You are currently viewing উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করুন
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রথম জীবনে মাদ্রাজ কাউন্সিলের গভর্নর নিযুক্ত হয়ে এই উপমহাদেশে আগমন করেন। এ সময়ে ভেলোরে যে সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তা দমনে তিনি ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তাঁকে স্বদেশে ফিরিয়ে নেন। অতঃপর লর্ড আমহার্স্ট স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে গেলে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ পুনরায় বেন্টিঙ্ককে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করে এদেশে পাঠানো হয় এবং তিনি ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বপদে বহাল ছিলেন। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় উদারপন্থী শাসক ছিলেন।

উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করুন

  • বেন্টিঙ্কের অর্থনৈতিক সংস্কার
  • বেন্টিঙ্কের প্রশাসনিক সংস্কার
  • বেন্টিঙ্কের সমাজ সংস্কার 
  • বেন্টিঙ্কের শিক্ষা সংস্কার
  • বেন্টিঙ্কের বৈদেশিক নীতি
  • বেন্টিঙ্কের চরিত্র ও কৃতিত্ব

লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রথম জীবনে মাদ্রাজ কাউন্সিলের গভর্নর নিযুক্ত হয়ে এই উপমহাদেশে আগমন করেন। এ সময়ে ভেলোরে যে সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তা দমনে তিনি ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তাঁকে স্বদেশে ফিরিয়ে নেন। অতঃপর লর্ড আমহার্স্ট স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে গেলে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ পুনরায় বেন্টিঙ্ককে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করে এদেশে পাঠানো হয় এবং তিনি ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বপদে বহাল ছিলেন। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় উদারপন্থী শাসক ছিলেন। তিনি প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন যে শাসিতদের কল্যাণ সাধান। করাই শাসকের প্রধান কর্তব্য। তাই তাঁর শাসনামল উপমহাদেশে সাম্রাজ্য বিস্তার অপেক্ষা বিভিন্ন কল্যাণমুখী কাজের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে।

অর্থনৈতিক সংস্কার

প্রথম ব্রহ্মযুদ্ধের পর কোম্পানির অর্থনৈতিক সমস্যা যখন চরম আকার ধারণ করে ঠিক সেই সময় শাসনভার গ্রহণ করে বেষ্টিয় আর্থিক সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেন। তাই তিনি প্রথম অবস্থাতে ব্যয় সংকোচ ও রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করেন।

বোর্ড অব ডাইরেক্টরের নির্দেশ পেয়ে তিনি সামরিক ও বেসামরিক ব্যায় কমানোর লক্ষ্যে কয়েকটি পন্থা গ্রহণ করেন।

শান্তিকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীর কর্মচারীদের অর্ধেক ভাতা দেয়ার যে নিয়ম চালু ছিল তা তিনি তুলে দেন। তিনি ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মকর্তাদের বেতন কমিয়ে দেন। তিনি কোম্পানির অতিরিক্ত কর্মচারীদেরও ছাঁটাই করেন। এমন কি তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের দক্ষতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে উর্ধতন অফিসারদের নিকট হতে গোপন সংবাদ নেয়ারও ব্যবস্থা চালু করেন।

কোম্পানির রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য লর্ড বেন্টিক মালবে উৎপন্ন আফিমের উপর কর ধার্য করেন। যেসব জমি অবৈধভাবে নিষ্কর বলে দেখান হয়েছিল, সেগুলোর উপর তিনি কর বসান। মাদ্রাজ ও আমায় রায়তওয়ারী প্রথার প্রবর্তন করে তিনি কোম্পানির আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি সিন্ধুর আমীর ও পাঞ্জাবের রনজিত সিংহের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেন। এ সকল ব্যবস্থা নেয়ার ফলে কোম্পানির যে ঘাটতি ছিল তা পূরণের পর উদ্বৃত্ত হয় এবং কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে।

শাসন সংস্কার

শাসন সংক্রান্ত সংস্কারে হস্তক্ষেপ করে প্রথমেই তিনি বিচার বিভাগের উন্নতি সাধন করেন। বেন্টিঙ্কই সর্বপ্রথমে এদেশীয়দের শাসন ও বিচার সংক্রান্ত উচ্চপদে নিয়োগ করেন। তিনি কর্ণওয়ালিস প্রবর্তিত প্রাদেশিক বিচারালয়গুলো তুলে দিয়ে জেলা কালেক্টরের উপর ফৌজদারী মামলার বিচার করার দায়িত্ব দেন। তিনি কয়েকটি জেলাকে একত্রিত করে একটি বিভাগ গঠন করে প্রতিটি বিভাগে একজন করে কমিশনার নিযুক্ত করেন। ডেপুটি এবং জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পদও সৃষ্টি করা হয়। সদর আমিনের পদেও এদেশীয়দের নিয়োগ করা হয়।

এদেশীয় বিচারক এবং কর্মচারীদের বেতন স্কেল ও পদ মর্যাদা বাড়ানো হয়। প্রশাসনিক সুবিধার্থে তিনি বোর্ড অব রেভিনিউ এর সদর দপ্তর কলকাতা থেকে এলাহাবাদে সরিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি এদেশীয় বিচারালয়গুলোতে মুসলিম আমল থেকে প্রচলিত ফার্সি ভাষার পরিবর্তে দেশীয় ভাষার প্রচলন শুরু করেন। তিনি বাংলায় সর্বপ্রথম ‘জুরী ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তাঁর সময়ে এদেশীয়দের জুরীর সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তাঁর আরও একটি সংস্কার ছিল এদেশের ফৌজদারী আইন বিধির সংকলন। বহুকাল ধরে প্রচরিত মুসলিম আইন ও গভর্নর জেনারেলদের ঘোষিত আইন দ্বারা ফৌজদারী মামলা চালানো হতো। বেন্টিঙ্ক লর্ড মেকলের সহায়তায় আইন কমিশন গঠন করে ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ তৈরি করেন যা ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গাইড বুক হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এভাবে বেন্টিঙ্ক সুশৃঙ্খল ও দক্ষ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

সামাজিক সংস্কার

সমাজ সংস্কারের জন্য বেন্টিঙ্কের নাম এ উপমহাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। সতীদাহ নিবারণ ও ঠগী দমন হলো বেন্টিঙ্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তিনি সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন করেন। বহু প্রাচীনকাল থেকে এদেশের হিন্দু সমাজে ‘সহমরণ’ (মৃত স্বামীর সাথে স্বেচ্ছায় একই চিতায় স্ত্রীর মৃত্যুবরণ করা) এবং ‘অনুসরণ’ (বিদেশে স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবাকে একাকী চিতায় পুড়িয়ে মারা) প্রথার প্রচলন ছিল। এভাবে স্ত্রীগণ সভী হতেন। অনেক সময় সামাজিকতা রক্ষার জন্য মৃত ব্যাক্তির পরিবার পরিজন বিধবাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও জোরপূর্বক চিতায় পুড়িয়ে মারতো।

লর্ড কর্ণওয়ালিস ও তাঁর পরের অনেক গভর্নর জেনারেলই এ অমানবিক প্রথাকে উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এদেশীয় ভাবাদর্শে আঘাত লাগতে পারে বলে তাঁরা ততটা জোর দেন নি। লর্ড বেন্টিঙ্ক কয়েকজন এদেশীয় উদারপন্থী সংস্কারক বিশেষ করে রাজা রামমোহন রায় ও প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমর্থন ও সহায়তা লাভ করেন। সদর নিজামত আদালতের জজদের সমর্থন নিয়ে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে এক আদেশ বলে এই অমানবিক প্রথা রহিত করেন। এছাড়া তৎকালীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী দেবতাকে খুশি করার জন্য নিজের প্রথম সন্তানকে গঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ ও বিবাহ দেয়ার অক্ষমতাহেতু নিজ শিশু কন্যাকে গলাটিপে হত্যা করার নিয়মও বেন্টিঙ্ক চিরতরে বন্ধ করে দেন।

উদ্দীনের কথা বহু আগে থেকে জানা যায়। ঠগীরা ছদ্মবেশে হঠাৎ করে এসে নিরীহ পথিকদের, তীর্থযাত্রীদের ও ভ্রমণকারীদের গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে তাদের সবকিছু লুঠ করে নিয়ে যেতো। এটা ছিল ঠগীদের পেশা। কথিত আছে যে মোগল সম্রাট আকবর এটোয়া জেলাতে প্রায় পাঁচশো ঠগীকে হত্যা করেন। বিদেশি ভ্রমণকারীদের কাছ থেকেও জানা যায় যে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়েও ঠগীদের বেশ উৎপাত ছিল। সম্ভবত ইংরেজ আমলে এদের দৌড়াতা বেড়ে গিয়েছিল। ঠগীরা ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ ডাকাতদল। এ দলে হিন্দু-মুসলিম উভয় গোত্রের লোক ছিল। এরা পুরোহিত, দরবেশ ইত্যাদি ছদ্মবেশে ডাকাতি করতো। হায়দ্রাবাদ থেকে অযোধ্যা, রাজপুতানা ও বুন্দেলখতে ঠগীদের আস্তানা ছিল। তারা সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতো। তাই জনগণের নিরাপত্তার জন্য লর্ড বেন্টিঙ্ক কর্ণেল সীমানের উপর ঠগী দমনের ভার দেন। কর্নেল পীয়ান ঠগীদের ভাষা আয়ত্ব করে এবং ফেরিমিয়া নামে একজন ঠগীর কাছে থেকে উগীদের কৌশল ও গোপন আস্তানাগুলোর খবর জেনে নিয়ে যায় পনেরশ ঠগীকে ধরে ফেলেন এবং তাদের কঠোর শাস্তি দেন (১৮৩০ খ্রি:)।

শিক্ষা সংস্কার

এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। বহু আগে থেকে উপমহাদেশে সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা প্রচলিত ছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার এ্যাট যারা কোম্পানি এদেশীয়নের শিক্ষা বিস্তারের জন্য বৎসরে এক লক্ষ টাকা ব্যয় করতে বাধ্য ছিল। এ অর্থ কেবল সংস্কৃত, ফারসি প্রভৃতি প্রাচ্য ভাষা শিক্ষার জন্য ব্যয় হতো। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে বেন্টিঙ্ক ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষাদান এবং পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারের উদ্যোগ নিলে দুটি মত বা দলের সৃষ্টি হয়।

একদল প্রাচ্য ভাষা (সংস্কৃত ও ফারসি) শিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। অন্যদল, পাশ্চাত্য ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের (ইংরেজি) শিক্ষার পক্ষপাতি ছিলেন। শেষোক্ত দলের সমর্থক ছিলেন গভর্নর জেনারেল পরিষদের আইন বিষয়ক সদস্য লর্ড মেকলে এবং এদেশীয় সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়। লর্ড মেকলে ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে একটি স্মারকলিপি গভর্নর জেনারেল বেন্টিঙ্কের কাছে পেশ করেন। এ বিষয়ে আন্দোলন হলেও বেন্টিভ এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি ইংরেজি শিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করেন এবং ফার্সীর পরিবর্তে ইংরেজিকে সরকারি ভাষারূপে ঘোষণা করেন ঐ বৎসরই (১৮৩৫ খ্রি:) বেন্টিঙ্কের চেষ্টার ফলে পাশ্চাত্য ধারার শিক্ষাদানের জন্য কলকাতায় একটি মেডিক্যাল কলেজ ও বোম্বাইয়ে (বর্তমান মুম্বাই) এলফিনস্টোন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য তিনি ইতিহাসে আজও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন।

অন্যান্য

এছাড়া বেপ্টিছ এদেশের ভেতরে মালামাল চলাচলের উপর শুদ্ধ উঠিয়ে দেন। নদী ও সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলে উৎসাহ দেন। চা ও কফি উৎপাদনের জন্য চা-বাগান স্থাপনে উৎসাহ দেন। তিনি জল সেচ ব্যবস্থার উন্নতির চেষ্টা করেন। এদেশীয় সেনাবাহিনীতে বেত্রাঘাত করে শান্তি প্রদানের যে নিয়ম ছিল তা তিনি বন্ধ করে দেন। উপমহাদেশের কোনো কোনো স্থানে নরবলির যে নিয়ম ছিল তাও তিনি বন্ধ করে দেন। বেন্টিঙ্কের এ সকল সংস্কারের ফলে সমাজজীবন যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত হয়েছিল।

বৈদেশিক নীতি

বৈদেশিক নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে বেস্টিঙ্ক নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে চলার পক্ষপাতি ছিলেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। তাঁর নিরপেক্ষ নীতির সুযোগ নিয়ে বরোদার গাইকোয়াড় ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করে। ভূপাল, গোয়ালিয়র ও জয়পুরে গোলযোগ শুরু হলে বেন্টিঙ্ক এ সকল রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন। কাছাড়ের রাজা উত্তরাধিকারী না রেখে মারা গেলে সে রাজ্যের জনসাধারণের ইচ্ছা অনুযায়ী বেন্টিঙ্ক তা কোম্পানির শাসনে নিয়ে আসেন। কুর্গের (মহাশূরের কাছে) রাজার অত্যাচারে প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে তিনি কুর্গও অধিকার করেন। আসামের জৈন্তিয়া পরগনার জনগণ কয়েকজন ইংরেজকে নরবলি দিতে ধরে নিয়ে যায়। কোম্পানির অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ছেড়ে না দেয়ায় বেন্টিঙ্ক বাধ্য হয়ে জৈন্তিয়া পরগণা নিজ শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। কুশাসন ও অরাজকতার অভিযোগে মহীশূর রাজ্যেও তিনি অস্থায়ীভাবে ইংরেজ শাসন প্রবর্তন করেন। উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে রাশিয়ার অশুভ প্রভাব বন্ধ করার জন্য তিনি পাঞ্জাবের রণজিত সিংহের সাথে চিরস্থায়ী মিত্রতা এবং সিন্ধু প্রদেশের আমীরগণের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ইংরেজ স্বার্থ রক্ষা করেন।

চরিত্র ও কৃতিত্ব

উপমহাদেশে ব্রিটিশ যুগের ইতহাসে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এক গৌরবোজ্জ্বল স্থান অধিকার করে আছেন। সামরিক প্রতিভার অভাব বেস্টিন্ডের চরিত্রে থাকলেও দয়াপ্রবণতা বিচক্ষণতা, আনুগত্য ও জনকল্যাণের ইচ্ছা প্রভৃতি গুণাবলির বিচিত্র সমাবেশ তাঁর চরিত্রে প্রতিফলিত হয়। লর্ড মেকলে বেন্টিঙ্ককে জনহিতৈষী ও জনকল্যাণকামী শাসক বলেছেন। এদেশীয় সমাজের কুসংস্কার দূরীকরণ, এদেশীয় ও ইংরেজ কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ, এদেশীয়দের শিক্ষা-দীক্ষার উন্নতি সাধন প্রভৃতির জন্য লর্ড মেকলে বেন্টিঙ্কের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন যে তিনিই সর্বপ্রথম প্রাচ্য দেশীয় অত্যাচারী শাসনের ছলে ব্রিটিশ স্বাধীনতার স্বাদ এদেশবাসীকে দিয়েছিলেন। একদিকে ইংরেজ স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি যেমন রণজিত সিংহ এবং সিন্ধুর আমীরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, অন্যদিকে তেমনি মহীশূর, কাছাড়, কূর্গ, জৈন্তিয়া রাজ্য দখল করতে কুণ্ঠিত হন নি। তবুও সবদিক থেকে বিচার করলে উপমহাদেশে ব্রিটিশ যুগের ইতিহাসে বেন্টিঙ্কের নাম কৃতজ্ঞতা সহকারে স্মরণ করতে হবে।

সারাংশ

১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে গার্ড বেন্টিঙ্ক এদেশে গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন। প্রথম জীবনে তিনি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ওয়াটারলুর যুদ্ধ বিজেতা ডিউক অফ ওয়েলিংটনের সেনা বাহিনীতে ছিলেন। তিনি যখন এদেশে গভর্নর জেনারেল হিসেবে আসেন তখন তাঁর এদেশে সামরিক নৈপুণ্য দেখানোর কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ সে সময়টা ছিল সংস্কারের যুগ। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বেন্টিঙ্কই প্রথম গভর্নর জেনারেল যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে এদেশে প্রজাদের কল্যাণ সাধনই শাসকের প্রধান কর্তব্য। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার অবাধ প্রসারের পথ উন্মুক্ত হয়। বেন্টিঙ্কের সমাজ সংস্কার ধর্মীয় গোঁড়ামী ও নিপীড়নের হাত থেকে এদশের জনগণকে রক্ষা করেছিল। তাঁর শিক্ষা সংস্কার পরবর্তীকালে এদেশীয়দের মনোজগতে এক বিরাট আলোড়ন ও পরিবর্তন নিয়ে আসে যা এদেশের সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে তুলেছিল। তাই আজও লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক উপমাহদেশের ব্রিটিশ যুগের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

Leave a Reply