- যাকাত কার উপর ওয়াজিব : تجب الزكاة على من
- যাকাত ফরজ হবার সময় ও শর্ত : قوله الزكاة واجبة الخ
- পরিপূর্ণ মালিক হওয়া : قوله ملكا تاما
- যাকাতের জন্য নিয়ত শর্ত : قوله إلا بنية مقارنة الخ
- কোন কোন বস্তুর উপর যাকাত ফরজ নয় : قوله وليس في دور السكني الخ
- উটের যাকাতের অধ্যায় باب زكاة الإبل
- উটের যাকাতের আলোচনা প্রথমে আনার কারণ : قوله باب زكاة الإبل
- সায়িমা বা বিরচণশীল প্রাণী : قوله فإذا بلغت خمسا سائمة الخ
- বিনতে মাখায, বিনতে লাবুন, হিক্কা ও জায‘আর পরিচয় : مقدمة عن بنت مخاض وبنت لبون وحقة والزير
- বিনতে মাখায : بنت مخايا
- বিনতে লাবৃন : بنت لابران
- হিক্কা : حازوق
- জায‘আ : جاية
- ইস্তেনাফের বর্ণনা : وصف الاستقالة
- বুখতী উটের পরিচয় : هوية الجمل البختي
- গরুর যাকাতের অধ্যায় باب زكاة البقر
- তাবী ও মুসিন-এর পরিচয় :
- চল্লিশটির উপর জাকাত নিয়ে মতান্তর :
- যাকাতের পরিমাণ পরিবর্তিত হবার বর্ণনা :
- যাকাতের বেলায় গরু ও মহিষ এক সমান :
- ছাগলের যাকাতের অধ্যায় باب صدقة الغنم
- ছাগলের যাকাতের নিসাবের বর্ণনা :
- ঘোড়ার যাকাতের অধ্যায় باب زكاة الخيل
- ঘোড়ার যাকাতের ব্যাপারে ইমামদের মতভেদ :
- গাধা ও খচ্চরের হুকুম :
- উট, ছাগল ও গরু শাবকের যাকাতের হুকুম :
- যাকাতে মালের বিপরীত মূল্য দেওয়া জায়েজ :
- কাজে নিয়োজিত পশুর যাকাত নেই :
- যাকাত গ্রহণের পদ্ধতি :
- লাভকৃত সম্পদের যাকাত :
- মাল ধ্বংস হওয়া অবস্থায় যাকাতের বিধান :
- পূর্বে যাকাত দেওয়ার বিধান :
- রৌপ্যের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة الفضة
- রৌপ্যের যাকাত :
- দৃশত দিরহামের বেশি হলে তার হুকুম :
- রৌপ্যের মুদ্রার সাথে অন্য বস্তু মিশ্রিত থাকলে তার হুকুম :
- স্বর্ণের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة الذهب
- স্বর্ণের নিসাব ও উহার যাকাত :
- বিশ মিছকালের অতিরিক্তের যাকাত সম্পর্কে ওলামাদের মতান্তর :
- আসবাবপত্রের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة العروض
- আসবাবপত্রের যাকাত :
- মালের মূল্য নির্ধারণে ইমামদের মতভেদ :
- স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্য একত্র করণের হুকুম :
- ফসল ও ফলের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة الزروع والثمار
- ওপর সম্পর্কে মতভেদ :
- কাঠ, বাঁশ ও ঘাষের ওশৱ নেই :
- পাঁচ ওসাকের হিসাব :
- বিশ ভাগের এক ভাগ দেওয়ার বিধান :
- ওসাকের মূল্যমান ধরার ব্যাপারে ওলামাদের মতান্তর :
- মধুর ওশর সম্পর্কীয় মাসআলা :
- খারাজী ভূমির পরিচয় :
- যাকাত কাকে দেওয়া জায়েজ আর কাকে দেওয়া জায়েজ নয় সে সম্পর্কীয় অধ্যায় باب من يجوز دفع الصدقة إليه ومن لا يجوز
- মুয়াল্লাফাতে কুবের পরিচয় ও বিধান :
- যাকাত আদায়কারীর বিধান :
- গোলাম আযাদ :
- প্রত্যেক খাতে দেওয়ার বিধান :
- অমুসলিমদের যাকাত না দেওয়ার বিধান :
- যাকাতের সম্পদে মালিক বানানোর শর্ত :
- পিতা ও পুত্রকে যাকাত দেওয়ার বিধান :
- স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দেওয়ার বিধান :
- বনী হাশিমকে না দেওয়ার কারণ :
- যাকাতের খাত ছাড়া অন্য খাতে যাকাত দিয়ে ফেললে তার বিধান :
- এক স্থান হতে অন্যত্র যাকাত স্থানান্তরের বিধান :
যাকাত কার উপর ওয়াজিব : تجب الزكاة على من
যাকাত এমন এক ব্যক্তির উপর ফরজ যে স্বাধীন, মুসলমান, বালেগ এবং জ্ঞানসম্পন্ন, যখন সে পূর্ণনিসাব পরিমাণ সম্পদের পরিপূর্ণ মালিক হবে
এবং সে সম্পদের উপর এক বৎসর সময় অতিবাহিত হয়। আর জাবালেগ, পাগল এবং মুকাতার গোলামের উপর যাকাত ফরজ নয়।
যার সম্পদ পরিমাণ ঋণ আছে তার উপর যাকাত রজ নয়, আর যদি তার সম্পদ ঋণ হতে অধিক হয় তাহলে অতিরিক্ত সম্পদের যাকাত দেবে
যদি তা নিসাব পরিমাণ র। বসবাসের ঘরসমূহে, শরীরের কাপড়ে, গৃহের আসবাবপত্রে, আরোহণের জানোয়ারসমূহে, খিদমতে নিয়োজিত
বসসমূহে আর ব্যবহারের অস্ত্রসমূহে কোন যাকাত নেই। যাকাত আদায় করবার সময় অথবা মূল সম্পদ হতে ব্রাজিব যাকাতের পরিমাণ সম্পদ
পৃথক করবার সময় নিয়ত না করলে যাকাত আদায় জায়েজ হবে না। আর যে ক্তি নিয়ত ছাড়া সমস্ত সম্পদ সদকা করে দিল তার উপর যাকাতের ফরজ রহিত হয়ে যাবে।
যাকাত ফরজ হবার সময় ও শর্ত : قوله الزكاة واجبة الخ
যাকাত ইসলামি পঞ্চ শুল্কের অন্যতম একটি তত্ত্ব। ঈমান ও সালাতের পরেই যাকাতের বিধান। তাই মুসাল্লফ (র.) সালাতের আলোচনা শেষ করার
পর যাকাতের আলোচনা করেছেন। এখানে ওয়াজিব অর্থ— ফরজ। দ্বিতীয় হিজরিতে ঘানার হবার পূর্বে যাকাত ফরজ হয়েছে। যাকাত ফরজ
হবার ৮টি শর্ত রয়েছে। পাঁচটি যাকাত দাতার জন্য, যথা— (১) স্বাধীন হওয়া, (২) মুসলমান হওয়া, (৩) বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া,
(৪) আকেল বা জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া, (৫) নিসাব গ্রাস করে করে নেয় এমন ঋণী না হওয়া।
আর তিনটি শর্ত হলো মালের জন্য যথা – (১) সম্পদ নিসাব পরিমাণ হওয়া, (২) উহার উপর পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত হওয়া এবং
(৩) বিচরণশীল পশু বা ব্যবসায়ের মাল হওয়া।
পরিপূর্ণ মালিক হওয়া : قوله ملكا تاما
যাকাত ফরজ হবার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের পরিপূর্ণ মালিক হওয়া আবশ্যক। যে সম্পদের উপর মালিকানা সাব্যস্ত হয়নি তার উপর
যাকাত ফরজ নয় । আর ঋণী ও মুকাতাব দাসের নিকট যে সম্পদ আছে তার উপর যাকাত ফরজ নয়। কননা,
ঋণী ও মুকাতাব উহার মূল সত্তার অধিকারী নয় ।
যাকাতের জন্য নিয়ত শর্ত : قوله إلا بنية مقارنة الخ
যাকাত ইবাদত হবার কারণে অপরাপর ইবাদতের ন্যায় এতেও নিয়ত শর্ত। এ নিয়ত দেওয়ার সময় অথবা যাকাতের সম্পদ অন্য মাল হতে
পৃথক করার সময় পাওয়া যাওয়া আবশ্যক, অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। যদি সমস্ত সম্পদই দান করে দেয়, তবে নিয়ত ছাড়াই তার ফরয
আদায় হয়ে যাবে।
কোন কোন বস্তুর উপর যাকাত ফরজ নয় : قوله وليس في دور السكني الخ
থাকার ঘর, পরিধানের বস্ত্র, গৃহের আসবাবপত্র, আরোহণের জানো খিদমতের গোলাম এবং ব্যবহারের অস্ত্রসমূহে কোনো যাকাত নেই।
উটের যাকাতের অধ্যায় باب زكاة الإبل
উট পাঁচটির কম হলে যাকাত দিতে হয় না। অতএব, যখন চারণ ভূমিতে বিচরণশীল উট পাঁচটি হয় এবং উহার উপর এক বৎসর অতিবাহিত হয়,
তখন নয়টি পর্যন্ত একটি ছাগল যাকাত দিতে হবে; যখন দশটি হবে তখন চৌদ্দটি আর পর্যন্ত দু’টি বকরি দিতে হবে; তারপর যখন পনেরটি হবে
তখন উনিশটি পর্যন্ত তিনটি বকরি দিতে হবে; এরপর যখন বিশটি হবে তখন চব্বিশটি পর্যন্ত চারটি ছাগল, আর যখন পঁচিশটি হবে তখন
পঁয়ত্রিশটি পর্যন্ত একটি বিনতে মাখাজ দিতে হবে; তারপর যখন ছয়ত্রিশটি হবে তখন পঁয়তাল্লিশটি পর্যন্ত একটি বিনতে লাবূন; আর যখন
ছয়চল্লিশটি হবে তখন ষাটটি পর্যন্ত নায়ার, একটি হিক্কা দিতে হবে; এরপর যখন একষট্টিটি হবে তখন পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি জায’আ দিতে হবে।
উটের যাকাতের আলোচনা প্রথমে আনার কারণ : قوله باب زكاة الإبل
মহানবী যাকাত আদায়কারীদের নিকট যে পত্র প্রেরণ করেছিলেন তার মধ্যে সর্ব প্রথম বিচরণশীল জানোয়ারের কথা উল্লেখ ছিল। আর সায়িমা
তথা বিচরণশীল জানোয়ারের মধ্যে আরবদের নিকট উট ছিল অতি পরিচিত । তাই গ্রন্থকার সর্বপ্রথম অন্যান্য সায়িমা
জানোয়ারের পূর্বে উটের যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
সায়িমা বা বিরচণশীল প্রাণী : قوله فإذا بلغت خمسا سائمة الخ
বলতে সেসব প্রাণীকে বলে, যেগুলো মালিকের শ্রম ছাড়া সরকারি বিচরণ ভূমিতে বছরের অধিকাংশ সময় ঘাস খেয়ে থাকে। এ সব পশু মালিক
দুধ ও গোশ্ত খাওয়ার জন্য প্রতিপালন করে থাকে। আর যেসব প্রাণী হালচাষ বা বোঝা বহনের জন্য প্রতিপালন করা হয় সেগুলোতে যাকাত দিতে
হয় না। আর লো ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিক্রি করার জন্য পালা হয়, সেগুলোর উপর ব্যবসায়ের মাল হিসেবে যাকাত ফরজ হবে।
বিনতে মাখায, বিনতে লাবুন, হিক্কা ও জায‘আর পরিচয় : مقدمة عن بنت مخاض وبنت لبون وحقة والزير
বিনতে মাখায : بنت مخايا মাখায শব্দের অর্থ হলো গর্ভবতী। উট শাবকের বয়স এক বৎসর শেষ হবার পর স্বভাবত উস্ত্রী গর্ভবতী হয়,
তাই যার বয়স এক বৎসর পূর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বৎসরে পদার্পণ করেছে তাকে বিনতে মাখায় বলা হয়।
বিনতে লাবৃন : بنت لابران দুই বৎসর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বৎসরে পদার্পণ করলে সেই উটের বাচ্চাকে বিনতে লাবূন বলে। যেহেতু লাবূন অর্থ দুধওয়ালী,
আর এ সময়ে দুধ প্রচুর হয় বলে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
হিক্কা : حازوق হিক্কা শব্দটি মুস্তাহিক্কার অর্থে ব্যবহৃত তথা যোগ্য হওয়া। আর শাবকের বয়স যখন তিন বৎসর হয় তখন বোঝা বহন করার যোগ্য হয়,
তাই তিন বৎসর পূর্ণ হয়ে চতুর্থ বৎসরে পড়লে সে উটকে হিক্কা বলা হয়।
জায‘আ : جاية জায’আ অর্থ হলো, যার দাঁত পড়ে যাওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। আর শাবকের বয়স চার বৎসর অতিবাহিত হবার পর দুধের দাঁত
পড়তে শুরু করে, তাই চার বৎসর পূর্ণ হয়ে পাঁচ বৎসরে পড়লে জাঘাআ বলা হয়। আর যখন ছিয়াত্তরটি হবে তখন নব্বই পর্যন্ত দু’টি বিনতে লাবুন,
তারপর যখন একানব্বইটি হবে তখন একশত বিশ্ব পর্যন্ত দু’টি হিক্কা দিতে হবে, এরপর যাকাতের হিসাব নতুনভাবে শুরু করা হবে, তাই একশত
বিশটির পরে পাঁচটি পর্যন্ত দু’টি হিন্তার সাথে একটি ছাগল, দশটির মধ্যে দু’টি ছাগল, পনেরটিতে তিনটি গেল, বিশটিতে চারটি ছাগল এবং পঁচিশটি
হলে তথা একশত পঁয়তাল্লিশটি হলে একশত পঞ্চাশ পর্যন্ত দুই হিক্কার সাথে একটি বিনতে মাখাজ দিতে হবে; এরপর একশত পঞ্চাশটি হলে তিনটি
হিক্কা দিতে হবে। তারপর নতুনভাবে যাকাতের হিসাব শুরু করা হবে। পাঁচটিতে একটি ছাগল, দশটিতে দুটি ছাগল, পনেরটিতে তিনটি ছাগল,
বিশটিতে চারটি ছাগল, পঁচিশটিতে একটি বিনতে মাথায় এবং ছয়ত্রিশটিতে তিনটি হিতার সাথে একটি বিনতে লাবূন দিতে হবে; তারপর যখন একশত
ছিয়ানব্বইটি হবে তখন দুইশত পর্যন্ত চারটি হিক্কা দেবে। তারপর ফরজ যাকাতের হিসাব সর্বদা নতুনভাবে শুরু করা হবে, যেমনিভাবে একশত
পঞ্চাশটির পর পঞ্চাশটিতে হিসাব করা হয়। যাকাতের জন্য হারবি ও বুখতী উট একই বরাবর।
ইস্তেনাফের বর্ণনা : وصف الاستقالة
উটের যাকাতের মধ্যে তিনটি ইতিনাফ রয়েছে। সেগুলো হলো—
১. প্রথমটি হলো, ১২০ -এর পরে ১৪৫ পর্যন্ত প্রতি পাঁচে দুই হিক্কার সাথে এক বকরি, দশে দুই বকরি, পনেরতে তিন করি, বিশে চার বকরি এবং ২৫
(১৪৫) হতে ১৪৯ পর্যন্ত দুই হিক্কার সাথে একটি বিনতে মাথায় দিতে হবে, ১৫০ হলে তিন টিকা দিতে হবে।
২. দ্বিতীয় ইসৃতিনাফ হলো, ১৫০ হতে ১৯৫ পর্যন্ত প্রতি পাঁচের হিসাবে ধরতে হবে তথা ৫টি (১৫৫) হলে তিন হিক্কার সাথে একটি ছাগল, ১০টি (১৬০)
হলে দু’টি ছাগল, ১৫টি (১৬৫) হলে তিনটি ছাগল, ২০টি হলে (১৭০) চার ছাগল, ২৫টি (১৭৫) হলে একটি বিনতে মাথায়, ৩৬টি (১৮৬) হলে একটি
বিনতে লাবুন, এরপর ১৯৬টি হতে ২০০ পর্যন্ত ৪টি হিক্কা দিতে হবে।
৩. তৃতীয় ইসৃতিনাফ হলো, তৃতীয় ইসৃতিনাফটি দ্বিতীয় ইসৃতিনাফেরই মতো প্রথমটির মতো নয়। এভাবে ইসতিনাফ তেই থাকবে।
বুখতী উটের পরিচয় : هوية الجمل البختي
বুখতি রুখতে নসর নামক মহা দুর্ধর্ষ বাদশাহের প্রতি যুক্ত। আর আরবি ও আজমি উটের মিলনে যে উট জন্ম নেয় তাকে বুখতী উট বলা হয়। কেননা,
এ ব্যবস্থাটি সর্ব যম মুখতে নসর বাদশাহ-ই করেছিলেন বিধায় এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। যাকাত ওয়াজিব হওয়া ও আদায় করার ব্যাপারে বুখতী
ও আরবিউট সমান, কিন্তু শপথের ব্যাপারে সমান নয়।
গরুর যাকাতের অধ্যায় باب زكاة البقر
ত্রিশটি গরুর কমের মধ্যে কোনো যাকাত নেই। অতঃপর যখন বিচরণশীল ত্রিশটি শুরু হয়ে তার উপর এক বৎসর অতিবাহিত হয়, তখন এদের মধ্যে
একটি تبيع (তাবী’) অথবা تبيعة (তাবী আহ) ওয়াজিব হবে। আর চল্লিশটি হলে একটি مسن (মুসিন) অথবা مسنة (মুসিন্নাহ) ওয়াজিব হবে; অতঃপর
চল্লিশের উপর বৃদ্ধি পেলে ঘাট পর্যন্ত অতিরিক্তের পরিমাণ হিসেবে আবশ্যক হবে। কাজেই এটিতে (চল্লিশের উপর একটি বেশি হলে) এক মুসিন্নার
চল্লিশের একভাগ, আর দু’টিতে এক মুসিন্নার চল্লিশের দু’ভাগ, আর ভিনটিতে এক মুসিল্লার চল্লিশ ভাগের তিনভাগ ওয়াজিব হবে।
আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র.) বলেন, চল্লিশের পর ষাট না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্তের উপর কোনো যাকাত নেই। অতএব,
ষাটটি হলে দুই تبيعة অথবা تبيع ওয়াজিব হবে, আর সত্তরটিতে একটি মুসিন্নাহ এবং একটি তাবী’আহ ওয়াজিব হবে, আশিটিতে দু’টি মুসিন্নাহএবং
নব্বইটিতে তিনটি তাবী আহ; আর একশতটিতে দু’টি তাবী আহ এবং একটি মুসিন্নাহ ওয়াজিব হবে। আর এভাবেই প্রত্যেক দশে তাবী’আহ হতে
মুসিল্লাহ এর দিকে যাকাতের ফরজ পরিবর্তিত হতে থাকবে। যাকাতের ব্যাপারে গরু ও মহিষ এক বরাবর।
তাবী ও মুসিন-এর পরিচয় :قوله تبيع أو تبيعة الخ :
গরুর নর বাচ্চা পূর্ণ এক বৎসর বয়স হলে (তাবী’) বলে, আর পূর্ণ এক বৎসর বয়স্ক মাদী বাচ্চাকে নি (তাবী’আহ) বলে। এভাবে যে নর বাচ্চা পূর্ণ দুই
বৎসর বয়স হয়, তাকে (মুসিন) বলে, আর যে মাদী বাচ্চা পূর্ণ দুই বৎসর বয়স হয়, তাকে (মুসিন্নাহ) বলে।
চল্লিশটির উপর জাকাত নিয়ে মতান্তর :
قوله يتغير الفرض الخ চল্লিশ হতে ষাটটির মধ্যকার যাকাত নিয়ে আবূ হানীফা ও সাহেবাইনের মধ্যে মতান্তর পরিলক্ষিত হয় –
ইমাম সাহেবের মতে, চল্লিশের উপর একটি হলে মুসিন্নার চল্লিশের একভাগ, দু’টি হলে দুভাগ, তিনটি হলে তিনভাগ, আর চারটি হলে চারভাগ, এ
হিসাবে যাকাত দিতে হবে। পক্ষান্তরে সাহেবাইনের নিকট চল্লিশের উপর ষাট পর্যন্ত কোনো যাকাত দিতে হবে না।
সাহেবাইনের মতের উপরই ফতোয়া।
যাকাতের পরিমাণ পরিবর্তিত হবার বর্ণনা :
قوله يتغير الفرض الخ একশতের পর প্রতি ১০টিতে তাবী’ হতে মুসিন্নায় পরিবর্তিত হবে তথা একশত দশটি হলে এক তাবী’ ও দুই মুসিন্নাহ, একশত বিশটি
হলে তিনটি মুসিল্লাহ অথবা চারটি তাবী’ ওয়াজিব হবে; একশত ত্রিশটিতে তিনটি মুসিন্নাহ এবং একটি তাবী’ ওয়াজিব হবে; আর একশত চল্লিশটিতে
চারটি মুসিন্নাহ ওয়াজিব হবে এবং একশত ষাটাটিতে পাঁচটি মুসিন্নাহ ওয়াজিব হবে। এভাবে প্রত্যেক দশে বাড়তে থাকবে।
যাকাতের বেলায় গরু ও মহিষ এক সমান :
قوله والجواميس والبقرة سواء যাকাত গরুতে যে হিসাবে দেওয়া হয় মহিষে অনুরূপ দেওয়া হবে। যাকাত ও কুরবানিতে গরু এবং মহিষের হুকুম একই,
কিন্তু শপথের বেলায় এক নয়; যেমন- গরুর গোশত খাবে না বলে শপথ করার পর মহিষের গোশত খেলে শপথ ভঙ্গকারী হবে না।
ছাগলের যাকাতের অধ্যায় باب صدقة الغنم
চল্লিশটি ছাগলের কমের মধ্যে কোনো যাকাত নেই। অতঃপর যখন বিচরণশীল চল্লিশটি ছাগল হবে এবং তার উপর এক বৎসর অতিবাহিত হবে তখন
এগুলোর উপর একশত বিশ পর্যন্ত একটি ছাগল ওয়াজিব। হবে; তারপর যখন একটি বেড়ে (তথা ১২১ টি হয়ে) যাবে, তখন তাতে দু’শত পর্যন্ত দু’টি
বকরি আবশ্যক হবে, এরপর যখন একটি বেড়ে যাবে, (২০১টি হবে) তখন তিনটি বকরি ওয়াজিব হবে; তারপর যখন চারশতে পৌঁছে যাবে তখন
চারটি ছাগল ওয়াজিব হবে। এরপর প্রতি শতে একটি করে ছাগল ওয়াজিব হবে। আর দুম্বা ও ছাগল যাকাতের ব্যাপারে এক সমান।
ছাগলের যাকাতের নিসাবের বর্ণনা :
قوله فإذا كانت أربـعـيـن شـاه الـخ : ছাগলের নিসাব হলো চল্লিশটি, এর কমের উপর যাকাত ফরজ হয় না। ৪০ হতে ১২০ পর্যন্ত একটি, ১২১ হতে ২০০ পর্যন্ত
দু’টি, ২০১ হতে ৩৯৯ পর্যন্ত তিনটি, আর ৪০০ হলে ৪টি ছাগল ওয়াজিব হবে। এরপর প্রত্যেক শতে একটি করে বাড়তে থাকবে।
ঘোড়ার যাকাতের অধ্যায় باب زكاة الخيل
যখন কারো নিকট নর ও মাদী সায়িমা ঘোড়া থাকে আর উহার উপর এক বৎসর অতিক্রম তখন উহাদের মালিকের ইচ্ছাধীন থাকবে, সে ইচ্ছা করলে
প্রতি ঘোড়ার যাকাত এক দিনার দেবে, অথবা উহার মূল্য করে নির্ধারণ করে প্রতি দুশত দিরহামে পাঁচ দিরহাম করে যাকাত দেবে। ইমাম আবূ হানীফা
(র.)-এর নিকট শুধু নর ঘোড়ার মধ্যে যাকাত নেই। ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র.) বলেন, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার উপর কোনো যাকাত নেই, কিন্তু
ব্যবসায়ের জন্য হলে যাকাত আছে। ইমাম আবূ হানীফা (র.) ও মুহাম্মদ (র.)-এর মতে, উটের বাচ্চা, ছাগলের ছানা ও গরুর বাছুরের সাথে বড়
জানোয়ার না থাকলে যাকাত ওয়াজিব নয়। আর ইমাম আবূ ইউসুফ (র.) বলেন, উহাদের মধ্যে একটি বাচ্চা ওয়াজিব হবে।
ঘোড়ার যাকাতের ব্যাপারে ইমামদের মতভেদ :
قوله باب زكاة الخيل : সাহেবাইনের নিকট ঘোড়ার মধ্যে যাকাত নেই। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে মুসলমানদের গোলাম ও ঘোড়ার কোনো যাকাত
নেই। ইমাম শাফেী, মালিক ও আহমদ (র.)-এরও এই মত, তবে ব্যবসার ঘোড়ার উপর সর্বসম্মতিক্রমে যাকাত ওয়াজিব।
ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর নিকট বিচরণশীল ঘোড়ার উপর যাকাত রয়েছে, তবে শর্ত হলো নর ও মাদী ঘোড়া এর সাথে থাকতে হবে। আবার শুধু
মাদীর উপরও যাকাত ওয়াজিব হবে। তবে সাহেবাইনের কথার উপর ফতোয়া বলে ইমাম তাহাবীসহ অনেকে উল্লেখ করেছেন।
গাধা ও খচ্চরের হুকুম :
قوله ولا شىء فى البغال الخ : খচ্চর ও গাধার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়, তবে ব্যবসার জন্য হলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। কেননা, মহানবী (স:)
বলেছেন যে, খচ্চর এবং গাধার ব্যাপারে আমার উপর কোনো কিছু নাজিল হয়নি।
উট, ছাগল ও গরু শাবকের যাকাতের হুকুম :
فصلان : قوله ليس فى الفصلان الخ এই শব্দটি فصيل -এর বহুবচন, অর্থ হলো- উট শাবক। حملان টি حمل -এর বহুবচন; এর অর্থ ছাগল ছানা। আর عجاجيل টি
عجل এর বহুবচন; অর্থ হলো গরুর বাছুর। এ সব বড় জানোয়ারের সাথে থাকলে যাকাত ওয়াজিব হবে, আর পৃথক থাকলে ইমাম আবূ হানীফা ও
মুহাম্মদ (র.)-এর মতে, যাকাত ওয়াজিব হবে । ইমাম আবূ ইউসুফ (র.)-এর মতে, সঞ্চল বাচ্চার পক্ষ হতে একটি বাচ্চা যাকাত হিসেবে দিতে হবে।
আর যার উপর মুসিন দেওয়া ওয়াজিব হয়েছে অথচ মুসিন (তার নিকট) পাওয়া যায়নি, তাহলে যাকাত আদায়কারী উহ্য হতে উত্তম জানোয়ার গ্রহণ
করবে এবং অতিরিক্ত মূল্য মালিককে ফেরত দিয়ে দেবে, অথবা তা হতে নিকৃষ্ট জানোয়ার আদায় করে অবশিষ্ট মূল্য মালিক হতে গ্রহণ করবে।
যাকাতের মধ্যে জানোয়ারের পরিবর্তে মূল্য দেওয়া জায়েজ আছে। কৃষি কাজের জানোয়ার, বোঝা বহনকারী জানোয়ার ও মালিক যে সকল
জানোয়ারকে ঘাষ খাওয়ায় তাদের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। যাকাত আদায়কারী একেবারে উত্তম বা একেবারে নিকৃষ্ট মাল গ্রহণ করবে না; বরং
মধ্যম ধরনের মাল গ্রহণ করবে। যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিল আর বৎসরের মাঝখানে উহার সাথে একই প্রকারের কিছু সম্পদ
লাভ করল, তাহলে লাভকৃত মালকে তার পূর্ব মালের সাথে মিলিয়ে সম্পূর্ণ মালের যাকাত দেবে। আর সায়িমা সেসব জন্তুকে বলে, যেগুলো বছরের
অধিকাংশ সময় (সরকারি বিচরণ ভূমিতে) চরে বেড়ায়। যদি বৎসরের অর্ধেক বা ততোধিক সময় মালিক উহার খাবার যোগায়, তাহলে উহাদের
যাকাত দিতে হবে না। ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসুফ (র.)-এর মতে, নিসাবের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অতিরিক্তের ওপর ওয়াজিব হবে না।
ইমাম মুহাম্মদ ও যুফার (র.) বলেন, উভয়ের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। যাকাত ওয়াজিব হবার পর মাল ধ্বংস হয়ে গেলে যাকাত রহিত হয়ে যায়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বৎসর পূর্ণ হবার পূর্বে যাকাত প্রদান করলে জায়েজ হবে।
যাকাতে মালের বিপরীত মূল্য দেওয়া জায়েজ :
قوله ويجوز دفع القيمة الج : যে প্রাণী বা যে সম্পদ যাকাত বাবদ ওয়াজিব হয় উহার পরিবর্তে মূল্য দেওয়াও জায়েজ। কেননা, মালের দিক দিয়ে মূল্য ও
মূলবস্তু এক বরাবর। আর পবিত্র কুরআনে শর্তহীনভাবে বলা হয়েছে যে, اموالهم صدقة تطهر هم الخ جذ من এখানে যাকাত লওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাই যে
কোনোটি নেওয়া যেতে পারে।
কাজে নিয়োজিত পশুর যাকাত নেই :
عوامل : قوله وليس فى العوامل الخ শব্দটি عاملة-এর বহুবচন; অর্থ হলো কর্মকার। যে পশু দ্বারা
ক্ষেত-খামার বা পানি উঠানোর জন্য মালিক লালন-পালন করে থাকে, তাকে عاملهবলে।
حوامل টি এটি حاملة -এর বহুবচন; অর্থ হলো- বহনকারী।
যে জানোয়ার দ্বারা মালিক বোঝা বহন করায়, তাকে حاملة বলে। علوفة বলা হয় ঐ সব পশুকে যেগুলো মালিক নিজে খাদ্য
পানীয় দিয়ে লালন-পালন করে। এসব প্রাণীর উপর যাকাত ফরজ নয়।
যাকাত গ্রহণের পদ্ধতি :
قوله ولا ياخذ المصدق الخ : যাকাত আদায়কারী বেছে বেছে উৎকৃষ্ট সম্পদ গ্রহণ করবে না। কেননা, এতে মালিকের প্রতি জুলুম করা হয়। আর মহানবী
উৎকৃষ্ট মাল যাকাত হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আর নিকৃষ্ট বা নিম্নমানের সম্পদও গ্রহণ করবে না।
কেননা, এতে বাইতুল মালের ক্ষতি হয়।
লাভকৃত সম্পদের যাকাত :
قوله ومن كان له نصاب الخ : নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি যদি বসরের মধ্যখানে সে জাতীয় কিছু সম্পদ লাভ করে, তাহলে লাভকৃত সম্পদের বৎসর পূর্তি না হলেও যাকাত দিতে হবে, যেমন- কারো নিসাব পরিমাণ উট ছিল সে বছরের মাঝে আরো কিছু উট লাভ করল, তাহলে সবগুলোর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। আর যদি সে জাতীয় না হয়ে অন্য জাতীয় হয়, তাহলে লাভকৃতের উপর যাকাত আবশ্যক হবে না, যেমন— তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো উট কিন্তু সে লাভ করণ গরু।
মাল ধ্বংস হওয়া অবস্থায় যাকাতের বিধান :
قوله واذا هالك المال الخ : যাকাত ওয়াজিব হবার পর সম্পূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেলে তার যাকাত রহিত হয়ে যাবে। পুরো সম্পদ ধ্বংস না হয়ে যদি কিছু
ধ্বংস হয়, তবে যেটুকু ধ্বংস হবে তার যাকাত রহিত হয়ে যাবে আর যেটুকু থাকবে তার যাকাত দিতে হবে।
পূর্বে যাকাত দেওয়ার বিধান :
قوله قدم الزكوةالخ : নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বৎসর পূর্ণ হবার পূর্বেও যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে। এবং যাঁকাত দিলে তা আদায় হয়ে
যাবে, তবে নিসাব পূর্ণ হবার পূর্বে যাকাত দিয়ে নিসার পূর্ণ হলে পুনরায় দিতে হবে, পূর্বের যাকাত নফল হিসাবে গণ্য হবে।
রৌপ্যের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة الفضة
দুইশত দিরহামের কমে (রৌপ্যে) কোনো যাকাত নেই। আর যখন দুইশত দিরহাম হবে এবং উহার উপর এক বৎসর অতিবাহিত হবে, তখন উহাতে
পাঁচ দিরহাম ওয়াজিব হবে, এরপর চল্লিশ দিরহাম পৌঁছা পর্যন্ত অতিরিক্ত গুলোতে কোনো যাকাত নেই, অতঃপর চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম
ওয়াজিব হবে। এরপর ইমান আৰু হানীফা (র.)-এর মতে, প্রত্যেক চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম করে ওয়াজিব হবে, আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও
মুহাম্মদ (র.) বলেন, দৃশভ দিরহামের উপর যে পরিমাণ বেশি হয়, বেশির অনুযায়ী উহার উপরও যাকাত ওয়াজিব হবে। আর যদি রৌপ্যের মুদ্রাতে
রৌপ্যের ভাগ বেশি হয়, তাহলে তা রৌপ্যের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যদি তাতে খাদ্যের ভাগ বেশি হয়, তাহলে তা আসবাবপত্রের হুকুমের
অন্তর্ভুক্ত হবে এবং উহার মূল্য নিসাব পরিমাণ পৌঁছলে যাকাতের জন্য গণ্য করা হবে।
রৌপ্যের যাকাত :
قوله ليس فيما دون ماءتى درهم الخ : রৌপ্যের নিসাবের পরিমাণ হলো পাঁচ আওকিয়া। কেননা, রাসূল বলেছেন যে, পাঁচ আওকিয়ার কমে কোনো যাকাত
নেই। এক আওকিয়ার পরিমাণ হলো চল্লিশ দিরহাম। অতএব, পাঁচ আওকিয়ায় হবে দুইশত দিরহাম। ইংরেজি হিসাবে এক আওকিয়ায় সাড়ে দশ
তোলা। অতএৰ, পাঁচ আওকিয়া বা ২০০ দিরহামে হবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। কাজেই কারো নিকট ৫২ টু তোলা পরিমাণ রৌপ্য থাকলে এবং বৎসর পূর্ণ
হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসাবে যাকাত দিতে হবে।
দৃশত দিরহামের বেশি হলে তার হুকুম :
قوله ولا شيء في الزيادة الخ : ইমাম আবূ হানীফা (র.)-এর মতে, দৃশত দিরহামের উপরে ৪০ দিরহাম হওয়া পর্যন্ত কোনো যাকাত নেই। ২৪০ হলেই আরো
এক দিরহাম মোট ৬ দিরহাম ওয়াজিব হবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র.)-এর মতে, দুইশত দিরহামের উপর যে পরিমাণ বেশি হবে সে
অনুযায়ী যাকাত ওয়াজিব হবে তথা এক দিরহাম বেশি হলে ৫ দিরহাম ও এক দিরহামের চল্লিশ ভাগের একভাগ দেবে।
রৌপ্যের মুদ্রার সাথে অন্য বস্তু মিশ্রিত থাকলে তার হুকুম :
قوله وإن كان الغالب الخ : মুদ্রার মধ্যে যদি রৌপ্যের ভাগ বেশি হয়, তবে উহাকে রৌপ্য ধরতে হবে। এটা নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। আর যদি
রৌপ্যের ভাগ কম হয় এবং খাদ বেশি হয়, তাহলে উহাকে রৌপ্য না ধরে মাল হিসেবে গণ্য করা হবে এবং নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দেবে,
অন্যথায় যাকাত ওয়াজিব হবে না।
স্বর্ণের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة الذهب
বিশ মিছকালের কম পরিমাণ স্বর্ণে যাকাত আবশ্যক নয়। যখন কারো নিকট বিশ মিছকাল থাকে আর উহার উপর এক বৎসর অতিক্রম করে, তখন
উহাতে অর্ধ মিছকাল স্বর্ণ যাকাত দিতে হবে। এরপর প্রতি চার মিছকালে দুই কিরাত ওয়াজিব হবে। আর ইমাম আবূ হানীফা (র.)-এর মতে, চার
মিছকালের কম হলে যাকাত দিতে হয় না। ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র.) বলেন, বিশ মিছকালের বেশি যা হয় উহার যাকাত হিসাব অনুযায়ী
দিতে হবে। আর স্বর্ণ রৌপ্যের পাত, উহাদের অলঙ্কার এবং পাত্রের মধ্যে যাকাত ওয়াজিব হবে।
স্বর্ণের নিসাব ও উহার যাকাত :
قوله فاذا كانت عشرين مشقالا الخ : স্বর্ণের নিসাব হলো বিশ মিছকাল। বিশ মিছকালের কমে যাকাত ওয়াজিব হয় না। এক মিছকালের ওজন হলো, সাড়ে চার
মাশা এবং বারো মাশায় এক তোলা। অতএব, বিশ মিছকালের ওজন হলো সাড়ে সাত তোলা। উল্লেখ্য যে, তখনকার যুগে এক মিছকাল স্বর্ণের মূল্য
ছিল দশ দিরহাম। এ হিসাবে ২০ মিছকালের মূল্য ছিল ২০০ নিরহাম। এতে বুঝা গেল যে, স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত মূল্যমানের দিক থেকে এক সমান
ছিল। কাজেই এখন কেউ ৭ তোলা স্বর্ণের মালিক হয়ে এক বৎসর অতিক্রম করলে অর্থ মিছকাল যাকাত দিতে হবে।
কেননা, রাসুল বলেছেন — ومن كل عشرين مشقالا من ذهب نصف مشقال
বিশ মিছকালের অতিরিক্তের যাকাত সম্পর্কে ওলামাদের মতান্তর :
قوله وليس فيما دون الخ : ইমাম আবূ হানীফা (র.)-এর মতে, ২০ মিছকালের অতিরিক্ত চার মিছকাল না হওয়া পর্যন্ত সে অতিরিক্তের উপর কোনো
যাকাত দিতে হবে না, আর সাহেবাইনের মতে, বিশ মিছকালের উপর যাই হোক সে পরিমাণ অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে।
আসবাবপত্রের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة العروض
ব্যবসার আসবাবপত্রের যাকাত দেয়া ওয়াজিব, তা যে প্রকারের হোক না কেন; যখন উহার মূল্য অর্থ বা রৌপ্যের নিসাব পরিমাণ হয়। আসবাবপত্রকে
স্বর্ণ-রৌপ্য হতে যার সাথে মূল্যমান নির্ধারণ করলে ফকির মিসকিনের বেশি উপকার হয় উহার সাথে মূল্য নির্ধারণ করবে। ইমাম আবূ ইউসুফ (র.)
বলেন, যার (স্বর্ণ-রৌপ্য) দ্বারা সে উহা ক্রয় করেছে উহার দাম ধরবে। আর যদি মূল্য (স্বর্ণ-রৌপ্য) ছাড়া ক্রয় করে থাকে, তাহলে শহরে অধিক
প্রচলিত মুদ্রার দ্বারা মূল্যমান নির্ধারণ করবে। ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, সর্বাবস্থায়ই শহরে প্রচলিত মুদ্রা দ্বারা নির্ধারণ করবে।
আর যদি নিসাব বছরের প্রথম ও শেষে পরিপূর্ণ থাকে, তাহলে বছরের মাঝে নিসাব কমে গেলে তাতে যাকাত রহিত হবে না। আসবাবপত্রের মূল্য স্বর্ণ-
রৌপ্যের সাথে মিলানো হবে। এমনিভাবে স্বর্ণকে রৌপ্যের সাথে মূল্য করে। মিলানো হবে, যাতে নিসাব পূর্ণ হয়ে যায়। এটা ইমাম আবূ হানীফা (র.)-এর
মত, আর সাহেবাইন (র.) বলেন, স্বর্ণকে মূল্য ধরে রৌপ্যের সাথে মিলানো হবে না; বরং অংশ হিসাবে মিলানো হবে।
আসবাবপত্রের যাকাত :
قوله كائنة ما كانت الخ : ব্যবসার মাল যে ধরনেরই হোক না কেন উহা স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিসাব পরিমাণ মূল্যমানের সমমান হলে যাকাত ওয়াজিব হবে,
অর্থাৎ যে সকল মালে যাকাত নেই ঐ সব মালও যদি ব্যবসার নিমিত্তে হয়, তাহলে তাতেও যাকাত আবশ্যক হবে।
মালের মূল্য নির্ধারণে ইমামদের মতভেদ :
قوله يقوم بالنقد الغالب الخ : ইমাম আবু ইউসুফ (র.)-এর মতে, আসবাবপত্রকে স্বর্ণ বা রৌপ্যের যেটি যারা জন্য করেছে তার সাথে মিলিয়ে মূল্যমান নির্ধারণ
করবে। আর সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা ক্রয় করে থাকলে শহরে স্বর্ণ বা রৌপ্যের যেটির প্রচলন অধিক তার মূল্যমান নির্ধারণ করবে।
আর ইমাম মুহাম্মদ (র.)-এর মতে, সর্বাবস্থায় শহরে সর্বাধিক প্রচলিত (স্বর্গ বা রৌপ্যের) মুদ্রার মূল্যমান নির্ধারণ করতে হবে।
স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্য একত্র করণের হুকুম :
وكذلك يضم الذهب الخ : স্বর্ণ এবং রৌপ্যে পৃথক পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না হলে ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর মতে, স্বর্ণকে মূল্য নির্ধারণ করে রৌপ্যের
সাথে মিলিয়ে রৌপ্যের হিসাবে নিসাব স্থির করতে হবে। আর সাহেবাইনের মতে, অংশ হিসাবে নিসাব নির্ধারণ করবে, অর্থাৎ রৌপ্যের নিসাব অর্ধেক
এবং স্বর্ণের নিসাব অর্ধেক হলে এক নিসাব ধরে যাকাত দেবে, মূল্য ধরে একটাকে অপরটার সাথে মিলাবে না।
ফসল ও ফলের যাকাতের অধ্যায় باب زكوة الزروع والثمار
ইমাম আবূ হানীফা (র.) বলেন, জমিন যা উৎপন্ন করে কম হোক বা বেশি হোক এক দশমাংশ ওয়াজিব হবে; চাই উহা নদ-নদীর পানি দ্বারা সিঞ্চন
করা হোক বা আকাশের পানিতে উৎপন্ন করা হোক। কিন্তু কাঠ, বাঁশ এবং ঘাসে এক দশমাংশ ওয়াজিব নয়। আর সাহেবাইন (র.) বলেন, ‘ওশর’ শুধু
সে সব ফলের মধ্যে ওয়াজিব হবে যা (পূর্ণ বৎসর) বাকি থাকে এবং যখন পাঁচ ‘ওসাক’ পরিমাণ পর্যন্ত পৌঁছে। আর নবী কারীম (স:) -এর ‘সা’
অনুযায়ী এক ওসাকে ষাট ‘সা’। সাহেবাইনের নিকট তরকারির মধ্যে কোনো ‘ওশর’ নেই। ছোট বালতি, বড় বালতি বা পানি বহনকারী উদ্ভী দ্বারা যা সেচ
করা হয়েছে উহার মধ্যে উভয় মতানুসারে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেয়া ওয়াজিব। ইমাম আবূ ইউসুফ (র.) বলেন, যে সমস্ত বস্তু ‘ওসাক’ দ্বারা
ওজন করা হয় না, যথা- যাফরান, তুলা এগুলোতে দশ ভাগের একভাগ ওয়াজিব হবে, যখন উহার মূল্য এমন নিম্নমানের শস্যের পাঁচ ‘ওসাক’ পর্যন্ত
পৌঁছে যা ওসাক দ্বারা পরিমাপ করা হয়। আর ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, উৎপন্ন দ্রব্য যদি সে জাতীয় দ্রব্যের পরিমাপের সর্বোচ্চ পরিমাপের পাঁচটির
সমান হয়, তাহলে ‘ওশর’ ওয়াজিব হবে। অতএব তুলাতে পাঁচ বোঝা এবং জাফরানে পাঁচ সের ধর্তব্য হবে। আর মধু বেশি হোক বা কম হোক যদি তা
‘ওশরী’ জমিন হতে লওয়া হয়, তাহলে ওর ওয়াজিব হবে। ইমাম আবূ ইউসুফ (র.) বলেন, দশ মশক পর্যন্ত না পৌঁছলে ‘ওশর’ ওয়াজিব হবে না। আর
ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, পাঁচ ‘ফরকের’ কমে মধুতে ‘ওশর’ ওয়াজিব হয় না। আর এক হাতকে ইরাকী (৩৬) ছয়ত্রিশ রিতিল। খারাজী
(তথা যে জমিনে খাজনা দেওয়া হয়) জমিনের উৎপন্ন ফসলের ‘ওশর’ নেই।
ওপর সম্পর্কে মতভেদ :
قوله قال أبو حنيفة رحمه الله الخ : ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর মতে, উৎপন্ন ফসলের মধ্যে প্রশর আজিব, কম হোক আর বেশি হোক বৃষ্টির পানিতে হোক
বা নদ-নদীর পানিতে হোক। আর সাহেবাটিনের মতে, ওশর ওয়াজিব হবার জন্য পাঁচ ওসাক পরিমাণ হওয়া এবং বৎসরকাল গৃহে রাখার মতো ফসল
হওয়া আবশ্যক।
কাঠ, বাঁশ ও ঘাষের ওশৱ নেই :
قوله الا الحطب والقصب والحشيش : যেগুলো স্বাভাবিক ভাবে উৎপন্ন হয়- রোপণ করতে হয় না, সেগুলোতে ওপর ওয়াজিব হয় না, যেমন- কাঠ, বাঁশ ও ঘাস ইত্যাদি।
পাঁচ ওসাকের হিসাব :
قوله خمسة أوسق الخ : পাঁচ প্রসাকের কম হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। প্রতি ওসাকে হলো ৬০ ‘সা’, আর প্রতি ‘সা’ তে হলো সাড়ে তিনসের। কাজেই প্রতি
ওনাকে হবে ৫ মণ ১০ সের এবং ৫ ওসাকে হবে ২৬ মণ ১০ সের। অন্য বর্ণনায় ২৮ মণ ৩৬ সের ৪ ছটাক হয়।
বিশ ভাগের এক ভাগ দেওয়ার বিধান :
وما سقى بغرب أو دالية الخ : যে সমস্ত জমি স্বাভাবিক বৃষ্টি বা নদীর পানি দ্বারা সেচ দেওয়া হয় না; বরং ঢোল, বালতি বা উটের মাধ্যমে পানি বহন করে
সেচ দেওয়া হয়, সেসব জমির উৎপাদিত ফসলের খশর বা এক দশমাংশ দিতে হয়। না, তবে এক বিশষাংশ যাকাত দিতে হয়।
ওসাকের মূল্যমান ধরার ব্যাপারে ওলামাদের মতান্তর :
قوله وقال أبو يوسف فيما لا يوسق الخ : ইমাম আবূ ইউসুফ (র.)-এর মতে, যেসব বস্তু ওসাকে পরিমাপ করা হয় না সেগুলির মূল্য ওসাকে পরিমাপকৃত
নিম্নমানের বস্তুর ও ওসাক পরিমাণ মূল্যের সমান হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। আর ইমাম মুহাম্মদ (র.)-এর মতে, উহাদের মূল্য নির্ধারণ করার
প্রয়োজন নেই; বরং ঐ সব দ্রব্যেকে যেসব আদাচ্ছের মারা আদায় করা হয় উহার উৎকৃষ্ট পরিমাপের যদি পাঁচগুণ হয়, তাহলে ‘তার’ ওয়াজিব হবে,
যেমন- ভুলা যখন পাঁচ বোঝা হবে তখন ‘ওশর” ওয়াক্সির হবে। কেননা, তুলাতে বোঝা হলো উৎকৃষ্ট আন্দাজ।
মধুর ওশর সম্পর্কীয় মাসআলা :
قوله وفي العسل العشر الخ : ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর মতে, মধু কম হোক আর বেশি হোক তাতে ‘শেয়’ ওয়াজিব হবে। ইমাম আবু ইউসুফ (র.) বলেন,
দশ ‘যাক’ না হলে ওশর ওয়াজিব হবে না। (যাক’ হলো এমন মশক যাতে পঞ্চাশ সের পানি ধরে।) ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, পাঁচ ‘ফারাক’ হলে তার
ওয়াজিব হবে। আর প্রতি ফারাকে হলো ৩৬ রিতিলে, প্রতি রিতিলে হলো পৌনে ৩৪ তোলা। কাজেই এক ফারাকে ১৫ সের এর থেকে কিছু বেশি হবে।
খারাজী ভূমির পরিচয় :
قوله وليس فى الخارج من أرض الخراج الخ : যে দেশ সন্ধি সূত্রে বিজিত হওয়ার পর সে দেশের ভূমি স্বীয় মালিকদের অধীনে রেখে দেওয়া হয়, আর এ
মালিকগণকে স্বীয় ধর্মে থাকাকে মেনে নেওয়া হয়, এরূপ ভূমিকে খায়াজী ভূমি বলা হয়। এভাবে যুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর মুসলিম খলিফা যে ভূমি
যে দেশের স্বীয় মালিকের নিকট রেখে দেয়, সে ভূমিকেও খারাজী ভূমি বলা হয়।
যাকাত কাকে দেওয়া জায়েজ আর কাকে দেওয়া জায়েজ নয় সে সম্পর্কীয় অধ্যায় باب من يجوز دفع الصدقة إليه ومن لا يجوز
মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, সদকাসমূহ শুধু ফকিরগণকে, দিসকিনগণকে, সদকা আদায়কারীদেরকে, অমুসলিমদের মধ্যে যাদের
অন্তরসমূহ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট তাদেরকে, দাসত্ব মুক্তি স্বর্ণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদেরকে এবং নিঃস্ব
মুসাফিরগণকে, এই আট প্রকারের লোকদের সাহায্যার্থে দেবে। তবে এই আট প্রকার থেকে মুয়াল্লাতুল কুলুব বাদ পড়ে গেছে। কেননা, মহান আল্লাহ
তাআলা ইসলামকে সম্মান দান করেছেন আর অমুসলিমদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করেছেন।
(১) ফকির ঐ ব্যক্তিকে বলে, যার সামান্য সম্পদ রয়েছে। (২) মিসকিন হলো সে ব্যক্তি, যার সামান্য সম্পদ ও নেই। (৩) যাকাত আদায়কারী যদি
কাজ করে, তবে তার কাজ অনুযায়ী ইমাম দেবে। (৪) দাসত্ব মুক্ত করা অর্থাৎ, মুঝাতাগণকে তাদের দাসত্ব হতে মুক্ত করার জন্য সাহায্য করা।
(৫) আর গারিম হলো সে ব্যক্তি, যার ওপর ঋণ আবশ্যক হয়ে পড়েছে। (৬) ‘সাবীলিল্লাহ’ (আল্লাহর রাহে) অর্থ- অর্থাভাবে যোদ্ধা ব্যক্তি যুদ্ধ করতে
অক্ষম। (৭) ইবনুসসাবীল’ অর্থ- এমন মুসাফির যার বাড়িতে অর্থ আছে আথচ সে এমন স্থানে আছে যেখানে তার কিছুই নেই। এগুলো হলো যাকাত
ব্যয় করার খাত। মালিক এ সব দলের প্রত্যেক দলকে দিতে পারে এবং যে কোনো এক শ্রেণীর লোককেও দিতে পারে। জিম্মি তথা বিধর্মীকে যাকাত
দেয়া জায়েজ নেই। যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করা, মৃতকে কাফন পরানো এবং যুক্ত করার জন্য দাস ক্রয় করা কোনটাই জায়েজ নেই।
ধনীকে যাকাত দেওয়া যাবে না, যাকাত দাতা তার যাকাত আপন পিতাপিতামহ, প্রপিতামহ এ ভাবে ওপরের দিকে দেবেনা এবং স্বীয় সন্তান ও সন্তানের
সন্তানকেও দিতে পারবে না, যদিও নিম্নস্তরের হয়। আর নিজ মাতা-দাদীগণকেও দিতে পারবে না, যদিও ওপরের স্তরের হয়। এবং নিজ স্ত্রীকেও দিতে পারবে না।
মুয়াল্লাফাতে কুবের পরিচয় ও বিধান :
قوله فقد سقط منها المؤلفة قلوبهم الخ : মুস্তাফাতে কুপূর সে সমস্ত কাফিরদেরকে বলে, যারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট কিন্তু এখনও ইসলাম গ্রহন করেনি, অথবা
এমন মুসলমান যারা বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে কিন্তু তাদের মন এখনও কৃষ্ণরির দিকে ঝুঁকে আছে। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় এদের মন
আকর্ষন কানা জন্য মহানবী (স:) হয় যাকাত প্রদান করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামকে আল্লাহ তাআলা শক্তিশালী ও বিলা দান করলে যাকাতের এ
খাত রহিত হয়ে যায়।
যাকাত আদায়কারীর বিধান :
قوله والعامل يدفع الخ : মুসলমান বাদশাহ বা খলিফা যাকাত ও ওশর আদায় করার জন্য যেসব কর্মচারী নিয়োগ করেন তাদেরকে আদিল বলা হয়।
এদেরকে যাকাতের সম্পদ হতে ভাঙা দেওয়া জায়েজ।
গোলাম আযাদ :
قوله وفىفي الرقاب الخ : গোলাম আযাদ তথা এমন গোলাম যাকে মনিব নির্দিষ্ট অর্থে- বিনিময়ে আযাদ করে দেওয়ার চুক্তি করেছে।
এরূপ গোলামকে মুকাতার বলা হয়, এদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েজ।
প্রত্যেক খাতে দেওয়ার বিধান :
قوله وللمالك ان يدفع الى كل واحد الخ : হানাফীদের নিকট যাকাতের খাত সমূহের প্রত্যেক খাতে অথবা শুধু এক খাতে দিলেও চলবে। তথা মালিকের
ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো এক খাতে অথবা সকল খাতে দিতে পারে। কিন্তু ইমাম শাফিয়ী (র.)-এর মতে, প্রত্যেক শ্রেণী হতে কমপক্ষে তিন জনকে
যাকাত দেওয়া ওয়াজিব অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না।
অমুসলিমদের যাকাত না দেওয়ার বিধান :
কেননা, রাসূল (স:) বলেছেন – تؤخذ من أغنيائهم وترد على فقرائهم
অর্থাৎ যাকাত ধনী মুসলমানদের থেকে গ্রহণ করে গরিব মুসলমানদেরকে দেওয়া হবে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কাফিরদেকে যাকাত দেওয়া যাবে না।
যাকাতের সম্পদে মালিক বানানোর শর্ত :
ولا يبنى بها مسجد الخ : যাকাতের অর্থ দিয়ে মসজিদ নির্মাণ, কাফনের কাপড় ক্রয় করা এবং আমাদের উদ্দেশ্যে গোলাম ক্রয় করা জায়েজ নেই। কেননা,
এসব অবস্থায় মালের কাউকে মালিক বানানো পাওয়া যায় না, অথচ যাকাত আদায়ের জন্য মালিক করা শর্ত। তবে যদি যাকাতের মাল কোনো
গরিবকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার পর সে স্বেচ্ছায় এ সব কাজ করে, তাহলে জায়েজ হবে, অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না।
পিতা ও পুত্রকে যাকাত দেওয়ার বিধান :
قوله ولا يدفع المزكي زكاته إلى أبيه الخ : যাকাত দাতা তার মাতা-পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এমনিভাবে অপরের দিকে, আর ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি
নিম্নের দিকের কাউকেও কাত দেওয়া জায়েজ নেই। কেননা, তাদেরকে যাকাত দেওয়ার অর্থ হলো, মালকে নিজের কাছে রাখা।
ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর মতে, স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না। আর সাহেবাইন (S.) বলেন, স্ত্রী স্বামীকে দিতে পারবে। আর স্বীয় মুকাতাব
দাস, কৃতদাস এবং ধনী লোকের গোলাম কে যাকাত দেবে না। আর ধনী ব্যক্তির নাবালেগ ছেলেকেও যাকাত দেবে না। বনী হাশেমকেও যাকাত দেবে
না। আর বনী হাশিম হলেন, হযরত আলী (রা.) আব্বাস (রা.), জাফর (রা.), আকীল (রা.) এবং হারিছ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের
বংশধরগণ ও তাদের দাসগণ।
ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর মতে, স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না। আর সাহেবাইন (র.) বলেন, স্ত্রী স্বামীকে দিতে পারবে। আর স্বীয় মুকাতাব
দাস, কৃতদাস এবং ধনী লোকের গোলাম কে যাকাত দেবে না। আর ধনী ব্যক্তির নাবালেগ ছেলেকেও যাকাত দেবে না। বনী হাশেমকেও যাকাত দেবে
না। আর বনী হাশিম হলেন, হযরত আলী (রা.) আব্বাস (রা.), জাফর (রা.), আকীল (রা.) এবং হারিছ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ ও তাদের
দাসগণ।
ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ (র.) বলেন যে, যখন কোনো ব্যক্তি কাউকে ফকির মনে করে যাকাত প্রদান করা এরপর প্রকাশ পেল যে, সে ধনী বা
হাশিমী বা অমুসলিম, অথবা অন্ধকারে কোনো ফকিরকে দেওয়ার পর প্রকাশ পেল যে সে তার পিতা বা তার ছেলে, তাহলে (উল্লিখিত অবস্থা)
পুনঃ যাকাত দিতে হবে না। ইমাম আবূ ইউসুফ (র.) বলেন, (উল্লিখিত অবস্থাসমূহে) পুনঃ যাকাত দিতে হবে। আর কোনো ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার
পর জানতে পারল যে, সে তার দাস অথবা মুকাতার গোলাম, তাহলে সকল ইমামের মতানুসারে জায়েজ হবে না। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে
যাকাত দেওয়া জায়েজ হবে না, যে-কোনো প্রকারের মাল হোক না কেন। যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের চেয়ে কমের অধিকারী তাকে যাকাত
দেওয়া জায়েজ, যদিও সে সুস্থ ও উপার্জন করবার ক্ষমতা সম্পন্ন হয়। এক শহরের যাকাত অন্য শহরে স্থানান্তরিত করা মাকরূহ। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের
যাকাত তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, কিন্তু যদি মানুষ নিজ আত্মীয়কে দিতে স্থানান্তর করা প্রয়োজন মনে করে, অথবা তার শহরে লোক হতে
অন্য শহরের লোক যাকাতের অধিক মুখাপেক্ষী হয়, তাহলে স্থানান্তর করা মাকরূহ নয়।
স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দেওয়ার বিধান :
قوله ولا تدفع المراةالخ : ইমাম আবূ হানীফা (র.)-এর মতে, স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দেওয়া জায়েজ হবে না, আর সাহেবাইন (র.) বলেন, জায়েজ হবে। কেননা,
রাসূল (স:) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রীকে বলেছেন যে, তুমি তোমার সদকা স্বামীকে নিয়ে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। ইমাম আবু
হানীফা (র.) এর উত্তরে বলেন যে, অত্র হাদীসে নফল সদকার কথা বলা হয়েছে যা দেওয়া জায়েজ।
বনী হাশিমকে না দেওয়ার কারণ :
قوله ولا يدفع إلى بني هاشم الخ : হযরত আলী, আব্বাস, জাফর, আকীল (রা.) ও হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর এবং তাঁদের গোলামগণকে বনী
হাশিম বলা হয়েছে। মহানবী (স:) বনী হাশিম বংশে জন্ম গ্রহণ করেছেন বলে তাঁরা সকলের সম্মানের পাত্র। আর তারা কুফরি ও ইসলাম উভয় যুগে
রাসুলকে (স:) সাহায্য করেছেন। তাই তাদেরকে যাকাত দেওয়া বা তাঁদের যাকাত লওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কেননা, যাকাত হলো মালের ময়লা।
যাকাতের খাত ছাড়া অন্য খাতে যাকাত দিয়ে ফেললে তার বিধান :
قوله إذا دفع الزكوة إلى رجل يظنه فقيرا الخ : এ মাসআলাটির তিনটি রূপ –
প্রথম: যাকাতদাতা দেখে শুনে যাকাতের উপযুক্ত মনে করে যাকাত দেওয়ার পর জানা গেল যে, সে হাশেমী বা ধনী কিংবা কাফির।
দ্বিতীয় অন্ধকারে কাউকে ফকির মনে করে যাকাত দেওয়ার পর জানা গেল যে, সে যাকাতের উপযুক্ত নয়; বরং সে তার পিতা বা পুত্র।
তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে চিন্তা ভাবনা ছাড়াই যাকাতের পাত্র মনে করে যাকাত দেওয়ার পর প্রকাশ পেল যে, সে তার সবা মুকাভাৰ গোলাম। ইমাম আবু
হানীফা ও মুহাম্মদ (র.)-এর মতে, প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থায় যাকাত আদায় হয়ে যাবে পুনঃ দিতে হবে না। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ (র.)-এর মতে,
যাকাত আদায় হবে না; রবং পুনঃ দিতে হবে। আর তৃতীয় অবস্থায় সকল ইমামের ঐকমত্যে যাকাত আদায় হবে না, পুনঃ দিতে হবে।
অর্থাৎ যে সুস্থ-সবল ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়, সেনা চাওয়া অবস্থায় তাকে যাকাত দিলে বৈধ হবে। আর প্রার্থনা করার পর দিলে
জায়েজ হবে না। কেননা সবল ব্যক্তির জন্য হস্ত প্রসারিত করা হারাম। আর এজাতীয় ভিক্ষুককে যাকাত দিলে অন্যায়ের সাহায্য করা হবে।
এক স্থান হতে অন্যত্র যাকাত স্থানান্তরের বিধান :
قوله ويكره نقل الزكاة الخ : এক শহরের যাকাত অন্য শহরে স্থানান্তর করা মাকরুহ। কেননা, যে শহরের যাকাত সে শহরের অধিবাসীরাই তার হকদার।
তবে যদি অন্য শহরের যাকাত দাতার গরিব আত্মীয় থাকে, অথবা এর শহর হতে অন্য শহরের লোক বেশি মুখাপেক্ষী হয়,
তবে যাকাত স্থানান্তর করা জায়েজ আছে।
- B.A.SR.M (FAZIL)
- Bengali
- Books
- Exam Result
- General Topics
- Geography
- History
- Holiday
- Islamic history
- Math
- Political science
- Theology
- প্রবন্ধ ও রচনা
- Type of Barriers Communication: Examples Definition and FAQs
- BOLDEPOTA AMINIA SENIOR MADRASAH (FAZIL)
- মেঘের গায়ে জলখানা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
- কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
- ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
History
Good vibes
I benefited, thank you bro