You are currently viewing ‘কর্তার ভূত’ বাংলা একাদশ শ্রেণি | bnginfo.com
'কর্তার ভূত' বাংলা একাদশ শ্রেণি | bnginfo.com

‘কর্তার ভূত’ বাংলা একাদশ শ্রেণি | bnginfo.com

‘কর্তার ভূত’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, “একাদশ শ্রেণি বাংলা” বাছাই করা 100+ টির বেশি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর, MCQ & SAQ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর :-

রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর :- মান-৫

রবীন্দ্রনাথ ‘সনাতন ঘুম’ বলতে কী বুঝিয়েছেন ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংস্কার মানতেন না। নৈবেদ্য’ কাব্যে অন্ধ সংস্কারকে তিনি মরুর ঝড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেননা,

সংস্কার প্রতিনিয়ত জায়গা বদল করে। “কর্তার ভূত’ গল্পে ‘সনাতন ঘুম’ বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবর্তনহীন, অন্ধ সংস্কারের ঘুমকে চিহ্নিত করেছেন।

‘কর্তার ভূত’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত ‘কর্তার ভূত’ গল্পে যিনি ক্ষমতার শীর্ষে বা সর্বেসর্বা তাঁর প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে ‘কর্তার ভূত’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তাই দেশের মানুষের বিশ্বাস কর্তার মৃত্যুর পরেও তিনি ভূত হয়ে থাকবেন।

মাথা না থাকার ফলে ভূতেরা কী সুবিধা পায় ?

উ. মাথা না থাকার ফলে ভূতেদের কারো জন্যে কোনো রকম মাথাব্যথা অর্থাৎ কর্তব্য করার দায়দায়িত্ব, কতর্ব্য-ভাবনাচিন্তা থাকে না গল্পকার এই মন্তব্য করেছেন।

“মোদ্দা কথাটা হচ্ছে” – মোদ্দা কথাটা কী ?

উ. “মোদ্দা কথাটা হচ্ছে”- বুড়ো কৰ্তা বেঁচেও নেই, মরেও নেই, ভূত হয়ে আছে।

মরণকালে বুড়ো কর্তার দুঃখ হলো কেন ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কর্তার ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তার মরার সময় হয়েছে। দেশের সবাই বুড়োকে জানাল যে,

বুড়ো মারা গেলে তাদের কী দশা হবে। এ কথা শুনেই বুড়ো কর্তার বড়ো দুঃখ হলো।

“এ প্রশ্নকে ঠেকানো যায় না”- প্রশ্নটি কী ?

উ. যে প্রশ্নকে ঠেকানো যায় না বলে গল্পকার মন্তব্য করেছেন সেই প্রশ্নটি হলো যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে জানতে চাওয়া— কীসে খাজনা দেব !

“কেবল অতি সামান্য কারণে একটু মুশকিল বাঁধল।”— মুশকিলটি কী ?

উ. উদ্ধৃতিটিতে যে মুশকিলের কথা বলা হয়েছে তা হলো— পৃথিবীর অন্য দেশগুলোকে ভূতে পায়নি।

অদৃষ্টের চালে চলার মাধ্যমে ভূতগ্রস্ত দেশ কী অনুভব করে ?

উ. অনুষ্টের চালে চলার মধ্য দিয়ে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।

সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুৱা কীভাবে চলত ?

উ. সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা নিয়তির অমোঘ বিধানে অদৃষ্টের চালে চলত।

“তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে।”-কে, কাকে, কখন এ প্রশ্ন করেছিল ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পের ভূতগ্রস্ত দেশের লোক বুড়োকর্তার মরণকালে, বুড়োকর্তাকেই উদ্ধৃত প্রশ্নটি করেছিল।

ভূতের কানমলার খাওয়ার সমস্যা উল্লেখ করো।

উ. ভূতের কানমলা খাওয়ার সমস্যা হল ভূতের থেকে পালানো যায় না, সেই কানমলা ছাড়ানো যায় না,

এমনকি তার বিরুদ্ধে নালিশ বা বিচারও চলে না।

‘কর্তার ভূত’ রচনায় কাকে অমর বলা হয়েছে ?

উ. “কর্তার ভূত’ রচনায় ভূতকে অমর বলা হয়েছে।

“এড়াবার জো নেই।” কোন ব্যাপারে কথাটি বলা হয়েছে ?

উ. জীবিত মানুষের মৃত্যু অবধারিত, তাকে এড়ানো যায় না—জীবিত বুড়োকর্তার সেই আসন্ন অবধারিত মৃত্যুর প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে।

“তারা খায় ভূতের কানমলা।” কারা, কখন ভূতের কানমলা খায় ?

উ. ‘কর্তার ভূত’ গল্প অনুসারে যেসব মানুষরা নিজের ভাবনা নিজে ভাবতে যায়, তারা ভূতের কানমলা খায়।

“বেরোবার মধ্যে বেরিয়ে যায়…।” গল্পকার কী বেরোনোর কথা বলেছেন ?

উ. কর্তার ভূত’ গল্প অনুসারে উদ্ধৃত বাক্যে গল্পকার মানুষের তেজ বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

আজও কাদের চলায় অদৃষ্টের চালে চলার আভাস প্রচলিত আছে ?

উ. আজও গাছ ও ঘাসের চলার মধ্যে অনুষ্ঠের চাপে চলার আভাস প্রচলিত আছে।

“এক ছটাক তেল বেরোয় না কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে ?

উ. জেলখানায় নিরন্তর ঘোরানো ঘানির কার্যকারিতা ও তার থেকে কোনো ফল নিঃসৃত না-হওয়ার প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

রবীন্দ্রনাথ  ‘সনাতন’  ঘুম বলতে কি বুঝিয়েছেন ?

উ. পরিবর্তনহীন, অন্ধ সংস্কারের ঘুম কে বুঝিয়েছেন।

এমন প্রশ্ন কার জন্মেও শোনা যায়নি ?

উ. এমন প্রশ্ন বাপের জন্মেও শোনা যায়নি।

দেশটাকে সে নাড়েও না , অথচ ছাড়াও না ।”-‘সে’ কে ?

উ. বুড়ো কর্তা।

“যেমন করে পারি ভূত ছাড়াবো।”- উক্তিটি কার ?

উ. অর্বাচীনরা।

ভুতের নায়েব কখন চোখ পাকিয়ে বলে, ‘চুপ’ এখনো ঘানি অচল হয়নি।”

উ. যখন অর্বাচীনরা ভূত তাড়াতে উদ্যত হল।

“সেইখানে তো ভূত”-  ভুতের অবস্থান কোথায় ?

উ. ভয়ের মধ্যে।

“একমাত্র বর্গীরাই দোষ”- ‘দোষটি’ কী ?

উ. বর্গির আশা।

বুলবুলিরা কিসের ভয় হুঁশিয়ার দের কাছে ঘেঁষে না ?

উ. প্রায়শ্চিত্তের ভয়ে।

“জগতে যারা হুঁশিয়ার এরা তাদের কাছে ঘেঁষতে চাই না” – কারণ কি ?

উ. তাদের সে ক্ষেত্রে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতে পারে সেই জন্য।

“প্রজাদের মধ্যে কোন কোন লোক ভুতের কানমলা খায়”-  কারণ কি ?

উ. কারণ তারা নিজে ভাবতে রায়।

ভুতের দেশে ওঝা ঢাকার চিন্তাই নেই,-  কারণ কি ?

উ. কারণ এখানে ওঝা কে আগেভাগে ভূতে পেয়ে বসে আছে।

“দেশের লোক ভারি চিন্তিত হল।”- কারণ কি ?

উ. দেবতার দয়ায় বড় কর্তা ভূত হয়ে তাদের ঘাড়ে চাপলেন।

‘কর্তার ভূত’ গল্পটির রচয়িতা কে ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

“অত্যন্ত সান্ত্বনা বোধ করল।”-কাদের কথা বলা হয়েছে ?

উ. এখানে ভূতের রাজ্যে, ভূতের শাসনে কোনো প্রশ্ন না-করে অনুষ্টের চালে চলা সমস্ত লোকদের কথা বলা হয়েছে।

পুথি খুলে শিরোমণি-চূড়ামণির দল কাদেরকে পবিত্র বলে উল্লেখ করেন ?

উ. পুথি খুলে শিরোমণি-চূড়ামণির দল ‘বেহুঁশ’ লোকদের পবিত্র বলে উল্লেখ করেন।

“এমন হল কেন।”—এই প্রশ্নের উত্তরে শিরোমণি চূড়ামণিরা কী সিদ্ধান্ত পোষণ করল ?

উ. উক্ত প্রশ্নের উত্তরে শিরোমণি-চূড়ামণিরা সিদ্ধান্ত পোষণ করল যে, বিষয়টিতে একমাত্র বর্গিরই দোষ।

এতকাল নানা জাতের বুলবুলি কোথা থেকে এসেছে ?

উ. এতকাল নানা জাতের বুলবুলি উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম চারদিক থেকে এসেছে।

“উদাসীন থেকো “- কাদের প্রতি, কোন বিষয়ে, কারা উদাসীন থাকতে বলেছেন ?

উ. ভূতগ্রস্ত দেশের অশুচি-হুঁশিয়ারদের আত্মসচেতন মানসিকতা ও যুক্তিবাদী ভাবনার প্রসঙ্গে শিরোমণি চূড়ামণিরা দেশের বাকি লোকদের উদাসীন থাকতে বলেছেন।

“কেবল অতি সামান্য কারণে একটু মুশকিল বাধল।”— মুশকিলটি উল্লেখ করো।

উ. প্রশ্নোত তাৎপর্যপূর্ণ বাক্যানুযায়ী মুশকিলটি হল পৃথিবীর অন্য দেশগুলিকে ভূতে পায়নি।

তাই তারা তাদের ভবিষ্যতের রথচক্রকে সক্রিয় রাখার জন্য সজাগ হয়ে রয়েছে।

“বেবাক ধান খেয়ে গেছে। ‘বেবাক’ শব্দটি কোন্ ভাষা থেকে এসেছে ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পের ‘বেবাক’ শব্দটি ফরাসি ভাষার থেকে এসেছে।

‘খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো অবস্থাটি কাদের পক্ষে আরামের ?

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্প অনুসারে ‘খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো অবস্থাটি খোকা, খোকার অভিভাবকের ও পাড়ার পক্ষে আরামের।

অভৃতের পেয়াদারা কোথায়, কেন ঘোরাঘুরি করে ?

উ. অভূতের পেয়াদারা ভূতগ্রস্ত দেশের লোকদেরকে বাস্তব সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে সদরের রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করে।

খিড়কির আনাচেকানাচে কারা, কেন ঘোরাঘুরি করে ?

উ. ভূতগ্রস্ত দেশের বিরুদ্ধে কেউ গোপন ষড়যন্ত্র করছে কি না, তা জানতে খিড়কির আনাচেকানাচে ভূতের পেয়াদারা ঘোরাঘুরি করে।

মাথা না থাকার ফলে ভূতরা কী সুবিধা পায় ?

উ. মাথা না থাকার ফলে ভূতদের সুবিধা হয় এই যে, কারো জন্য কোনোরকম মাথাব্যথা অর্থাৎ কর্তব্য করার দায়দায়িত্ব, ভাবনাচিন্তা থাকে না।

মানুষের তেজ বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ভূতগ্রস্ত দেশে আর কী থাকে ?

উ. মানুষের তেজ বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ভূতগ্রস্ত দেশে অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য না থাকলেও, অনাবিল নির্বক্কটি শান্তি থাকে।

“সেই জেলখানার দেয়াল চোখে দেখা যায় না।”-গল্পে উল্লিখিত জেলখানার অবস্থান কোথায় ?

উ. গল্পে উল্লিখিত জেলখানার অবস্থান ভূতগ্রস্ত দেশে।

“দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্ত হল”-কোন্ ঘটনায় দেশের লোক নিশ্চিন্ত হল ?

উ. দেবতার করে দেওয়া বন্দোবস্ত অনুযায়ী, বুড়োকর্তা ভূত হয়েই দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থেকে যাবেন এবং তাঁর আর মরণ হবে না—এটা জেনে দেশের লোক নিশ্চিন্ত হল।

কোন্ কথা শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আদিম আভিজাত্য অনুভব করে ?

উ. চোখ বুজে চলাই যে আদিম চলা, সেভাবেই যে সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা চলত, এমনকি বর্তমানে ঘাস ও গাছের মধ্যে যে সে-ই চলাই প্রচলিত—এই কথা শুনেই ভূতগ্রস্ত দেশ আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।

“এখানে সে চিন্তাই নেই।”-চিন্তা না-থাকার কারণ কী ?

উ. গল্পানুসারে ভূতগ্রস্ত দেশের ওঝাকেই যেহেতু ভূতে পেয়েছে, সেহেতু ভূত তাড়ানোর জন্য এখানে কোনোরকম ওঝা খোঁজার চিন্তা হয় না।

“ভূতকে মানলে কোনো ভাবনাই নেই”–গল্পকারের এই মন্তব্যের কারণ কী ?

উ. ভূতকে মানলে দেশবাসীর সব ভাবনা ভূতকেই ভাবতে হয়। দেশবাসীর কোনো দায়দায়িত্ব, কর্তব্য-ভাবনা-চিন্তা থাকে না।

আবার, ভূতের মাথা নেই। তাই আক্ষরিক অর্থে সে ভাবনা-চিন্তা করতেও পারবে না। এই কারণেই উক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।

ভূতগ্রস্ত দেশের জেলখানায় ঘোরানো ঘানির পরিণতি কী ?

উ. ভূতগ্রস্ত দেশের জেলখানায় যে-ঘানি নিরন্তর ঘোরানো হয়, তার পরিণতি অতি ভয়ানক। কারণ,

তার থেকে হাটে বিক্রি করার মতো সামান্যতম তেলও বেরোয় না, শুধুমাত্র মানুষের সমস্ত তেজ বা শক্তি-সামর্থ্য বেরিয়ে যায়।

“দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন”–তত্ত্বজ্ঞানীরা কী বলেন ?

উ. দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন—চোখ বুজে চলাই জগতের সবচেয়ে আদিম চলা, যাকে অদৃষ্টের চালে চলা বলা হয়।

কারা ভূতের রাজ্যের শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটায় ?

উ. ভূতের রাজ্যের শাস্তিতে ব্যাঘাত ঘটায় পৃথিবীর অন্য সব ভূতে না-পাওয়া দেশ থেকে আসা জাতির মনে সাহস সঞ্চারকারী বর্গিরা।

“শ্মশান থেকে মশান থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় হা হা করে তার উত্তর আসে ।’ কোন প্রশ্নের উত্তর আসে ?

উ. খাজনা দেব কীসে শ্মশান-মশান থেকে ঝোড়ো হাওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর আসে।

“এমন হল কেন ?”-কাকে এই প্রশ্নটি করা হয়েছে ?

উ. ভূতগ্রস্ত দেশের যত শিরোমণি ও চূড়ামণি আছে তাঁদেরকে এই প্রশ্নটি করা হয়েছে।

দিব্যি ঠান্ডায় ভূতের রাজ্যজুড়ে কী অবস্থা ?

উ. দিব্যি ঠান্ডায় ভূতের রাজ্যজুড়ে সমস্যা-বিবর্জিত ‘খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো অবস্থা।

“তারা একবাক্যে শিখা নেড়ে বলল”-একবাক্যে শিখা নাড়িয়ে কারা, কী বলল ?

উ. দেশের শিরোমণি-চূড়ামণিরা শিখা নাড়িয়ে বলল— বর্গির আসার বিষয়ে ভূতের বা ভূতুড়ে দেশের কারোর দোষ নেই–দোষ কেবলমাত্র বর্গির।

“তারা ভয়ংকর সজাগ থাকে তারা কারা ?

উ. এই উক্তিটিতে ‘তারা’ হল ভূতে না-পাওয়া অন্য সব দেশগুলির মানুষ।

নইলে ছন্দ মেলে না” ছন্দ মেলাতে কোন পক্তির উল্লেখ করা হয়েছে ?

উ. ছন্দ মেলানোর জন্য ‘খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো পদের সঙ্গে ‘বর্গি এল দেশে পক্তির উল্লেখ করা হয়েছে।

ভূতের রাজ্যজুড়ে খোকা ঘুমোনোর ফলে কী হয় ?

উ. ভূতের রাজ্যজুড়ে খোকা ঘুমোনোর ফলে খোকা ও তার অভিভাবক, এমনকি পাড়া তথা রাজ্য পরম শান্তিতে থাকে।

“কর্তা, এখনো কি ছাড়বার সময় হয়নি ?” – কারা, কখন এ কথা বলে ?

উ. নায়েবের ভয়ে ভীত দেশের কিছু মানুষ হাতজোড় করে, গভীর রাত্রে এ কথা বলে।

‘কর্তার ভূত’ গল্পে সনাতন ঘুমের আর কোন বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লিখিত ?

উ. ‘কর্তার ভূত’ গল্পে সনাতন ঘুমের বৈশিষ্ট্য হল- এটি আদিমতম ও প্রাচীনতম।

দেশের খোকা নিস্তব্ধ হয়ে কী করে ?

উ. দেশের খোকা নিস্তব্ধ হয়ে পাশ ফিরে শোয়।

“যেমন করে পারি ভূত ছাড়াব।”—কথাটি কারা, কেন বলে ?

উ. আলোচ্য কথাটি নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ, নতুনের আবাহনে দীপ্ত সচেতন উদ্ধৃত অর্বাচীনরা বলে। কারণ, তারা ভূতগ্রস্ত সমাজের অন্ধ কুসংস্কারকে নির্মূল করতে চায়।

“এ প্রশ্নকে ঠেকানো যায় না।”-কোন প্রশ্নকে, কেন ঠেকানো অসাধ্য ?

উ. যুক্তিবাদী মানুষরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গতিশাল থাকে। তারা অবস্থার পরিবর্তন চান ও স্থবিরতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন বলেই অনিবার্যভাবে আসা ‘খাজনা দেব কীসে ?’ প্রশ্নকে ঠেকানো অসাধ্য হয়।

বুড়োকর্তার মনে দুঃখ হওয়ায় সে কী ভেবেছিল ?

উ. বুড়োকর্তার মনে দুঃখ হওয়ায় সে ভেবেছিল, সে মারা গেলে দেশবাসীদেরকে ঠান্ডা করে রাখার কেউ থাকবে না।

ভূতের নায়েব চোখ পাকিয়ে কী বলে ?

উ. ভূতের নায়েব চোখ পাকিয়ে ভূতগ্রস্ত দেশের শাশ্বত স্থায়িত্ব সম্পর্কে ভয় দেখিয়ে বলে—“এখনও ঘানি অচল হয়নি”, অর্থাৎ, যুক্তিহীন সংস্কার অক্ষত রয়েছে।

“খাজনা দেব কিসে ?”— এই প্রশ্নের উত্তরে কী শোনা যায় ?

উ. উক্ত প্রশ্নের উত্তরে শোনা যায়-আব্রু-ইজ্জত, ইমান ও বুকের রক্ত দিয়ে খাজনা দিতে হবে।

“এখনো কি ছাড়বার সময় হয়নি।”—কে, কখন এই প্রশ্ন করেছিল ?

উ. প্রশ্নটি ভূতগ্রস্ত সমাজের দুটো-একটা মানুষ গভীর রাড়ে করেছিল।

“কী সর্বনাশ।”—কথাটি কারা, কীভাবে বলে ?

উ. কথাটি ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি আর মাসতুতো-পিসতুতোর দল কানে হাত দিয়ে বলে।

“শুনে তারও মনে দুঃখ হল।”—কার মনে, কখন দুঃখ হয়েছিল ?

উ. বুড়োকর্তার মনে তার মৃত্যুকালে দুঃখ হয়েছিল।

“ভয় করে যে কর্তা।”—কথাটি কারা, কাকে বলেছিল ?

উ. কথাটি ভূতগ্রস্ত দেশের দুটো-একটা মানুষ বুড়োকর্তার ভূতকে বলেছিল।

“তা বলে মরণ তো এড়াবার জো নেই।”-মৃত্যুর এই অনিবার্যতায় কে, কী সিদ্ধান্ত করলেন ?

উ. মৃত্যুর এই অনিবার্যতায় স্বয়ং দেবতা সিদ্ধান্ত করলেন যে ভূত হয়েই দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকবেন কারণ মানুষ মরলেও ভূতের মৃত্যু নেই।

বুড়োকর্তার মরণকালে কারা, কী বলল ?

উ. বুড়োকর্তার মরণকালে দেশসুদ্ধ সব লোক বলল যে সে মারা গেলে তাদের কী দশা হবে।

“মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।” –বক্তা কে ?

উ. দেবতা।

কাকে মানলে সর্বদাই ভাবনা থাকে ?

উ. ভবিষ্যৎকে।

“তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে।”—‘তুমি’ কে ?

উ. বুড়োকর্তা।

“ভাবনা কী ?”— কথাটি কার ?

উ. দেবতার।

“আমি গেলে এদের ঠাণ্ডা রাখবে কে ?”—‘এদের’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ?

উ. দেশসুদ্ধ লোকের।

যারা স্বভাবদোষে ভাবতে যায়, তাদের বিরুদ্ধে কী চলে না ?

উ. নালিশ।

ভূতগ্রস্ত দেশের লোক কীভাবে চলে ?

উ. চোখ বুজে।

“তাতে অত্যন্ত আনন্দ পায়। কে বা কারা আনন্দ পায় ?

উ.  ভূত গ্রস্থ দেশ।

‘কর্তার ভূত’ রচনায় চোখে কী দেখা যায় না ?

উ. ভুতুড়ে জেলখানার দেয়াল।

ঘর থেকে গেরস্তের বেরোবার কী নেই ?

উ. পথ।

“মানুষ সেখানে একেবারে জুড়িয়ে যায়নি।”— ‘সেখানে’ বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে ?

উ. অন্য দেশগুলির।

“ইতিহাসের পদটা খোঁড়া হয়েই থাকে”– কেন ?

উ. ছন্দ মেলে না বলে।

খিড়কির আনাচে-কানাচে কারা ঘোরাফেরা করে ?

উ. ভূতের পেয়াদা।

বর্গি কোথায় এল ?

উ. দেশে।

বুলবুলিরা কীসের ভয়ে হুঁশিয়ারদের কাছে ঘেঁষে না ?

উ. প্রায়শ্চিত্তের ভয়ে।

“খাজনা দেব কীসে”-এ প্রশ্নের কী উত্তর আসে ?

উ. আবু, ইজ্জত, ইমান, বুকের রক্ত দিয়ে।

‘কী সর্বনাশ’ কথাটি ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি আর মাসতুতো-পিসতুতোর দল কীভাবে বলেন ?

উ. কানে হাত দিয়ে।

“অতএব, হুঁশিয়ারদের প্রতি থেকো।”—শূন্যস্থানের শব্দটি হবে কী ?

উ. সতর্ক।

“তারাই পবিত্র”- কারা পবিত্র ?

উ. বেহুঁশরা।

“হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি”— এ কথা কেন বলেছেন ?

উ. ভূতগ্রস্ত অলস মানুষ যাতে সচেতন প্রাজ্ঞ মানুষের কাছে না আসে তাই একথা বলা হয়েছে।

“শ্মশান থেকে মশান থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় হা হা করে তার উত্তর আসে।”প্রশ্নের উত্তর কী আসে ?

উ. ‘কর্তার ভূত’ নামাঙ্কিত গদ্যাংশ থেকে উক্তিটি উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে প্রশ্নের যে উত্তর আসে তা হলো আৱু দিয়ে,

ইজ্জত দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে খাজনা মিটিয়ে দিতে হবে।

“কী সর্বনাশ।”— সর্বনাশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উ. ভূতগ্রস্ত দেশে অনন্তকাল ধরে ভূতের শাসন ব্যবস্থাটাই বহাল থাকবে কি না- এই প্রশ্নটিকেই সর্বনাশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

“নইলে ছন্দ মেলে না”- মেলাতে কোন দু’টি পক্তির উল্লেখ করা হয়েছে ?

উ. ছন্দ মেলানোর জন্য “খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়ালো” পদের সঙ্গে “বর্গি এল দেশে” পঙক্তি দু’টির উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশের মানুষ নিশ্চিত হয়েছিল কেন ?

উ. ভূতকে মানলে কোনো ভাবনা থাকবে না বলে দেশের মানুষ নিশ্চিত হয়েছিল।

রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর :- মান-৫

“ওরে অবোধ, আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া”- এখানে কে. কাদের অবোধ বলেছেন ? উক্তির গুরুত্ব ব্যাখ্য করো।

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘লিপিকা’ গল্পগ্রন্থ থেকে গৃহীত ‘কর্ত্রর ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তা দেশের দুটো-একটা মানুষের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন।

যারা দিনের বেলায় নায়েবের ভয়ে কথাই বলে না, তারাই গভীর রাতে কর্তার কাছে হাতজোড় করে জানতে চায়,

“কতা এখনো কি ছাড়বার সময় হয়নি।” তখন কর্তা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

গুরুত্ব : যারা ভবিষ্যৎকে মানতে ভয় পায়, তাদের মনের মধ্যেই ভূতের অস্তিত্ব। এরা একপ্রকার চোখ বন্ধ করেই সমাজে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করে। এ

দের মধ্যে যারা হুঁশিয়ার তারাই অশুচি। দেশের লোক এই ভেবে আনন্দে থাকে যে, মাথার উপরে কর্তা আছেন। ফলে ভূতের শাসন হয় সর্বগ্রাসী।

মানুষ নিজের দোষেই এর থেকে মুক্তি চায় না। কেউ যদি অন্য ভাবনা ভাবতে যায়, তাহলে তাকে ভূতের কানমলা খেতে হয়।

ফলে ভূতের শাসন চলতেই থাকে। এজন্যই কর্তা বলেন, “তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।” এভাবেই উক্তিটি হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ।

“তার মাথা নেই, সুতরাং কারও জন্য কোনো মাথাব্যথা নেই।”— কার সম্বন্ধে বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী ?

উ. উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি বুড়ো কর্তার ভূত সম্বন্ধে করা হয়েছে।

বলার কারণ : ‘কর্তার ভূত’ হয়ে বুড়ো কর্তার মরণকালে সকলে চিন্তায় পড়লে দেবতা বলেন, কর্তার মৃত্যু হলেও ভূত হয়েই দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকবেন।

এমনিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলেই মাথায় দুশ্চিন্তা ভিড় করে। সব ভাবনাচিন্তা ভূতের উপর ছেড়ে দিলে কোনো চিন্তা থাকে না।

কারণ লেখকের মতে, কায়াহীন ভূতের মাথা নেই। তাই অন্যের জন্য মাথাব্যথাও নেই।

প্রাচীন সভ্যতার প্রেতই বর্তমান সমাজকে চালনা করছে। শাস্ত্রীয় বিধান, অন্ধবিশ্বাস অপরিবর্তনীয় বলেই মানুষের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। তাই ভূতেরও কোনো মাথাব্যথার প্রশ্নই নেই।

“মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।” – কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ?

ভূতের স্বরূপ উল্লেখ করে কেন তার মৃত্যু নেই, লেখো।

উ. প্রসঙ্গ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কর্তার ভূত’ নামক গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে।

এখানে রুপকের আড়ালে লেখক সমাজ ব্যবস্থায় অদ্ভূত পরিস্থিতির প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এখানে কর্তা সামাজিক বিধানের রূপক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। প্রাচীন প্রথা যুগ পাল্টাবার সঙ্গে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

একইভাবে ক্ষমতাবানরা প্রয়োজনে ক্ষমতার প্রয়োগ করতে দু’বার ভাবে না। ‘ভূত’ বলতে বোঝায় প্রচলিত ক্ষয়িষ্ণু প্রথা ও ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা ধরে রাখার চিরন্তন প্রবণতা। সেই প্রসঙ্গেই এই উক্তি।

মৃত্যু না হওয়ার কারণ : মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তাই ‘ভূত’ বা অতীত যে আসলে প্রাচীন নীতিশাস্ত্রসম্মত বিধান এবং তা বর্তমানে অচল জেনেও তার কবল থেকে মুক্ত হতে ভয় পায়। এভাবেই বেঁচে থাকে ভূত’।

অতীতের জীর্ণ লোকাচার সংস্কার কখনোই নতুনের অধিকার হরণ করতে পারে না।

কিন্তু সাহস করে কোনো মানুষ নতুনের জয় ঘোষণা করছে না। সমবেত কণ্ঠে আওয়াজ উঠছে না— “জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে।”

এজন্যই বহাল তবিয়তে ভূত তার শাসনতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়।

“প্রশ্ন মাত্রেরই দোষ নেই” – দোষটি কী? এর ফলে কী অবস্থা হয় ?

উ. দোষ : কির্তার ভূত’ গল্পটি রবীন্দ্রনাথের সমাজ সচেতনতা ও যুগচেতনার মিশ্র ফসল। উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে গল্পকার পরাধীন

ভারতে ব্রিটিশ নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করেছেন। এই লাইনে তিনি যে দোষের কথা বলেছেন তা

এভাবে উল্লেখ করা যায়— “প্রশ্ন মাত্রেই দোষ এই যে, যখন আসে একা আসে না।

দোষের ফল : ইংরেজ আমলে জালিয়ানওয়ালাবাগের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কবি তখন কার্যত শোকস্তব্ধ।

একই সঙ্গে জেগে ওঠে তাঁর চিরন্তন প্রতিবাদী বিবেক। প্রশ্নে দোষের হেতু একই সময়ে পৃথিবীর অন্য দেশে তখন লেগেছে যুক্তিবাদের ঢেউ, সেখানকার মানুষ অত্যন্ত সজাগ।

তাহলে ভূতের রাজ্যে বর্গি আসে কেন? শিরোমণিরা ব্যাখ্যা দেন, “এটা বর্গিদেরই দোষ”। আবারো ওঠে প্রশ্ন, কীসে খাজনা দেওয়া হবে।

চলতেই থাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন। এরপর সংস্কারপন্থীরা প্রশ্ন তোলেন, “ভূতের শাসনটাই কি অনন্তকাল চলবে?।”

এই প্রশ্ন শুনে শিরোমণিদের মাথায় হাত। এমনকী ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি, নির্বিরোধী জনতাও চিন্তায় পড়ে।

ভবিতব্যের উপর দায় চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা মানুষজন এবার আত্মসচেতন হবে –

শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে দেশের মানুষকে যুক্তিবাদী ও সমাজসচেতন করে তুলবে। এসবই হবে প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে।

ভূতের রাজত্বে কীভাবে শান্তি বজায় থাকে, ব্যাখ্যা করো। 

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্প থেকে নেওয়া এই উদ্ধৃতাংশে ভূত শাসনতন্ত্রে বসবাসকারী মানুষের অবস্থা বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা মানেই যত দুশ্চিন্তা। আর ‘ভূত’ অর্থাৎ অতীতের

উপর সব চাপিয়ে দিলে নিশ্চিত। অতীত যখন বর্তমানকে গ্রাস করে তখন দেশে একটা অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করে।

দেশের মানুষ ভূতের উপর সব দায় চাপিয়ে আনন্দে দিন কাটায়। তাই কোনো অশান্তি হয় না। অবশ্য এতে দেশের উন্নতিও থমকে যায়।

সেক্ষেত্রে স্বভাবদোষে যারা প্রতিবাদ করতে যায় তারাই খায় ভূতের কানমলা’। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যা কিছু স্থবির,

যা কিছু জীর্ণ তাকে অতিক্রম করতে ভয় পায়। ভূতের রাজত্বে সব ঘটনাকেই মানুষ ভবিতব্য বলেই জানতে অভ্যস্ত।

গল্পকার এভাবেই ব্যঙ্গের চাবুকে সমকালীন সমাজকে বিদ্ধ করেছেন। ভারতে যত অভাবই থাক, শান্তির কোনো অভাব কোনোদিনই নেই।

কারণ এখানকার মানুষের প্রতিবাদের ভাষা গেছে হারিয়ে।

“তারা ভয়ংকর সজাগ আছে।” কাদের কথা বলা হয়েছে ? তারা কেন সজাগ থাকে ?

উ. ‘লিপিকা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত কর্তার ভূত’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যান্য দেশের যুক্তিবাদী ও সচেতন মানুষের কথা বলেছেন।

সজাগ থাকার কারণ : রবীন্দ্রনাথ এই গল্পটি লেখেন ১৯১৯ সালে। সেই সময় ভারত ছিল পরাধীন। তখন ইংরেজ শাসকই ছিল ভারতীয়দের ‘কর্তা’।

মানুষ ভাবত, “কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম”, তবে পৃথিবীর “অন্য দেশগুলোকে ভূতে পায়নি।”

আমাদের দেশে খনি থেকে যে তেল বেরিয়ে আসত তার সঙ্গে মিশে থাকত মানুষের রক্ত।

কিন্তু বিদেশে খনি থেকে শুধু তেলই বেরিয়ে আসত। ভারতে যখন ‘ভূত’ বা ইংরেজ সরকারকে তোয়াজ করতেই মানুষের ‘দম’ শেষ হয়ে যেত তখন উন্নত দেশে খনির তেলে সচল হতো উন্নয়নের রথচক্র।

এই তফাতের জন্য অন্য দেশের মানুষ পোষা ভেড়া’ হয়ে যায়নি, তারা সজাগই ছিল। ভূতগ্রস্ত দেশে ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ আর সংস্কারের বেড়াজালেই মানুষ আবদ্ধ।

কিন্তু বিদেশে অতীতের ‘ভূত’ অনুপস্থিত বলেই উন্নতির ঘোড়া দৌড়ে চলেছে। এজন্যই লেখক বলেছেন, “তারা একেবারে জুড়িয়ে যায়নি।”

‘কর্তার ভূত’ রচনা অবলম্বনে বুড়োকর্তার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।

উ. ‘কর্তার ভূত’ গল্পের বুড়োকর্তা একটি রূপক চরিত্র। আসলে গল্পটিই যেখানে রূপকাশ্রয়ী, সেখানের চরিত্রগুলিও রূপকধর্মী হবে।

বুড়োকর্তাও তার ব্যতিক্রম নয়। রূপকধর্মী চরিত্র হলেও, আমরা তাঁর কিছু স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করি।

আলোচ্য গল্পে, বস্তুত, ‘বুড়োকর্তা’ চরিত্রটির মানবায়ন করা হলেও, তিনি কোনো রক্তমাংসের ‘মানুষ’ নন, আবার, তিনি ‘ভূত’-ও নন।

‘বুড়োকর্তা’ হল একটি প্রথাগত সামাজিক তথা রাজনৈতিক বিমূর্ত ধারণা, যাকে কেন্দ্র করে গল্পটি শাখা বিস্তার করেছে।

বুড়োকর্তা নিজে আত্মসচেতন ও মানবিকতায় পরিপূর্ণ। তাঁকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যারা তাকে ঘিরে থাকে,

ভয় তাদেরকেই। আসলে তারাই কর্তাকে আড়ালে রেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে যায়। এরা হল শিরোমণি চূড়ামণি এবং মাসিপিসি ও

তাদের দলবল। তারাই ভূতুড়ে জেলখানায় দেশবাসীকে আবদ্ধ রেখে ঘানি ঘুরিয়ে মানুষের তেজ বের করে নেয়।

এই স্বার্থান্বেষী মানুষগুলি বুড়োকর্তার ভয় দেখিয়ে দেশের আত্মসচেতন, মানবপ্রেমিক, যুক্তিবাদী সমাজসেবীদের সাধারণের থেকে দূরে রাখে।

তারাও শাসনযন্ত্রের ভয়ে কোনো উদারতান্ত্রিক কাজ করতে পারে না। তাদের পিছনে ভূতের পেয়াদারা ঘোরাফেরা করে।

বুড়োকর্তা সব জানেন। তিনি উপলব্ধি করেন এভাবে দেশের কল্যাণ হয় না। মানবজাতি উন্নতিলাভ করতে পারে না।

আবার রীতি বা প্রথানুযায়ী বুড়োকর্তা নিজেও জনগণকে সচেতন হতে বলতে পারেন না। তাঁকেও সংস্কার মানতে হয়।

তাকে ঘিরে থাকা অনুচরেরা প্রজাসাধারণকে সরাসরি তার কাছে আসতে দেন না। স্বয়ং বুড়োকর্তাও যেন পাতালপুরীর মধ্যে জালে আবদ্ধ রাজামশাই।

তিনিও স্বার্থান্বেষী পরিবৃত হয়েই সমাজের স্বরূপকে প্রকাশ করছেন। তাই এখানে বুড়োকর্তা সক্রিয় চরিত্র নয়।

তবে একেবারে শেষে সক্রিয় বুড়োকর্তা দেশের মুষ্টিমেয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের শাশ্বত সত্য জানিয়ে বলে দেন, ভয়ের মধ্যেই ভূত

লুকিয়ে থাকে—ভয় দূর করতে পারলে, ভূতও দূরীভূত হয়। সবমিলিয়ে বুড়োকর্তা তাই মানবিকতাধর্মী সত্যের উদ্গাতা, সময় ও কালোপযোগী এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চরিত্র।

“দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন….” – ‘তত্ত্বজ্ঞানী’ কারা ? তাঁরা কী বলেন ? তাঁদের বলা কথার তাৎপর্য লেখো।

উ. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘লিপিকা’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া রূপকধর্মী তত্ত্বমূলক রচনা ‘কর্তার ভূত’-এ ‘তত্ত্বজ্ঞানী’

বলতে শাস্ত্রনির্ভর সনাতন সমাজব্যবস্থার ধারক এবং শাস্ত্রগ্রন্থের ব্যাখ্যাকর্তাকে বোঝানো হয়েছে।

তত্ত্বজ্ঞানীরা ভূতগ্রস্ত দেশের সাধারণ জনগণের জ্ঞাননেত্র বিকাশের জন্য বলেন-ভূতগ্রস্ত দেশের সব লোকই চোখ বুজে চলে।

কারণ—“এই চোখ বুজে চলাই হচ্ছে জগতের আদিমতম চলা’। একেই বলে অদৃষ্টের চালে চলা।

সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা এই ভাবেই চলত। উদ্ভিজ্জ শ্রেণির মধ্যে আজও এই চলার আভাস পাওয়া যায়।”

তত্ত্বজ্ঞানীদের বলা কথার তাৎপর্য হল—কর্তা জীবিতকালে তাঁর বুদ্ধিমতে দেশের মানুষদের চালনা করতেন।

দেশের লোকদের যাবতীয় জীবনচর্চা তাঁর নির্দেশমতোই পরিচালিত হত। তাঁর আদেশ অনুসারেই সমস্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হত

কিংবা গতি পেত—কিংবা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ওপরই তাদের জীবন বাঁধা ছিল। কিন্তু কর্তার অনুপস্থিতে তাঁর কথার ব্যাখ্যাকারীরা

সেই জনগণকে তাদের সুবিধামতো চলার পরামর্শ দেয়। আসলে তত্ত্বজ্ঞানীরা কর্তার মতানুসারী। সত্য হোক মিথ্যে হোক,

দীর্ঘকালযাবৎ যা হয়ে আসছে তার বাইরে যাতে কেউ না-যায়, তার জন্য তত্ত্বজ্ঞানীরা শাস্ত্রবুলি আওড়াতে থাকে।

আর তাতেই ভূতগ্রস্ত দেশের মানুষ আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। ফলে তত্ত্বজ্ঞানীদের কথায় মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন,

সংকীর্ণ ও পরাধীন থেকে যায়। জনগণও তাদের কথায় বিশ্বাস করে অতীতচারী হয়ে অদৃষ্টের হাতেই জীবনকে উৎসর্গ করে।

আর স্বার্থলোভী শাসকানুগৃহীত তত্ত্বজ্ঞানীরা এভাবেই তাদের তত্ত্বজ্ঞানের মাধ্যমে শাস্ত্রীয় বিধানে সবাইকে গতিহীন করে নিশ্চল চলনে বেঁধে রাখে।

“তারা বলে, ভয় করে যে কর্তা।”—কারা এ কথা বলে ? তাদের কীসের ভয় ? কর্তা জবাবে কী বলেন ?

উ. ‘কর্তার ভূত’ রচনাটিতে রবীন্দ্রনাথ স্থবিরতার বেড়াজালে আবদ্ধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ভারতবর্ষের স্বরূপ উদ্ঘাটন করেছেন।

তারই বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ভূতগ্রস্ত দেশের ভূত শাসনতন্ত্রের বিধানে পরিচালিত এবং আদিম চলনে অভ্যস্ত দেশের

দু-চারটে মানুষ প্রশ্নোধৃত কথাটি বলে।

ভূতগ্রস্ত দেশের মানুষ ভূতশাসনতন্ত্র মেনে চলে। তাদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই। তথাকথিত বুড়োকর্তা অকেজো হয়ে গেলেও,

তারই বিধিমতো তারা চলতে আগ্রহী হয়। তারা নতুন কিছুর সম্মুখীন হতে ভয় পায়। তাদের মনে প্রশ্ন বা যুক্তিবোধ নেই বলে কর্তার নির্দেশ তারা নির্বিবাদে মেনে চলে। আর এভাবে চলার ফলেই তাদের যুক্তিবাদী মন আড়ষ্ট ও বিবশ হয়ে পড়ে।

তবুও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা বেপরোয়া, তারা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুনের ছোঁয়ায় আলোকিত হতে চায় যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে

সব কিছুকে গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু দীর্ঘকালের অভ্যাস তাদের মনে জড়তা, দ্বিধা ও সংশয় আনে। তারা নিজের ব্যাপারে

সংশয়ান্বিত হয়ে ওঠে। ফলে যুক্তিবাদ তাদের কাঙ্ক্ষিত হলেও সংস্কারবশত তারা সন্দিহান ও ভীত হয়ে ওঠে। মনের ভয় তাদেরকে সংশয়ের দোলায় ঝুলিয়ে রাখে।

তা ছাড়া, সমাজের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদেরকেও তারা ভয় পায়। তাদের শাসনতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এলে, দেশ পরিচালনার কার্য সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে কি না—সেই নিয়েও তারা ভীত থাকে।

কর্তা জবাবে বলেন—“সেইখানেই তো ভূত”। আসলে কর্তা বলতে চান, নতুন কিছু করার ব্যাপারে বাধা আসবেই।

কিন্তু চুপ করে থাকলে চলবে না। ভয় মানুষকে নতুন কিছু করতে বাধা দেয়। তাকে কাটিয়ে সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।

“মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে কথাটি বলেছে ? উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

উ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি ‘লিপিকা’ গ্রন্থ। তার মধ্যে অন্যতম রূপকধর্মী ছোটোগল্প ‘কর্তার ভূত’।

এই গল্প থেকে প্রশ্নোধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন দেবতা। বুড়োকর্তার মরণকালে দেশসুদ্ধ সবার করুণ আর্তিতে কর্তামশায় দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে প্রজাদের চিন্তায় কাতর হন।

তাঁর কাতরতা দেবতাকে নাড়িয়ে দেয় এবং তিনি কর্তাকে ভূত হয়ে অনন্তকাল দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকার আশীর্বাদ দেন। কর্তার ভূতের অন্তহীন সেই স্থায়িত্বের প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে।

দেবতার বরে বুড়ো কর্তার ‘ভূত’ হয়ে দেশবাসীর ঘাড়ে অনন্তকাল অবস্থান করার খবরে দেশের লোক খুব আশ্বস্ত হয়।

কারণ ভূত হয়ে ঘাড়ে চেপে থাকলে, তিনি স্থায়ীভাবেই থাকবেন। ভূতের মৃত্যু নেই। লেখক এখানেই কটাক্ষ করেছেন এদেশের মানুষের অপ্রগতিশীল চিন্তাধারা এবং শাস্ত্রবাদের প্রতি অন্ধ আস্থাকে। তাঁর বক্তব্য এদেশের মানুষ প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে কখনোই স্বাগত জানাবে না।

আদিম চলাটাকে তারা অন্ধভাবে অনুসরণ করে চলবে। কারণ এই চলা একদিকে যেমন ঝুঁকিবিহীন তেমনই অন্যদিকে আদিম আভিজাত্যপূর্ণ।

এই আভিজাত্যে তারা গর্ববোধ করে, আনন্দ পায়। নতুনত্বের কোনো ভাবনাই তাদের ভাবিত করে না।

কর্তার শাসন অর্থাৎ শাস্ত্রীয় বিধিনিষধ মেনে তারা নতুনকে অগ্রাহ্য করে। কর্তা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও,

কর্তার ভূতের মধ্যেই তারা কর্তাকে আবার খুঁজে নেয়। এই প্রয়াস অন্তহীন।

ইউরোপীয়দের মতো নতুন কিছু ভাবার অর্থাৎ বিচার-বিবেচনা করার ও যুক্তির আলোকে চিন্তা করার ক্ষমতা তাদের হয় না।

এইভাবেই ভূতের মতোই অযৌক্তিক নিয়ম শাসন কাল পরম্পরায় অমরত্ব লাভ করে।

“স্বভাবদোষে যারা নিজে ভাবতে যায় তারা খায় ভূতের কানমলা।”—‘ভূতের কানমলা’ খাওয়া ব্যাপারটা কী ? ‘নিজে ভাবতে’ যাওয়া মানুষদের সম্পর্কে গল্পকারের এরকম উক্তির কারণ কী ?

উ. ‘ভূতের কানমলা’ কথার অর্থ হল অবাধ্যতার শাস্তি। ভূতগ্রস্ত দেশে অর্থাৎ, সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলাই রীতি।

রক্ষণশীলরা যুক্তিবাদ পছন্দ করেন না, প্রশ্নের সম্মুখীন হলে ক্ষমতার প্রাবল্যে তাকে দাবিয়ে রাখতে সচেষ্ট হন।

আর প্রশ্নকারীদের শাস্তি প্রদান করতে সচেষ্ট হন। প্রচলিত চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা এলে এরা সহ্য করতে পারেন না।

কঠোর হাতে প্রতিবাদীকে দমন করেন। রক্ষণশীলদের এই কঠোর মনোবৃত্তিকেই লেখক ‘ভূতের কানমলা’ বলেছেন।

‘স্বভাবদোষে যারা নিজে ভাবতে যায়’—তারা হল আসলে দেশের চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী, প্রকৃত মানবপ্রেমিক।

এরাই দেশের নিপীড়িত জনসাধারণকে যুক্তির আলোকে আলোকিত করে দেশের প্রাচীন সংস্কার, রীতি, নিয়ম থেকে বের করে আনতে চাইছে।

কিন্তু রক্ষণশীল শাসকশ্রেণি কখনও প্রচলিত ধ্যানধারণার বদল চায় না। সংস্কার, নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটলে তাদের ক্ষমতার অবলুপ্তি ঘটবে।

ফলে মৌলিক চিন্তার অধিকারী এইসব চিন্তাশীল মানুষদেরকে তথাকথিত শাসকরা সহ্য করতে পারে না।

তাদের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে নিজেদের অধীনস্থ রাখতে চায়। আসলে যুক্তিবাদী, উদারমনা, জ্ঞানপিপাসু,

সমাজসেবক মানবতাবাদীরাই চিরকাল শাসকশ্রেণির মাথাব্যথার কারণ হয় বলেই, তারা শাস্তির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে দমন করে রাখে।

আর এই কারণেই গল্পকার আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

“শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।”—কার, কোন্ কথায়, কেন ‘আদিম আভিজাত্য’ অনুভূত হয় ? ‘আদিম আভিজাত্য’ ব্যাপারটি কী ?

উ. দেশের তত্ত্বজ্ঞানীদের মতে অদৃষ্টের চালে চোখবুজে চলাই বিশ্বের আদিমতম চলা। এর মাধ্যমেই জাতির আবহমানতা রক্ষা পায়।

তাঁদের এই কথার মাধ্যমে ভূতগ্রস্ত দেশ আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। তত্ত্বজ্ঞানীদের বলা কথার মধ্যে আমরা একটি রূপকার্থ খুঁজে পাই।

আর এখানেই রবীন্দ্র-ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা বলতে পারি—আমাদের সর্বাঙ্গসুন্দর প্রাচীন সভ্যতার পঞ্চত্বপ্রাপ্তির পর

এখন যা বর্তমানে আছে তা তারই ভূত বা প্রেতযোনি মাত্র। এর মাথা নেই বলে ধর্মতন্ত্ররূপ সংস্কার, লোকাচার তথা মৌল ভাবনার কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতাও নেই,

মানবিক কল্যাণচেতনাও নেই। লোকসাধারণ প্রশ্নহীনভাবে শাস্ত্রনির্দেশ ও শাস্ত্রোল্লিখিত মানবকল্যাণমুখী কর্ম করছে।

এই কারণেই রক্ষণশীল বিধানের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধাপড়া যুক্তিহীন, বিবেচনাহীন মানুষগুলি বহু প্রাচীন ঐতিহ্যানুসরণ করে চলেছে ভেবে তারা

‘আদিম আভিজাত্য’ অনুভব করে।

‘আদিম আভিজাত্য’ কথার সাধারণ অর্থ হল— অতি প্রাচীন সনাতন কৌলীন্যবোধ বা বংশমর্যাদা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এই বোধ থাকে।

ভূতগ্রস্ত দেশের মানুষ তত্ত্বজ্ঞানীদের বলা কথার মাধ্যমে নিজেদের অতীত ঐতিহ্যের মর্যাদা অনুভব করে এবং তা পালন করে চলাকেই পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করে।

তার প্রায়জেন বা প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ভাবে না। ভাবে—তারাই জগতের সবচেয়ে পুরোনো, সবচেয়ে আদিমতম মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিত্ব।

নিজেদের বংশকৌলীন্যের প্রাচীনত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে গিয়েই রচনায় ‘আদিম আভিজাত্য’ ব্যাপারটি বলা হয়েছে।

Leave a Reply