ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
'ছাতির বদলে হাতি' সুভাষ মুখোপাধ্যায়

ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

‘ছাতির বদলে হাতি‘ প্রবন্ধটি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “আমার বাংলা” গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ছাতির বদলে হাতি’ রোচনাটিতে লেখক সরাসরি প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছেন জমিদারি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। চেংমান এবং কয়েকজন গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনরা কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে শোষণ করে চলেছে, তার ছবি তুলে ধরেছেন।

#️⃣দ্বাদশ শ্রেণি: ছাতির বদলে হাতি – বিশ্লেষণধর্মী, বর্ণনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী [প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫]

1️⃣’ছাতির বদলে হাতির রচনায় মহাজনি শোষণের যে ভয়াবহতার ছবি ফুটে উঠেছে তা উল্লেখ কারো।

✅সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনার গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনরা কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে শোষণ করে চলেছে, তার ছবি তুলে ধরেছেন। পাহাড়তলির চাষি চেংমান একবার হালুয়াঘাট বন্ধরে ব্যাবসার সওদা করতে আসে। ফেবার পথে প্রবল বর্ষায় সে আটকে ”লে মনমোহন মহাজন একটি নতুন ছাতা জোর করেই চেংমানকে গছিয়ে দেন।

বহুবার হাটে মনমোহনের সঙ্গে চেংমানের দেখা হলেও মনমোহন প্রতিবারই তাকে ছাতার দাম দেওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেন। কয়েক বছর পর মনমোহন চেংমানকে পাকড়াও করে তাঁর দেনা মিটিয়ে দিতে বলেন। লাল খেরোর খাতা খুলে চেংমানকে মনমোহন জানান যে, ছাতার দাম এবং তার চক্রবৃদ্ধি সুদ-সহ বর্তমানে তাঁর এক হাজার টাকা প্রাপ্য।

ডালু উপজাতিরদের গ্রাম কুমারগাঁতির ব্যবসায়ী নিবেদন সরকার তাঁর মুদিখানার মশলাপাতি কেনার জন্য কয়েক বছর ধরে টাকা ধার করেক চলেছিল মহাজন কুটিশ্বর সাহার কাছ থেকে। সেই ধারের টাকা তুলতে কুটিশ্বর সাহা নিবেদনের ছেষট্টি বিঘে জমি কেড়ে নিয়েছিলেন। আর-এক ধুরন্ধর মহাজন এক চাষিকে বাকিতে একটি কোদাল বিক্রি করেছিলেন। সেই টাকা তোলার অজুহাতে তিনি সেই চাষির কাছ থেকে পনেরো বিঘা জমি কেড়ে নেন। এইসব ঘটনার উল্লেখের মধ্য দিয়েই লেখক মহাজনদের শোষণের ইতিহাস তাঁর রচনায় তুলে ধরেছেন।

2️⃣”পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগেকার কথা।” পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেকার কথাটি সংক্ষেপে লেখো। অথবা, “বিশ্বাস করো, বানানো গল্প নয়।” লেখক যে গ্রন্থটির কথা উল্লেখ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখা।

✅লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনায় পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেকার যে কাহিনীর উল্লেখ করেছেন, সেটি তাঁর মতে একেবারেই ‘বানানো গল্প নয়’। তা হল এক গারো ব্যবসায়ী চেংমান-এর কাহিনি। চেংমান একদিন তার ব্যাবসার মালপত্র কিনতে হালুয়াঘাট বন্দরে যায়। ফেরার সময় প্রবল বৃষ্টিতে আটকে পড়ে সে মনমোহন মহাজনের গদির ঝাঁপের তলায় আশ্রয় নেয়।

বৃষ্টি কমার লক্ষণ না দেখে মনমোহন কলকাতা থেকে কেনা নতুন হাতাটি চেংমানের মাথার ওপর মেলে ধরে সেটি নিয়ে তাকে বাড়ি যেতে বলেন। নইলে বৃষ্টির জলে তার ব্যাবসার সব মালপত্র বরবাদ হয়ে যেত। পয়সার ব্যাপারেও চেংমানকে চিন্তা করতে বারণ করেন তিনি। নিরুপায় হয়ে তাই সে নিমরাজি হয়েই ছাতাটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

সেদিনের পর হাটে যখনই মনমোহন মহাজনের সঙ্গে তার দেখা হয়, সে তাঁকে ছাতির দাম নিতে অনরোধ করে। মনমোহন প্রতিবারই তাকে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেন। এইভাবে বেশ কয়েকবছর বাদে হঠাৎ একদিন হাটে চেংমানকে পাকড়াও করে মনমোহন সকলের সামনেই তাঁর পাওনা মেটাতে বলেন। লাল খেরোর খাতা বার করে মনমোহন চক্রবৃদ্ধি হারে হাতির দামবাবদ সুদসমেত তাঁর প্রাপ্য এক হাজার টাকা দাবি করেন, যা প্রায় একটা হাতির দামের সমান। এই অবিশ্বাস্য কাহিনির কথাই লেখক বলেছেন।

3️⃣”আর এক রকমের প্রথা আছে” কোন্ প্রথার কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে এই প্রথার অবসান ঘটেছিল ?

✅সুভাষ মখোপাধ্যায়ের ছাতির বদলে হাতি’ রচনা থেকে উদ্ধৃতিটিতে যে প্রথার কথা বলা হয়েছে, তা হলে ‘নানকার’ প্রথা।

জমিদার বা তালুকদারের যেসব স্বত্বহীনভাবে চাষজমি ভোগ করত, তারাই ছিল নানকার প্রজা। সাধারণ প্রজার তুলনায় এরা ছিল আরও দুস্থ। চাষের জমির ফল বা ফসলে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। তবুও খাজনা দিতে না পারলে তহশিলদার অর্থাৎ খাজনা আদায়কারী তাকে কাছারিতে নিয়ে গিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে মারধর করত এবং গুদামঘরে আটকে রাখত। পরে নিলাম ডেকে তার সম্পত্তি খাসদখল করতেন জমিদার-তালুকদার। এটাই হল নানকার প্রথা।

গারো পাহাড়ের উপত্যকার দুমনাকুড়া, ঘোষপাড়া, ভুবনকুড়া, নওয়াপাড়া এসব ডালু উপজাতি-প্রধান গ্রাম গুলিতে চাষিরা জেগে উঠেছিল। সেসব জায়গার চাষিরা একজোট হয়ে জানিয়েছিল যে, তাদের খেতের ধান তারা আর জমিদারের খামারে তুলবে না। সত্যিই তারা ধান তোলেওনি। পুলিশ-কাছারি কোনো কিছু করেই জমিদার চাষিদের জব্দ করতে পারেনি। এর ফলেই নানকার প্রথা এবং জমিদারদের অন্যান্য শোষণ ও অত্যাচারের অবসান ঘটেছিল।

4️⃣সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘স্থাতির বদলে হাতি’ রচনা বিলম্বনে গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনদের শোষণ বর্ণনা করো।

✅লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ছাতির বদলে হাতি’ “রচনায় গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনদের শোষণের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন।

পারো পাহাড়তলির ব্যবসায়ী চেংমান একবার হালুয়াঘাট বন্দরে ব্যবসার সওদা করতে এসে ফেরার পথে প্রবল বর্ষায় আটকে পড়ে মহাজন মনমোহনের গদির ঝাঁপের তলায় আশ্রয় নেয়। বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষণ না দেখে মনমোহন কলকাতা থেকে কেনা একটি নতুন ছাতা তাকে একপ্রকার জোর করেই গছিয়ে দেন। এরপর আশ্বাসের সুরে চেংমানকে তিনি এও জানান যে, পয়সার ব্যাপারে সে যেন বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে।

এরপর হাটবারে যেদিনই মনমোহনের সঙ্গে চেংমানের দেখা হয়, সেদিনই সে তাঁকে ছাতার দাম নিতে অনুরোধ করে। যদিও মনমোহন প্রতিবারই তাকে ছাতার দাম অর্থাৎ পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেন। কয়েক বছর পর হাটেই একদিন মনমোহন তাই যখন চেংমানকে পাকড়াও করে তাঁর দেনা মিটিয়ে দিতে বলেন, তখন আকাশ থেকে পড়ে সে। লাল খেরোর খাতা খুলে মনমোহন তাকে জানান যে, ছাতার দাম এবং তার চক্রবৃদ্ধি সুদ সহ বর্তমানে এক হাজার টাকা প্রাপ্য, যে টাকা একটা হাতির দামের সমতুল্য।

ডালু উপজাতির গ্রাম কুমারগাঁতির ব্যবসায়ী নিবেদন সরকার তার মুদিখানার মশলাপাতি কেনার জন্য কয়েক বছর ধরে টাকা ধার করে চলেছিল মহাজন কুটিশ্বর সাহার কাছ থেকে। সেই ধারের টাকা তুলতে কৃটিশ্বর সাহা নিবেদনের ছেষট্টি বিঘে জমি সেনার পায়ে কেড়ে নিয়েছিলেন।

আর-এক দূরদর মহাজন এক চাষিকে বাকিতে একটি কোদাল বিক্রি করেছিলেন। সেই টাকা তুলতে তিনি সেই চাষির কাছ থেকে পনেরো বিঘা জমি কেড়ে নেন। স্থানীয় মানুষদের কাছে শোনা এই তিনটি সত্য ঘটনার উল্লেখের মধ্য দিয়েই লেখক মহাজনদের শোষণের ইতিহাস তাঁর রচনায় তুলে ধরেছেন।

5️⃣”পাহাড়ের নীচে যেদিন থেকে লালনিশান খুটি গেড়েছে, সেই দিন থেকে তাদের চোখ ফুটেছে।” – চোখ ফোটার ফলে ‘তাদের’ কী কী পরিবর্তন ঘটেছে তা ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনা অবলম্বনে লেখো।

✅লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় সাধারণভাবে গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের সম্বন্ধে এবং বিশেষভাবে সে অঞ্চলের পঞ্চাশটা গ্রামের ডালুদের সম্বন্ধে একথা বলেছেন। ডালুরাই লেখককে জানিয়েছে যে, আগে তারা নানাভাবে অত্যাচারিত এবং অসম্মানিত হলেও ‘সে-দিন আর নেই।’ এ প্রসঙ্গেই লেখক প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

দিনের পর দিন শোষিত-নিপীড়িত-অত্যাচারিত হতে থাকা ডালু তথা গারো-পাহাড়িরা কমিউনিস্ট পার্টির ছত্রছায়ায় এসে জেগে উঠেছিল। দুমনাকুড়া, ঘোষপাড়া, ভুবনকুড়া, নওয়াপাড়া প্রভৃতি গ্রামের চাষিরা একজোট হয়ে জানিয়েছিল যে, তাদের খেতের ধান তারা আর জমিদারের খামারে তুলবে না। সত্যি সত্যি তারা তা আর তোলেওনি। জমিদাররা পুলিশ-কাছারি কোনো কিছু করেই তাদের শায়েস্তা করতে পারেননি। জমিদাররা তাই এই আন্দোলনের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ক্রমে চেতনাসম্পন্ন হয়ে ওঠে ডালু তথা গারো-পাহাড়িরা নিজেদের প্রাপ্য সম্মানও আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তথাকথিত ভদ্রলোকেরা তাই তাদের আর তুই-তোকারি করতে বা অন্যভাবে অশ্রদ্ধা করতেও সাহস পায় না। থানায় পুলিশও তাদের চেয়ারে বসতে দেয়।

পাহাড়ের লালনিশান তাদের জীবনযাত্রায় অনেক ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। লেখকের বর্ণনা অনুসরণে দেখা যায়, এই লালনিশান গারো পাহাড়িদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে। হাল-বলদের অভাবের কারণে তাই তারা গাঁতা পদ্ধতিতে অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে চাষাবাদ শুরু করেছে এবং গরিব চাষির কাজ অন্যরা বিনা পারিশ্রমিকে করতে শুরু করেছে।

এসব কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনই ডালু এবং গারো পাহাড়ের অন্যান্য উপজাতির মধ্যে লেখক সুনিপুণভাবে লক্ষ ও ক্রম পর্যালোচনা করেছেন।

6️⃣”পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেকার কথা।”— পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেকার কথাটি সংক্ষেপে লেখো। অথবা, “বিশ্বাস করো, বানানো গল্প নয়। ” – লেখক যে কাহিনি সম্বন্ধে একথা বলেছেন, সেটি সংক্ষেপে লেখো।

✅লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনায় পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেকার যে কাহিনির কথা বলেছেন, সেটি তাঁর মতে একেবারেই ‘বানানো গল্প নয়’। তা হল গারো পাহাড়তলির এক গারো ব্যবসায়ী চেংমান-এর কাহিনি। চেংমান একদিন তার ব্যবসার মালপত্র কিনতে হালুয়াঘাট বন্দরে গিয়েছিল। ফেরার সময় প্রবল বর্ষায় আটকে পড়ে সে মনমোহন মহাজনের গদির ঝাঁপের তলায় আশ্রয় নেয়।

বৃষ্টি কমার লক্ষণ না দেখে মনমোহন কলকাতা থেকে কেনা একটি নতুন ছাতা চেংমানের মাথার ওপর মেলে ধরে সেটি নিয়ে তাকে বাড়ি যেতে বলেন। তা না হলে বৃষ্টির জলে তার ব্যবসার সব মালপত্র বরবাদ হয়ে যেত। পয়সার ব্যাপারেও চেংমানকে চিন্তা করতে বারণ করেন তিনি। নিরুপায় হয়ে সে তাই নিমরাজি হয়েই ছাতাটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

সেদিনের পর হাটে যখনই মনমোহনের সঙ্গে তার দেখা হয়, সেদিনই সে তাঁকে ছাতির দাম নিতে অনুরোধ করে। মনমোহন প্রতিবারই তাকে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেন। এইভাবে বেশ কয়েকবছর কেটে গেলে ক্রমে ক্রমে চেংমান ছাতি প্রসঙ্গটা ভুলেই যায়। হঠাৎ একদিন হাটেই চেংমানকে পাকড়াও করে মনমোহন তাঁর পাওনা মেটাতে বলেন। সামনে সমূহ সর্বনাশ দেখতে পায় সে। লাল খেরোর খাতা বার করে মনমোহন চক্রবৃদ্ধি হারে ছাতির দাম বাবদ সুদসমেত তাঁর প্রাপ্য এক হাজার টাকা দাবি করেন, যা প্রায় একটা হাতির দামের তুল্য। এই কাহিনির কথাই লেখক বলেছেন।

7️⃣সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনা অবলম্বনে গারো পাহাড়িদের ওপর জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার বর্ণনা করো।

✅লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনায় গারো পাহাড়ের চাষিদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যে, ফসল কাটার পর প্রথমেই চাষিকে সেই ফসল জমিদারের খামারে তুলতে হত। ভূস্বামীর ধারদেনা মেটানোর পরই চাষিরা ফসল ঘরে তুলতে পারত। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান চাষিকে দিতেই হত। আর জমিদারের কাছে ঋণী চাষিকে ধান দিয়েই ঋণশোধ করতে হত।

এক টাকা ধারের জন্য সেই সময় ধার্য ছিল এক মন ধান। তার ওপর ছিল আবওয়াব অর্থাৎ অতিরিক্ত দেয় কর। মূল করের চেয়ে আবওয়াবের পরিমাণ বেশি ছিল বলে লেখক ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’ প্রবাদটি এক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। তাই, কয়েক মাস ধরে যে চাষি তার বুকের রক্ত দিয়ে জমিতে ফসল ফলাত, শেষমেশ পালুই অর্থাৎ খড়ের গাদামাত্র হাতে করেই সে ঘরে ফিরতে বাধ্য হত।

সাধারণ প্রজাদের তুলনায় নানকার প্রজাদের অবস্থা ছিল আরও দুর্বিষহ। স্বত্বহীনভাবে চাষজমি ভোগ করত জমিদার বা তালুকদারের যেসব ভৃত্য, তারাই ছিল নানকার প্রজা। জমির ফসল বা আম-কাঁঠালে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। জমি জরিপ করার পর তাদের প্রত্যেকের জন্য আড়াই টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ধার্য হত। সেই খাজনা দিতে না পারলে জমিদারের গোমস্তা নানকার প্রজাকে জমিদারের কাছারিতে নিয়ে গিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে মারধর করত এবং গুদামঘরে আটকে রাখত। তারপর নিলাম ডেকে সেই প্রজার সমস্ত সম্পত্তি দখল করতেন জমিদার। জমিদারদের এইসব শোষণ অত্যাচারের কথাই লেখক শুনিয়েছেন তাঁর ‘ছাতির বদলে হাতি’ রচনায়।

Leave a Reply