You are currently viewing মিশরীয় সভ্যতা | Egyptian Civilization | bnginfo.com
History of Ancient Egyptian Civilization

মিশরীয় সভ্যতা | Egyptian Civilization | bnginfo.com

DESCRIPTION

History of Ancient Egyptian Civilization | প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা শুরু হয় প্রায় বর্তমান হতে ১০,০০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিন যুগের শেষভাগের পরে।

তৎক্ষালীন সময়ে উত্তর আফ্রিকার শুষ্ক জলবায়ু আরও উষ্ণ ও শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষেরা

নীল নদ উপত্যকায় ঘন জনবসতি গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। 

৫৫০০ খ্রিষ্টপূর্বব্দের মধ্যেই নীলনদ উপত্যকার ছোট ছোট গোত্র বিকশিত হয়ে উন্নত সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

এই সকল আদি সংস্কৃতির মাঝে উচ্চ মিশরে সবচেয়ে বড় গোত্র ছিল “বাদারি”। বাদারিদের পরে আসে আমরতিয়, “নাকাদা” নাকাদা

সংস্কৃতির শেষের দিকে চিহ্ণলিপি ব্যবহার শুরু করে যা অবশেষে প্রাচীন মিশরীয় ভাষার লিখনপদ্ধতি হায়ারোগ্লিফের জন্ম দেয়।

খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মিশরীয় পুরোহিত মানেথো তার সময় পর্যন্ত মিশরের ফারাওদের ত্রিশটি রাজবংশে ভাগ করেন যা এখনো স্বীকৃত।

তিনি তার ইতিহাস সূচনা করেন মেনি নামের একজন রাজাকে দিয়ে।

*মিশরীয় সভ্যতা অনেক হাজার বছরের ইতিহাস | এই সভ্যতাকে ভালো বোঝার জন্যে ঐতিহাসিক গণ ৫টি যুগে ভাগ করেছে , 

  • ১,প্রাচীন মিশর (খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০-৩৩২ অব্দ)
  • ২,ধ্রুপদি যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২-৬২৯)
  • ৩,মধ্যযুগ (৬৪১-১৫১৭)
  • ৪,প্রাক-আধুনিক (১৫১৭-১৯১৪)
  • ৫,আধুনিক মিশর (১৮৮২-১৯৫৩-বর্তমান)*

এই সভ্যতাকে আরো ভালো যানা ও বোঝার জন্যে সভ্যতার বিশেষ কিছু বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। 

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাসকে জানার ও বোঝার জন্যে টিম বিভিন্ন পুস্তক, সংবাদ পত্র এবং ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়েছে ।

আমাদের উদ্দেশ্যে – স্কুল, কলেজ, উনিভার্সটির বিভিন্ন পরীক্ষার পড়ুয়াদের সহযোগিতা করা । আলোচ্য বিষয়ে লিখন,চিত্র যাকিছু উল্লেখ করা হয়েছে শিক্ষা প্রশিক্ষণের জন্যে। 

ধন্যবাদ। 

LEARNING OUTCOMES | উল্লেখিত বিষয় গুলি হলো

মিশরীয় সভ্যতা Egyptian Civilization

  • আদি মিশরীয় সভ্যতার উৎপত্তি বা শুরু :-
  • আদি মিশরীয় সভ্যতা। (সংক্ষিপ্ত) :-
  • প্রাচীন মিশরের রাজনৈতিক ইতিহাস :-
  • রাজনৈতিক অবস্থা :-
  • প্রাচীন মিশরের শাসন ব্যবস্থা :-
  • রাষ্ট্র ও সমাজ :-
  • নীল নদ :-

মিশরীয় সভ্যতার অবদান Contribution of Egyptian Civilization

  • কৃষি ও ব্যবসায় বাণিজ্য :-
  • লিখন পদ্ধতি :-
  • কাগজ তৈরি :-
  • অন্যান্য শিল্প :-
  • সাহিত্য :-
  • বিজ্ঞানশাস্ত্র :-
  • পিরামিড :-

প্রাচীন মিশরীয় জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতির পরিচয় Ancient Egyptian life journey and culture identity

  • ধর্ম বিশ্বাস:-
  • মিশরীয় সভ্যতার পতন :-
  • সারসংক্ষেপ :-

আদি মিশরীয় সভ্যতার উৎপত্তি বা শুরু :-

আদি মিশরীয় সভ্যতার উৎপত্তি বা শুরু সুপ্রাচীনকাল থেকেই নীল নদ মিশরের জীবনযাত্রায় মূল ভূমিকা পালন করছে।

আধুনিক শিকারি-সংগ্রাহক মানুষেরা মধ্য “প্লেইস্টোসিন যুগ” 

***প্রায় ২৬ লক্ষ বছর আগের এক ভূতাত্ত্বিক, আবহাওয়া নির্ভর যুগ। প্লাইস্টোসিন যুগ প্রায় ২৫,৮০,০০০ বছর আগে

শুরু হয় এবং ১১,৭০০ বছর আগে শেষ হয়।***

 যুগের শেষ ভাগে অর্থাৎ বারো লক্ষ বছর আগে এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিল। পরবর্তী “প্যালিওলিথিক যুগ”

***প্যালিওলিথিক যুগ বলতে সেই সময়কালের ইতিহাসকে বোঝায় যখন আদিম মানুষ একদম প্রাথমিক পাথরের যন্ত্রপাতি বানাতে শুরু করেছিল।

২.৬ মিলিয়ন বছর আগে হোমিনিনিন যেমন অস্ত্রালোপিথেচিনদের মাঝে পাথরের যন্ত্রপাতি প্রচলনের সময় থেকে

বর্তমান হতে ১০,০০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিন যুগের শেষভাগ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।***

যুগ থেকেই উত্তর আফ্রিকার শুষ্ক জলবায়ু আরও উষ্ণ ও শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষেরা নীল নদ উপত্যকায় ঘন জনবসতি

গড়ে তুলতে বাধ্য হয়।মিশরের প্রাচীন সম্রাজ কালে জলবায়ু বর্তমানের থেকে কম শুস্ক ছিল। নীল অঞ্চল সমৃদ্ধ ছিল উদ্ভিদ এবং প্রাণীতে

তৎকালীন  বিপুল পরিমাণে  জলজ পাখিও এখানে পাওয়া যেত। এই পরিবেশে শিকারী ও প্রাণীদের জীবনযাপন ছিল সাধারণ এবং

অনেক প্রাণীকে এই সময়ে পোষ মানানো হয়েছে। মিশরের বড় অংশ ছিল ঘাস-বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের মিশ্রণে

অসংখ্য বৃক্ষের অবস্থান এবং এসকল এলাকায় পশুপালের বিচরণ ছিল। 

৫৫০০ খ্রিষ্টপূর্বব্দের মধ্যেই নীলনদ উপত্যকার ছোট ছোট গোত্র বিকশিত হয়ে উন্নত সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

তাদের মাঝে পশুপালন এবং কৃষিকাজে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা যায়। এই সকল আদি সংস্কৃতির মাঝে উচ্চ মিশরে সবচেয়ে বড় গোত্র ছিল “বাদারি”।

সম্ভবত লিবিয় মরুভূমিতে বাদারিদের উৎপত্তি। উন্নত “মৃন্ময় পাত্রের” সামগ্রী, পাথরের হাতিয়ার এবং তামা ব্যবহারের জন্য তারা সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত ছিল।

বাদারিদের পরে আসে আমরতিয়। “নাকাদা”

***নাকাদা২ সংস্কৃতি বা জেরজাহ্ বলতে নীল নদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত প্রাগৈতিহাসিক মিশরীয় সমাধিক্ষেত্র জেরজাহ্-এর

(অপর নাম জিরজা বা জিরজাহ্) একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্তরকে বোঝায় । মিশর রাষ্ট্রের নিকটবর্তী শহর এল-জিরজেহ্ এর নামানুসারে এই সমাধিনগরীটির নামকরণ করা হয়েছে। ফাইউমের মরূদ্যানের কয়েক মাইল পূর্বে এই প্রত্নস্থলটি অবস্থিত।

এই প্রাগৈতিহাসিক নাগাদা সংস্কৃতির তিনটি স্তর, দ্বিতীয় স্তর বলে নাকাদা ২ নামেও পরিচিত। এই সংস্কৃতির পূর্ববর্তী স্তরটি আমরাতীয় সংস্কৃতি (“নাকাদা ১”) এবং পরবর্তী স্তরটি নাকাদা ৩ (“প্রত্ন-রাজবংশীয়” বা “সেমাইনীয় সংস্কৃতি”) নামে পরিচিত।***

নাকাদা-যারা আরো কিছু প্রযুক্তির উন্নতি করে।(নাকাদা ১)- এর সময় থেকেই মিশরীয়রা ব্লেড তৈরির জন্যে

ইথিওপিয়া থেকে *অবসিডিয়ান^(একধরণের পাথর বা খনিজ দ্রব) আমদানি করতে শুরু করে। 

(“নাকাদা ২”) বাণিজ্যিক ও প্রচারের সাথে মাত্র এক বছরের মধ্যে কিছু কৃষি সম্প্রদায় এক শক্তিশালী সভ্যতায় পরিণত হয়। 

(“নাকাদা ৩”) এর নেতারা শক্তিশালী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তাদের প্রভাব নীলনদ বরাবর উত্তর মিশরে বিস্তার করে।

দক্ষিণে নুবিয়া, পশ্চিমে লিবিয় মরূদ্যানগুলি এবং পূর্বে ভূমধ্যসাগর। বিস্তার ও প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করত।

রাজকীয় নুবিয় সমাধির বিভিন্ন হস্তশিল্পের মিশরীয় রাজতন্ত্রের বিভিন্ন চিহ্ণ যেমন সাদা মুকুট এবং শকুন এর সবচেয়ে প্রাচীণ নিদর্শন পাওয়া যায়।

নাকাদা সংস্কৃতি বিভিন্ন ধরনের নিজকাজে ব্যবহার সমগ্রী তৈরি করত যেমন চিরুনি, ছোট ভাস্কর্য, ছবি অঙ্কিত মৃৎপাত্র,

উচ্চ মানের নকশাকৃত পাথরের পাত্র, স্বর্ণ, ল্যাপিস, আইভোরির অলংকার। তারা একধরনের সিরামিক গ্লেজ তৈরি করে যা ফাইয়েন্স নামে পরিচিত যা পাত্র, ছোট মূর্তি, এমুলেট অলংকৃত করতে এমনকি রোমান যুগেও ব্যবহৃত হত।  নাকাদা সংস্কৃতির শেষের দিকে চিহ্ণলিপি ব্যবহার শুরু করে যা অবশেষে প্রাচীন মিশরীয় ভাষার লিখনপদ্ধতি হায়ারোগ্লিফের জন্ম দেয়।খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মিশরীয় পুরোহিত মানেথো তার সময় পর্যন্ত মিশরের ফারাওদের ত্রিশটি রাজবংশে ভাগ করেন যা এখনো স্বীকৃত।তিনি তার ইতিহাস সূচনা করেন মেনি নামের একজন রাজাকে দিয়ে। 

***ফারাও হলো গ্রিক-রোমান কর্তৃক বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের রাজাদের প্রচলিত উপাধি।***

প্রথম ফারাওরা মেমফিসে রাজধানী স্থাপন করে নিম্ন মিশরের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করেন আদি রাজবংশীয় যুগে।

এর ফলে তাদের পক্ষে শ্রমশক্তি এবং কৃষিশক্তির এবং একই সাথে লেভান্টের বাণিজ্যপথগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। ফারাওদের তৈরী রাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যা ভূমি, শ্রম এবং সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার টিকে থাকা এবং বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

আদি মিশরীয় সভ্যতা। (সংক্ষিপ্ত) :-

মিশরে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্রীস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে।নীল নদকে কেন্দ্র করে মিশরের এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে

গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস মিশরকে বলেছেন “নীল নদের দান”। ৫০০০-৩২০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়ের মিশরকে প্রাক-রাজবংশীয় যুগ বলা হয়। এ সময় মিশর কতগুলো ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে বলা হয় নোম।৩২০০ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে “মেনেস” নামের এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি নগর রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। দক্ষিণ মিশরের “মেস্ফিস” হয় এর রাজধানী। এভাবে মিশরে রাজবংশের সূচনা হয়।

প্রাচীন মিশরের নতুন রাজ্যের সময় ফারাওরা ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা ছিল। “বড় বাড়ি” বলতে তখন রাজাদের বাড়িকে

বোঝানো হত কিন্তু মিশরীয় ইতিহাসের গতিপথের সাথে সাথে তা হারাতে বসে ছিল এমনকি রাজা, nswt এর জন্য ঐতিহ্যবাহী

মিশরীয় শব্দের পরস্পরিক পরিবর্তনে মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও মিশরের শাসকরা সাধারণত পুরুষ ছিল, ফারাও শব্দটা

বিরলভাবে মহিলা শাসকদের হ্মেত্রেও ব্যবহার করা হত। ফারাওরা বিশ্বাস করত যে তাদের মরণের পর তাদের আত্মা দেবতা হরুসের সাথে মিলে যাবে।

এরা নিজেদেরকে সূর্যের বংশধর মনে করত। নিজেদেরকে দেবতা বলে মনে করায় তারা বংশের বাইরে কাউকে বিবাহ করত না।

ফলে ভাইবোনেদের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হত। ফারাওয়ের মৃত্যুর পরও জীবন আছে বলে বিশ্বাস করত। তাই তাদের মৃত্যুর পর পিরামিড বানিয়ে তার নিচে সমাধিকক্ষে এদের দৈনন্দিন জীবনের ভোগ-বাসনার সমস্ত সরঞ্জাম রক্ষিত করত। মৃতদেহকে পচন থেকে বাঁচাবার জন্য তারা দেহকে মমি বানিয়ে রাখত এবং স্বর্ণালঙ্কারে মুড়ে সমাধিকক্ষের শবাধারে রাখা হত। 

প্রাচীন মিশরের রাজনৈতিক ইতিহাস :-

৫০০০ থেকে ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে মিশরের ইতিহাসে প্রাক-রাজবংশীয় যুগ বলা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অর্থে রাজা

মেনেস নামে এক শক্তিশালী সামন্ত উত্তর ও দক্ষিণ মিশরকে একত্রিত করে একটি বড় রাজ্যে পরিণত করেন। নেমফিশ শহরে মেনেস তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এই রাজধানী থিবস শহরে স্থানান্তরিত হয়। রাজা মেনেসের পর থেকে তিন হাজার বছর পর্যন্ত প্রাচীন মিশরে ৩১টি রাজবংশের ইতহিাস পাওয়া যায়। মিশরের প্রাচীন ইতিহাসকে ঐতিহাসিকগণ কয়েকটি পর্বে বিভক্ত করেন। প্রথমতঃ প্রাক রাজবংশী (খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ ৩২), প্রাচীন রাজত্বের যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০-২৩০০), মধ্য রাজত্বের যুগ (২৩০০-১৭৮৮), বৈদেশিক হিসাদের  আক্রমণ (১৭৫০-১৫৮০), নতুন রাজত্বের যুগ (১৫০০-১০৯)।

রাজনৈতিক অবস্থা :-

খ্রিস্টের জন্মের চার হাজার বছর পূর্বে মিশরীয়গণ একটি সুগঠিত ও সুসংবদ্ধ জাতি হিসেবে মিশর রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে। প্রাচীনকালে

মিশরে নোম বা নগররাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এ নোমগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে দু’টি বৃহৎ বৃহৎ রাজ্যের সৃষ্টি করে। এদের একটি উত্তর মিশর এবং অপরটি দক্ষিণ মিশর নামে অভিহিত হয়। খ্রিস্টপূর্বে ৩,৫০০ অব্দে এ দু’টি অংশ একত্রিত হয়ে অথও মিশর রাজ্য গঠন করে। দক্ষিণ মিশরের রাজা মেনেসের অধীনে দু’টি রাজ্য ঐক্যবদ্ধ হয়। এরপর প্রায় তিন হাজার বছর পর্যন্ত প্রাচীন মিশরে ৩১টি রাজবংশ রাজত্ব করে। মিশরের রাজার উপাধি ছিল ‘ফরাও’।

প্রাচীন মিশরের শাসন ব্যবস্থা :- 

প্রাক-রাজবংশীয় যুগে নীল নদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হয়। এ যুগে মিশরীয়রা কৃষি কাজে সেচব্যবস্থার বিভিন্ন

কৌশল আবিষ্কার করে। এ ছাড়া তারা লিখন পদ্ধতি, উন্নতমানের কাপড়, সৌরপঞ্জিকা প্রস্তুত করে । ৩২০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাচীন রাজত্বকাল। রাজা মেনেস উত্তর ও দক্ষিণ মিশরকে এক করে একটি বড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন মিশরের সম্রাটদের ফারাও বলা হতো। ফারাও শব্দের অর্থ ‘বড়বাড়ি’। বিশাল প্রাসাদে বসবাসকারী ফারাওদের মনে করা হতো ঈশ্বরের সন্তান। তাঁরা একই সঙ্গে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সম্রাটের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োজিত থাকতেন একজন উজির বা প্রধানমন্ত্রী। মিশরের ‘ফারাও’ বা সম্রাটের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন রাজা মেনেস, প্রথমত আহমোজ, রাজা তুথমোস, সম্রাট ইখনাটন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রামেসিস। পরাক্রমশালী তৃতীয় ব্যামেসিসের মৃত্যুর পর ফারাওদের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।

রাষ্ট্র ও সমাজ :-

প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশর কতগুলো ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে ‘নোম’ বলা হতো। মিশরের প্রথ রাজা বা ফারাও-এর

(মেনেস বা নামার) অধিনে ঐক্যবদ্ধ মিশরের রাজধানী ছিল দক্ষিণ মিশরের মেফিল। মিশরীয় *পের-ও’ শব্দ থেকে ফারাও শব্দের জন্ম। ফারওয়া ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। তারা নিজেদেরকে সূর্য দেবতার বংশধর মনে করতেন। ফারাও পদটি ছিল বংশানুক্রমিক। অর্থাৎ ফারাওয়ের ছেলে হতো উত্তরাধিকার সূত্রে ফারাও। পেশার উপর ভিত্তি করে মিশরের সমাজের মানুষকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন: রাজ পরিবার, পুরোহিত, অভিজাত, লিপিকার, ব্যবসায়ী, শিল্পী, কৃষক ও ভূমিদাস।

মিশরের অর্থনীতি মূলত ছিল বৃধি নির্ভর রে তীরে গড়ে তোলা সভ্যতার মানুষ অর্থাৎ মিশরীয়রার সময় বাঁধ তৈরি করে ফসল রক্ষা করত।

আবার শুঙ্ক মৌসমে ফসলের ক্ষেতে পানি দেয়ার জন্য যান কেটে গড়ে তুলেছিল সেচ ব্যবস্থা। মিশরের প্রথম সরকারি ব্যবস্থার চাষাবাদ চালু হয়। দুধিনির্ভর মিশরের উৎপাদিত ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গম, ঘৰ, তুলা, পেঁয়াজ, পিচ ইত্যাদি। ব্যবসায়-বাণিজ্যেও মিশর ছিল অগ্রগামী। মিশরে উৎপাদিত গম, লিনেন কাপড় ও মাটির পাত্র ফিট দ্বীপ, ফিনিশিয়া, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় রপ্তানি হতো। বিভিন্ন দেশ থেকে মিশরীয়রা স্বর্ণ, রৌপ্য, হাতির দাঁত, কাঠ ইত্যাদি আমদানি করতো।

নীল নদ :-

নীল এটি বিশ্বের ও আফ্রিকা মহাদেশের একটি দীর্ঘতম নদ। মিশরের সভ্যতা প্রাচীন কাল থেকেই নীলের উপর নির্ভরশীল।

প্রাচীন মিশরের প্রায় সমস্ত সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও এর তীরেই অবস্থিত। নীলের উত্তরাংশ সুদানে শুরু হয়ে মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, প্রায় পুরোটাই মরুভূমির মধ্য দিয়ে। নীল নদের দুইটি উপনদ রয়েছে, শ্বেত নীল নদ ও নীলাভ নীল নদ। বিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে নীলনদ ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। 

দেশসমূহ = ইথিওপিয়া, সুদান, মিশর, উগান্ডা, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, তানজানিয়া, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান, ইরিত্রিয়া

নগরসমূহ = জিনজা, জুবা, খার্তুম, কায়রো

দৈর্ঘ্য = ৬,৮৫৩ কিলোমিটার (৪,২৫৮ মাইল)

প্রস্থ = ২.৮ কিলোমিটার (২ মাইল)

অববাহিকা প্রবাহ = ৩৪,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৩,১২,৭৪৭ বর্গমাইল) 

শ্বেত নীল :- উচ্চতা – ২,৭০০ মিটার (৮,৮৫৮ ফিট) স্থানাঙ্ক – ০২°১৬′৫৬″ দক্ষিণ ০২৯°১৯′৫৩″ পূর্ব

শ্বেত নীল নদ আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়েছে এবং দীর্ঘ বিস্তার করেছে। এর সর্বদক্ষিণের উৎস হল দক্ষিণ

রুয়ান্ডাতে এবং এটি এখান থেকে উত্তর দিকে তাঞ্জানিয়া, লেক ভিক্টোরিয়া, উগান্ডা, ও দক্ষিণ সুদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

নীলাভ নীল :- উচ্চতা – ৪৫ মিটার (১৪৮ ফিট), স্থানাঙ্ক – ১২°০২′০৯″ উত্তর ০৩৭°১৫′৫৩″ পূর্ব

নীলাভ নীল নদ ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সুদানে প্রবেশ করেছে। দুইটি উপনদী সুদানের

রাজধানী খার্তুমের নিকটে মিলিত হয়েছে। মিশরের জনসংখ্যার অধিকাংশ এবং বেশিরভাগ শহরের অবস্থান আসওয়ানের উত্তরে নীলনদের উপত্যকায়।

কৃষি ও ব্যবসায় বাণিজ্য :-

মিশরীয়গণ কৃষি ও ব্যবসায়-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করত। তাদের অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। নীলনদে বাঁধের ব্যবস্থা

করে তারা বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ করত। তাদের উৎপাদিত শস্যের মধ্যে গম, যব, জোয়ার, তরিতরকারি, তুলা, আঙ্গুর, শন ও অন্যান্য ফল উল্লেখযোগ্য ছিল। কৃষিকার্যের ন্যায় ব্যবসায়-বাণিজ্যেও মিশর প্রকৃত উন্নতি সাধন করে। ফারাওদের জাহাজগুলো নীলনদ দিয়ে আরও দক্ষিণে আফ্রিকার মূল ভূ-খণ্ড হতে মেহগনি কাঠ ও হাতির দাঁত সংগ্রহ করত। বাণিজ্য জাহাজ চলাচলের জন্য মিশরীয় বদ্বীপের পূর্বাঞ্চলের সাথে লোহিত সাগরের সংযোগ করে একটি খাল খনন করা হয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন নীলনদ দিয়েই হত। মেসোপটেমিয়া ও সিরিয়ার সাথে স্থলপথে বাণিজ্য চলত। মিশরের প্রধান রপ্তানি ছিল গম ও স্বর্ণালঙ্কার এবং প্রধান আমদানি দ্রব্য ছিল ধাতুনির্মিত অস্ত্রশস্ত্র, উটপাখির পালক, মসলা, মুগ্ধ বস্ত্র ইত্যাদি।

লিখন পদ্ধতি :-

প্রাচীন মিশরে ভাস্কর্য ও চিত্রাঙ্কন শিল্পও বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। পিরামিড ও মন্দিরের অভ্যন্তরে অলঙ্করণের প্রয়োজনে এ শিল্পরীতির প্রবর্তন হয়।

সম্রাটদের সুবিশাল মূর্তি মিশরীয় ভাস্কর্যের নিদর্শন। এসব মূর্তির কোন কোনটি ৯০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ছিল। ভাস্কর্য শিল্পের আর একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো স্ফিংস। সিংহের দেহে ফারাওয়ের মুখ বসিয়ে স্ফিংস নির্মিত হত। ফারাও যে সিংহের মত শক্তিশালী ও সাহসী, স্ফিংস-এর মধ্য দিয়ে এটাই পরিস্ফুট করার চেষ্টা করা হত। মিশরীয় চিত্র শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলোর মধ্যে “জলাভূমির ঘুমন্ত ষাঁড়,” কূল ও ফল শোভিত গাছ”, “পলায়নরত হরিণ” প্রভৃতি রঙিন চিত্র তখনকার মন্দিরের দেয়ালে শোভা বৃদ্ধি করেছিল।

মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্য মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতি বিশ্ব-সভ্যতার ইতিহাসে এক অক্ষয় অবদান। খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার বছর

পূর্বে মিশরীয়রা হায়ারোগ্লিফিক (Hieroglyphics) নামে এক ধরনের লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এর পূর্বে ছবির সাহায্যে এ লেখার কাজ চলত এবং ছবিগুলো এমনভাবে করা হত যাতে মনের ভাব প্রকাশ পায়। মিশরে প্রথমে যে লিখন পদ্ধতি বা হায়ারোগ্লিফিক উদ্ভাবিত হয়, তা সাধারণত ডানদিক হতে লেখা হত। তবে বামদিক হতে লেখার নিদর্শন কিছু কিছু পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন মিশরীয় ভাষার সাথে ঐ লিপির বা হায়ারোগ্লিফিক-এর হুবহু মিল ছিল।

প্রাচীন মিশরে আরও দু’টি লিপির প্রবর্তন হয়েছিল বলে জানা গেছে। এ লিপিম্বয়ের একটি হেরাটিক লিপি এবং অপরটি ডেমোটিক লিপি

নামে অভিহিত হয়। এরা অবশ্য হায়ারোগ্লিফিক লিপিরই অপভ্রংশ। লিখনের ক্ষেত্রে ডেমোটিক লিপি বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু হেরাটিক লিপির ব্যবহার ক্রমশ লোপ পায়। ডেমোটিক লিপি মিশরে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী হতে পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। মিশরের লিখন পদ্ধতি প্রসঙ্গে রসেটা (Rosetta) ফলকের উল্লেখ অবশ্যই করা দরকার। মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারের কাজে ফলকটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

কাগজ তৈরি :-

প্রাচীন মিশরীয়গণ তাদের লেখার কাজে ব্যবহার করার জন্য এক প্রকার কাগজ তৈরি করতে জানত। প্যাপিরাস নামক এক প্রকার ঘাস দ্বারা

তারা কাগজ প্রস্তুত করত। তাদের তৈরিকৃত কাগজের নিদর্শন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। কাগজ তৈরি করেই তারা ক্ষান্ত ছিল না, প্রাচীন মিশরবাসী লেখার জন্য দোয়াত এবং কলমও তৈরি করত।

অন্যান্য সম্পদ :-

নির্মাণকাজে ব্যবহার্য পাথর, অলঙ্কারের পাথর, তামা, সীসা এবং দামি পাথরে মিশর সমৃদ্ধ। মিশরের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য তাদের ইমারত,

ভাস্কর্য, হাতিয়ার এবং অলঙ্কার তৈরিতে সহায়ক হয়। ওয়াদি নাত্রুনের লবণ মমি তৈরিতে ব্যবহৃত হত, সেখান থেকে জিপসামও পাওয়া যেত যা প্লাস্টার করার কাজে ব্যবহৃত হত। দূরবর্তী পূর্ব মরুভূমি এবং সিনাইয়ের বসবাসের অযোগ্য ওয়াদিতে খনিজ পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। এসকল এলাকা থেকে খনিজ উত্তোলনে প্রয়োজন হত রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশাল অভিযান। নুবিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল সোনার খনি এবং প্রথম মানচিত্রের একটি ছিল এখানকার একটি সোনার খনির। ওয়াদি হাম্মামাত ছিল গ্রানাইট, সোনা গ্রেওয়াকের সুপরিচিত উৎস। চকমকি পাথর ছিল প্রথম সংগৃহীত খনিজ পদার্থ যা হাতিয়ার তৈরীতে ব্যবহৃত হত, চকমকি পাথরের তৈরি কুঠার হল নীলনদ উপত্যকায় মানববসতির প্রথম নিদর্শন। চকমকি পাথরের খণ্ডে আঘাত করে ধারালো ক্ষুর এবং তীরের ফলা তৈরি করা হত, এমনকি তামার ব্যবহার শুরু হওয়ার পরেও এর চল ছিল। খনিজ পদার্থ যেমন গন্ধক রূপচর্চার কাজে ব্যবহারে মিশরীয়রাই ছিল প্রথম।

হাতিয়ার তৈরির কাজে মিশরীয়দের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ধাতু ছিল তামা, মালাকাইট আকরিক যা সিনাইয়ে পাওয়া যেত তা থেকে তামা

উৎপাদন করা হত। পাললিক শিলার মধ্য হতে সোনার খণ্ড সংগ্রহ করা হত। আবার কোয়ার্টজাইট গুঁড়া করেও তার মধ্য থেকে সোনা বের করা হত।

শেষ যুগে উত্তর মিশরে পাওয়া লোহার খনি থেকে লোহা উৎপাদন করা হত। নির্মাণকাজে ব্যবহার্য উচ্চমানের পাথর মিশরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত; নীল উপত্যকা থেকে চুনাপাথর, আসওয়ান থেকে গ্রানাইট, পূর্ব মরুভূমির মরুদ্যানগুলো থেকে থেকে ব্যাসাল্ট ও বেলেপাথর সংগ্রহ করা হত।

অলংকারের পাথর যেমন এলাব্যাস্টার, গ্রেওয়াক এবং কারণেলিয়ান পূর্ব মরুভূমিতে প্রচুর পাওয়া যেত এবং প্রথম রাজবংশের আগে থেকেই সংগ্রহ করা হত। টলেমিয় এবং রোমান যুগে ওয়াদি সিকাইত থেকে চুনী এবং ওয়াদি এল-হুদি থেকে পান্না উত্তোলন করা হত।

প্রাচীন মিশরের সাহিত্য চর্চা ছিল মূলত ধর্মভিত্তিক। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ‘মেমফিস ড্রামা’ ও ‘রয়াল সান হিম’ প্রভৃতিতে।

মিশরীয় সাহিত্যের লেখার মধ্যে যা প্রকা হয়েছে তাতে মিশরীয় সভ্যতার ক্রমবিকাশের পরিচয় পাওয়া যায়। এসব লেখার প্রদান বিষয়বস্তু ছিল

মিশরীয় জীবনধারার প্রেম, ভালবাসা, মদ, নারী এবং সঙ্গীত।

প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য :-

প্রাচীন মিশরীয় ভাষা উত্তর অফ্রোএশিয়াটিক ভাষাপরিবারের অন্তর্ভুক্ত, বারবার এবং সেমিটিক ভাষাগুলির নিকট সম্পর্কিত।

সুমেরিয় ভাষার পর এই ভাষার ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ; ৩২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ হতে মধ্যযুগ পর্যন্ত এ ভাষা লিখা হত, কথ্য হিসেবে তার চেয়ে দীর্ঘসময় এ ভাষা টিকে ছিল। প্রাচীন মিশরীয় ভাষাকে কয়েকটি পর্যায়কালে ভাগ করা যায়: প্রাচীন, মধ্য (ধ্রূপদী মিশরীয়), পরবর্তী, ডেমোটিক ও কপটিক। কপটিকের পূর্বে মিশরীয় লেখনে উপভাষাগত পার্থক্য দেখা যায় না, তবে ধারণা করা হয় প্রথমে মেমফিস ও পরে থেবেসের উপভাষাই মান ভাষা ছিল।

বিজ্ঞানশাস্ত্র :-

দুই শাখায় তাদের অসামান্য অবদান প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য দিক। অবশ্য তারা এ ক্ষেত্রে মেসোপটেমীয়দের সমকক্ষ ছিল না।

তারা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগের ন্যায় বিষয়গুলোতে অভ্যস্ত ছিল। বীজগণিত অপেক্ষা জ্যামিতিক বিষয়ে তাদের জ্ঞান বেশি ছিল।পিরামিডের নির্মাণকৌশলে তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। চিকিৎসাবিদ্যায়ও তাদের জ্ঞান ছিল। তারা চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে গণনা কাজ করত। এভাবে সৌর পঞ্জিকা (Calendar) তৈরি করে তারা তাদের কৃষি-পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। তারা জোয়ার-ভাটা ও বন্যার কারণ এবং সময় সম্বন্ধে হিসাব রাখত। এরূপ সমগ্র বিশ্ব যখন অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন সভ্যতার ক্ষেত্রে মিশরীয়দের অবদান সত্যই বিস্ময়কর।

পিরামিড :-

মিশোরের সবচেয়ে বড়, পুরোনো এবং আকর্ষনীয় পিরামিড হচ্ছে গিজা’র পিরামিড যা খুফু’র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত।

এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। চার হাজারের বছরের পুরানো এক সমাধিতে অঙ্কিত এক চিত্রে দেখা যায় এক বিশাল স্তম্ভকে স্লেজে করে সরানো হচ্ছে; অনেক মানুষ রশি দিয়ে সেই স্লেজ টেনে নিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে একজন পাত্র থেকে জল ঢালছে বালির উপরে। এতে ঘর্ষণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আড়াই টন ওজনের এক একটা ব্লক।

 ধর্ম বিশ্বাস:- 

প্রাচীন মিশরীয় সমাজে ধর্মের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব ছিল অভ্যন্ত। রজা বা ফারাও ছিল প্রধান ধর্মীয় নেতা।

তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল আমন রে (Amnion Re)।

নীলদের দেবতা নামে খ্যাত ছিল এলিরিস (Oxitis)। মিশরীয়রা আর অবিনশ্বরতা ও পুনর্জনে বিশ্বাসী ছিল।

তাদের ধারণা ছিল দেহ ছাড়া আমঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভে বঞ্চিত হবে।

এজনাই তারা ফারাও বা সম্রান্ত ব্যক্তিদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে নাম প্রস্তুত করত।

মমিকে যুগ পরস্পরায় অক্ষত রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় সমাধি অ পিরামিত তবে ধর্ম বিশ্বাসে ন্যায় অন্যায়ের বা পাপ-পুণ্যের বিশ্বাস ও জড়িত ছিল। মিশরীয় সমাজে পুরোহিতদের ব্যাপক। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৭৫ অঙ্গে রাজা চতুর্থ আমেনহোটেপের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।

তিনি প্রধান পুরোহিতদের মন্দির থেকে বহিস্কার করে একক দেবতা এটন (Alun) (বা একেশ্বর) এর পূজা। করার নির্দেশ দেন।

প্রাচীন মিশরীয় দেব দেবর  সংখ্যা গণনা করা সত্যই কঠিন । বিভিন্ন মিশরীয় প্রাচীন গ্রন্থ এবং পুরাণে এমন অনেক দেবদেবীর নাম পাওয়া যায়,  যাঁদের নামও সঠিকভাবে পাওয়া যায় না।

মিশরতত্ত্ববিদ জেমস পি অ্যালেন অনুমান করেন যে মিশরীয় গ্রন্থে প্রায় ১৪০০ টিরও বেশি দেবতাদের উল্লেখ করা হয়েছে ;

যদিও তার সহকর্মী ক্রিশ্চিয়ান লেইৎস বলেছেন যে “হাজার হাজার” দেবতা রয়েছে মিশরীয় পুরাণ এবং প্রাচীন গ্রন্থাবলীতে।

মিশরীয় ভাষায় দেবতাদের নামে ‘nṯr’ (দেব) এবং দেবীদের নামে ‘nṯrt’ (দেবী) যোগ করা হয়।

পণ্ডিতরা এই শব্দগুলির দ্বারা দেবতাদের মূল প্রকৃতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন প্রস্তাবিত ব্যাখ্যাই সর্বজনগ্রাহ্য না হওয়াতে

এই পরিভাষাগুলির মৌলিক উতপত্তি এখনো অজানা। যে সমস্ত হায়ারো গ্লাইফস চিত্রলিপি এবং নির্ণায়ক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এই ভাষা গুলি লিপিবদ্ধ করার জন্যে,

তাদের বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় যে প্রাচীন মিশরীয়গণ দেবতাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন। এই চিহ্নগুলির মধ্যে

সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খুঁটি থেকে উড়ন্ত পতাকা। অনুরূপ চিহ্ন বিশিষ্ট বস্তু প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাস জুড়ে সমস্ত মন্দির প্রবেশদ্বার এ স্থাপন করা হত ভিতরে দেবতার উপস্থিতির প্রতিনিধিত্ব স্বরূপ।

অন্যান্য অনুরূপ হায়ারোগ্লিফগুলির মধ্যে রয়েছে একটি বাজ, কিছু মৌলিক প্রথম দেবতাদের স্মরণিকা স্বরূপ, যাদেরকে বাজপাখি হিসাবে

চিত্রিত করা হত এবং একজন উপবিষ্ট দেবতা বা দেবী। দেবীদের অনেক সময় ডিমের হায়ারোগ্লিফ দ্বারা সংজ্ঞায়িত,

লিপিবদ্ধ করা হত যা আসলে সৃষ্টি এবং জন্মের প্রতীক অথবা কেউটে সাপের প্রতীক দিয়ে বোঝানো হত।

প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মৃতদেরকে ‘nṯr’ বলা হতো কারণ তারা দেবতাদের মত গণ্য হত যদিও এই শব্দটি খুব কমই মিশরের কম

সংখ্যক অতিপ্রাকৃত প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হত, যা আধুনিক পণ্ডিতরা প্রায়ই “দৈত্য” (অসুর) বলে গণ্য করেন। মিশরের ধর্মীয় চিত্রশিল্পে স্থান, বস্তু এমনকি কোন ধারণাকেও মানুষের আকারে গড়ে তোলা হত।

দেবতা এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে এই সূক্ষ্ম পার্থক্য বোঝানোর জন্য, পণ্ডিতরা “দেবতা” র বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রস্তাব করেছেন।

প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস মিশরীয় পুরানে প্রতিফলিত হয়েছে। তিন হাজার বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মিশরে পৌরানিক ধর্মীয় বিস্বাশ প্রচলিত ছিল। মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরানও বিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৌরানিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। পৌরানিক ধর্মে মূলতঃ বহু দেব-দেবীর অস্তিত্ব থাকলে, প্রাচীন সাম্রাজ্যের কালে আখেনআতেনের (৪র্থ আমেনহোতেপ) শাসনামলে কিছুকালের জন্য সূর্যদেব আতেনকে কেন্দ্র করে একেশ্বরবাদের চর্চা করতে দেখা যায়। কিন্তু আখেনআতেনের মৃত্যুর সাথে এই চর্চাও লোপ পায় এবং আগের বহু দেব-দেবী সংবলিত পৌরানিক ধর্ম ফিরে আসে।

মিশরীয় সভ্যতার পতন :-

রাজা নারমারের প্রতিকৃতি প্রাচীন মিশরের বিশতম রাজবংশের শেষসম্রাট ছিলেন একাদশ রামসেস। এ সময় মিশরে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়।

১০৮০ খ্রিঃপূর্বাব্দে থিবস শহরের প্রধান পুরোহিত বা ধর্মযাজক সিংহাসন দখল করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫২৫ অর্থে পারসা রাজশক্তি মিশর অধিকার করলে মিশরীয় সভ্যতার অবসান ঘটে। অতঃপর ৩৩২ খ্রিপূর্বক সম্রাট আলেকজান্ডার মিশর অধিকার করেন। তার পর থেকে মিশরে “টলেমী রাজবংশ” প্রতিষ্ঠিত হয়। টলেমী রাজবংশ দীর্ঘদিন মিশর শাসন করে। এই বংশেরই বাণী ছিলেন বহু আলোচিত ও জগত খ্যাত বানী ক্লিওপেটা। ক্লেওপেট্রার সময় মিশর বারবার রোমানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। কালক্রমে রোমানরা মিশরে রোমান শাসন বিস্তার করে।

সারসংক্ষেপ :-

প্রাচীন মিশরীয়রা মানব সভ্যতার ইতিহাসে গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। মানব সভ্যতার অগ্রগতি তাদের অবদানে সমৃদ্ধ।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে তাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা বলা যায়। চিত্রকলায় আছে বিশেষ বৈচিত্রপূর্ণ অবদান। লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন, সেচ ব্যবস্থা চালু, চিকিৎসা শাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র অংক শাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান সভ্যতার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। যে কারণে মানব জাতি এখনও মিশরীয়দের কাছে ঋণী।

Leave a Reply