You are currently viewing খলীফা হিসাবে মামুন এত প্রসিদ্ধ কেন ?
খলীফা হিসাবে মামুন এত প্রসিদ্ধ কেন ?

খলীফা হিসাবে মামুন এত প্রসিদ্ধ কেন ?

প্রশ্নঃ খলীফা মামুনের রাজত্বকাল বর্ণনা কর এবং তাঁর যুগে জ্ঞান- বিজ্ঞানের উন্নতি

সম্পর্কে আলোকপাত কর। অথবা, খলীফা হিসাবে মামুন এত প্রসিদ্ধ কেন ?

  • ভূমিকা
  • স্বহস্তে শাসনভার গ্রহণ
  • বিদ্রোহ দমন
  • জনহিতকর কাজ
  • জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন
  • উপসংহার

উত্তরঃ- (সংক্ষিপ্ত)

ভূমিকা:- খলীফা মামুন ৮১৩ খ্রিস্টাব্দ মুতাবিক ১৯৮ হিজরিতে স্বীয় ভ্রাতা আমীনের মৃত্যুর পর বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ

করেন এবং সঙ্গৌরবে শাসনকার্য পরিচালনা করে ৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ মুতাবিক ২১৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

খলীফা মামুন অন্তবিপ্লব ও গৃহযুদ্ধে মধ্য দিয়ে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

৮১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, ছয় বছর প্রধানমন্ত্রী ফজল বিন সাহলকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করে রাজকার্য পরিচালন করেন।

পরবর্তী ৮১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খলীফা স্বহস্তে গ্রহণ করে রাজকার্য পরিচালনা করেন।

স্বহস্তে শাসনভার গ্রহণ:- প্রধানমন্ত্রী ফজল বিন সাহলের দায়িত্বকালে দেসের বিভিন্ন অন্যলে বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

তাঁর কুশাসনে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাঁকে দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করার জন্য খলীফার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে বহু অভিযপণ পেশ হয়।

দেশে শাস্তিভঙ্গের জন্য প্রধানমন্ত্রী ফজল বিন সাহলকে দায়ী করা হয়।

সেনাপতি হারসামাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁর নিষ্ঠুরতার কারণে বাগদাদের

জনগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, ফলে খলীফা মামুনুর রশীদ ৮১৯ খ্রিস্টাব্দে স্বহস্তে সম্পূর্ণরূপে রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন।

বিদ্রোহ দমন:- স্বহস্তে শাসনভার গ্রহণ করার পরেই তিনি প্রথমে দেশের বিদ্রোহগুলি কঠোর হস্তে দমন করেন এবং দেশে শান্তি শৃঙ্খলা

ফিরিয়ে আনেন। তার সঙ্গে জনগণের আর্থিক ও সামাজিক কল্যানের দিকে নজর দেন। সর্বপ্রথম বাগদাদের সংস্কার সাধন করেন।

সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে যোগা ও সুশাসক নিযুক্ত করেন।

খলীফা মামুন সকল ধর্মের প্রতি সহানুভূতি ছিলেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।

সকল বিদ্রোহ ও জাতি দ্বন্দ্ব নির্মূল করে দেশে ন্যায়-নিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

জনহিতকর কাজ:- খলীফা মামুন ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ বিদ্যান ও দক্ষ শাসক। তাঁর বিদোৎসাহিতা, শাসনদক্ষতা ও বিচক্ষণতার

দিক দিয়ে বিচার করলে তাঁকে আব্বাসী বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ খলীফা বলা যায়। তাঁর শাসনামলে সকল শ্রেণির প্রজা সুখে শান্তিতে বাস করত।

প্রজাদের সুখ-সুবিধার জন্য তিনি রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদআসা ও বহুসরাই নির্মাণ করেন। জমি জরিপ

খালখনন ও জল সেচের ব্যবস্হা করে কৃষিকার্যের উন্নতি ঘটান।

জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন:- তাঁর শাসনামলে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি ঘটেছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনে

তাঁর যুগ ছিল এক গৌরবময় উজ্জ্বল যুগ। ইসলামের ইতিহাসে ইতিহাসে তাঁর যুগকে ‘আগাস্টান যুগ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি ‘বাইতুল হিমাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন।

তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এরিস্টটল, গ্যালন, প্লেটো, হিপোক্রাটস— পমুখ পন্ডিতগণের মূল্যবান গ্রন্থগুলি আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

সৌরবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদা গবেষণার জন্য তিনি সর্বপ্রথম মানমন্দির স্থাপন করেন। তাঁর যুগে গ্রহ, নক্ষত্র ও ধূমকেতু

নিয়ে বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচিত হয়।

বৈজ্ঞানিক আবুল হাসান তাঁর যুগেটেলিস্কোপ আবিস্কার করেন। তাঁর যুগে প্রচুর পরিমাণে কাগজ উৎপাদনের ফলে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে

ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। তাঁর যুগ ছিল আরবি সাহিত্যের নব-জাগরণের যুগ।

উপসংহার:- ইসলামের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইলম চর্চা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে জাগরণ ও উন্নত চিন্তাধারার বিকাশে ঘটে খলীফা মামুনের যুগে।

তাই, খলীফা মামুন ও তক্ষার কিলাফতকাল পৃথিবীর ইতিহাসে এত প্রসিদ্ধ।

Leave a Reply