংলা বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, জুবিলি স্কুল, ঢাকা কলেজ, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। গণিতে এমএসসি পাশ করে মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল রিলেটিভিট, প্রেসার অব লাইট, ও অ্যাস্টোফিজিক্স।

‘থিওরি অব থার্মাল আয়োনাইজেশন’ বিষয়ে গবেষণায় তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেন। লন্ডনল ও বার্লিনে তাঁর গবেষণা ব্যাবহারিক প্রয়োগ দেখানোর আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি বিদেশে যান। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগে প্রথম ‘খয়রা অধ্যাপক’ নিযুক্ত হন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ বছর কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি ‘স্কুল অব ফিজিক্স’ নামক পদার্থবিদ্যার শিক্ষাকেন্দ্র ও গবেষণার গড়ে তোলেন। কলকাতায় ফিরে এসে তিনি বিজ্ঞান কলেজের ‘পালিত’ অধ্যাপক হন ও পরে ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ গড়ে তোলেন।

সায়েন্স অ্যান্ড কালচার পত্রিকার মধ্য দিয়ে তিনি নানান সমাজ-সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি, ফ্রেঞ্চ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, বোস্টন অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স প্রভৃতির ফেলো, ইনটারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, ভারতীয় বিজ্ঞানোৎকর্ষিণী সমিতি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট ও সিন্ডিকেট এবং রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের সদস্য ছিলেন। আমন্ত্রিত সভ্য হিসেবে তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি প্রভৃতি দেশে যান। তাঁর লেখা বইগুলির মধ্যে রয়েছে The Principles of Relativity, Treatise on Heat, Treatise on Modern Physics, Junior text book of Heat with Meteorology প্রভৃতি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জীবনাবসান হয়।

🟦বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।

➡️বাংলা গানের ধারায়রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(৭.৫.১৮৬১ -৭.৮.১৯৪১) এক অবিস্মরণীয় নাম। রবীন্দ্র-সংগীত সময়ের সাথে সাথে সমসাময়িক হয়ে উঠেছে। বাঙালি সমাজে এই গানের গ্রহণযোগ্যতা চিরকালীন। হতাশাপূর্ণ জীবনে আলোর পথ দেখায় তাঁর গান। স্বাধীন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমণ-অধিনায়ক জয় হে’ এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। তাঁর গানের মোট সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি।

রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমস্ত গানের বাণী এবং সুর তাঁর নিজের। দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য রবীন্দ্রনাথের অল্প কিছু গানে সুর দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছেন বাংলা গানের বিষয়বিন্যাসের প্রচলিত রীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে গিয়ে নতুনত্ব এনেছেন শুধু বিষয়ে নয়, গানের গঠনেও। যা পুরোপুরি নতুন।

রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেছিলেন, প্রাচীন সংগীতের জড় পুনরাবৃত্তিতে নয়, বাংলা গানকে টিকে থাকতে হবে নিত্য নতুন সৃষ্টির মাধ্যমে। ভারতীয় প্রাচীন সংগীত ধারার সাথে তা সংযোগবাহী। ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুংরির সাথে পাশ্চাত্যের সুরধারাও এসে মিশেছে তাঁর গানে, আর আছে আমাদের বাউল, কীর্তন। সবটাই উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন করা যাবে না কিছুতেই। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য এবং গীতিনাট্যগুলিতেও বহু উল্লেখযোগ্য গান রয়েছে যা বিশেষ তাৎপর্যবাহী। বাংলা সিনেমার গান হিসেবে আজও রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক।

🟦বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান আলোচনা করো।

➡️বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী যামিনী রায়। গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করার পর তিনি ফাইন আর্ট বিভাগে ইউরোপীয় অ্যাকাডেমিক রীতির চিত্রবিদ্যা শেখেন। ১৯১৮-১৯ থেকে তাঁর ছবি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ছবি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক লাভ করে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন। আর্ট স্কুলে গিলার্ডি সাহেবের কাছে তেলরঙে আঁকায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে যামিনী রায় জলরঙে অসামান্য সব ছবি এঁকেছেন।

ফরাসি চিত্রধারার মধ্যে যাঁরা সরলরেখার পরিবর্তে ছবিতে ‘কার্ভ’ ব্যবহার করেন, তাঁদের চিত্রকলা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। সেজান, ভ্যান গগ আর গগ্যার মতো পোস্ট ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের ছবি দেখে তিনি আকৃষ্ট হয়েছেন। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তাঁর মূল লক্ষ্যটিকে তিনি নিজেই নির্দিষ্ট করেছেন, তা যেন ‘অন্য সকলের ছবির থেকে আলাদা হয় তা সে ভালোই হোক বা মন্দই হোক।’ পরবর্তী শিল্পীদের অনেকেই তাঁর দেখানো পথে নিজের চিত্রভাষা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

 🟦বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

➡️বাংলার গান ও নাটকের ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচিত নাটকগুলি সারা ভারতবর্ষেই প্রদর্শিত হত। ইতিহাসভিত্তিক সেই সমস্ত নাটকগুলির জন্য তিনি সৃষ্টি করেছিলেন প্রচুর গান। তাঁর নাটকগুলির বিপুল জনপ্রিয়তার মূলে ছিল আদর্শবাদ এবং যুগের চাহিদা অনুসারী মঞ্জু উপস্থাপন। তাঁর গানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনি সেই সময়ের সুর ধরতে পেরেছিলেন। সেই সুর এনেছিলেন তাঁর গানে।

সাজাহান নাটকের ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি প্রায় জাতীয় সংগীত পর্যায়ের হয়ে উঠেছিল। প্রতাপসিংহ নাটকের ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে’, দুর্গাদাস-এর ‘পাঁচশো বছর এমনি করে অথবা মেবার পতন-এর ‘মেবার পাহাড় মেবার পাহাড়’ সমস্ত ভারতবাসীর মন জয় করেছে। তাঁর রচিত অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান, চিরকালীন যেমন ‘যেদিন। সুনীল জলধি হইতে’ অথবা ‘ভারত আমার ভারত আমার’ অপূর্ব। তাঁর গান সেই সময় থেকেই ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’ নামে খ্যাত। রবীন্দ্র সমকালে অবস্থান করেও তাঁর গান আপন স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কালজয়ী হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও তাঁর গানের ভক্ত ছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গানও বিখ্যাত। যা ওই যুগে বাঙালি শ্রোতাদের নির্মল আনন্দের আস্বাদন এনে দিয়েছিল। তাঁর গানে তিনি দেশজ সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্য সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন, যা সুরের ক্ষেত্রে নতুনত্ব এনে দিয়েছে। বাংলা গানের এক বিরাট স্তম্ভ দ্বিজেন্দ্রগীতি।

🟦বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

➡️যে সমস্ত ব্যক্তি তাদের কাজের মাধ্যমে বাংলার চলচিত্রকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঋত্ত্বিক ঘটক। ঋত্বিক ঘটক (৪.১১.1925 – ৬.২.১৯৭৬)। ঢাকায় জন্ম নেওয়া ঋত্বিক ঘটকের কৈশোর ও প্রথম যৌবনে পদ্মাপারে কাটানোর অভিজ্ঞতা তার চলচ্চিত্র নির্মাণের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। বিমল রায়ের সহযোগী হিসেবে চলচ্চিত্র সৃষ্টিতে তাঁর হাতে খড়ি। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া ‘নাগরিক’ ছবিটি আর্থিক কারণে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায়।

১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পাওয়া ‘অযান্ত্রিক’ সিনেমায় যন্ত্রের সাথে মানুষের সম্পর্ককে যেভাবে বিষয় হিসেবে তাঁর পরিচালিত ছবির তালিকা ‘নাগরিক’ (২৯৫২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৭), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯), ‘মেয়ে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ (১৯৭৪)। সংখ্যায় খবই অল্প তাঁর পরিচালিত ছবির তালিকা, কিন্তু প্রতিটি ছবিই শিল্পনিষ্ঠ এবং নতুনত্বের সন্ধানী।

‘মেঘে ঢাকা তারা’তে ভাঙনের মুখে দাঁড়ানো এক উদ্বাস্তু পরিবারের বড়ো বোনের আত্মদান সমাজবাস্তবতার এক অসামান্য দলিল। অবিভক্ত বাংলার স্মৃতি, দেশবিভাগের যন্ত্রণা, পূর্ববঙ্গের জন্য নস্টালজিয়া উঠে আসে তাঁর ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’-তেও। ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলেছেন “ঋত্বিক মনেপ্রাণে বাঙালি পরিচালক, বাঙালি শিল্পী, আমার থেকেও অনেক বেশি বাঙালি। আমার কাছে সেইটেই তার সবচেয়ে বড়ো পরিচয়।”

Leave a Reply