মুঘল রাজত্বে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা | bnginfo.com
মুঘল রাজত্বে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা | bnginfo.com

মুঘল রাজত্বে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা | bnginfo.com

১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ভিত্তি মূলত স্থাপন করেন আকবর, মুঘল রাজত্বে ভূমিরাজস্ব দুই ভাগে বর্ণিত ছিল, প্রথম তার নির্ধারণ (তসখিস) এবং দ্বিতীয়ত তার আদায় (তহশিল), রাজত্বে আদায় পদ্ধতি ছিল তিন প্রকারের যথা— ঘল্লাবক্স, জাবৎ এবং নশক. ফসলের পরিমাণকে নগদ মূল্যে পরিবর্তিত করে সরকার কৃষকের কাছ থেকে তা আদায় করত,

ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ভিত্তি মূলত স্থাপন করেন আকবর। এক্ষেত্রে তিনি প্রধানত শের শাহ কৃত ব্যবস্থার দ্বারা চালিত হয়েছিলেন। শের শাহ তিন ধরনের ফসলের দর নির্ধারণ করেছিলেন এবং তাদের গড় অনুপাত করে প্রতি ফসলের ক্ষেত্রে মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ ভাগ সরকারি রাজস্ব হিসেবে ধার্য করেছিলেন। মোটামুটিভাবে একেই জাবত ব্যবস্থা বলা যেতে পারে, যা মুঘল রাজত্বে লাহোর থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত ভূখণ্ডে প্রচলিত ছিল।

উত্তর ভারতের এলাকার বাইরে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া ছিল ভিন্নতর। 

কাশ্মীরে উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশ ভাগ আদায় করা হত যদিও দাবি ছিল অর্ধ ভাগ সিন্ধুতে শস্য বিভাজনের মধ্য দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ ভাগ আদায় হত। 

ইরফান হাবিব ১৬৩৪-এ রচিত মহজর-ই-শাহজাহানী-র উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে, বাস্তবে সিন্ধুতেও অর্ধ ভাগ সংগ্রহ করা হত। অবশ্য মরুভূমির রাজ্য আজমিড় সুবায় উৎপাদনের এক সপ্তমাংশ থেকে এক-অষ্টমাংশ ভাগ রাজস্ব হিসেবে আদায় হত।

কিন্তু রাজস্ব নির্ধারণ যেসব ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হত, তা বলা চলে না। 

শাহজাহানের রাজত্বে দিল্লি সুবায় তুলো, যব, দানাশস্য এবং সরিষার ক্ষেত্রে জমি জরিপের মাধ্যমে নির্ধারিত দরে রাজস্ব আদায় করা হত। কিন্তু গমের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ নেওয়া হত। আবার খারিফ ফসল যেমন ধান, ডাল ইত্যাদির ক্ষেত্রে শস্য বিভাজন প্রক্রিয়ায় সরাসরি উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ আদায় হত। 

আওরঙ্গজেব রসিকদাস করোরীকে দেওয়া তাঁর বহু আলোচিত ফরমানে কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ, অর্ধ ভাগ বা দুই-চতুর্থাংশ ভাগ ফসল অনুসারে রাজস্ব বাবদে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণে উৎপাদনের অর্ধ ভাগ নেওয়ার প্রবণতা ছিল। সুবা আজমিড়ের অবস্থা জানা যায় মুনহতা নয়নসীর ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দের প্রতিবেদন থেকে সেক্ষেত্রে কিন্তু উৎপাদনের অর্ধ ভাগ আদায়ের উল্লেখ আছে। 

গুজরাটের কৃষকদের অবস্থা ছিল আরও ভয়ানক। সপ্তদশ শতকে সেখানে এবং দাক্ষিণাত্যে উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশ ভাগ আদায় করা হত যদিও জাগীরদার-দের অর্ধ ভাগের অধিক সংগ্রহ করতে মানা করা হয়েছিল। সব ক্ষেত্রেই কাগজে-কলমে অর্ধ ভাগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ড. ইরফান হাবিব মনে করেন যে, যেহেতু শরিয়ত-এ সর্বোচ্চ পরিমাণে উৎপাদনের অর্ধ ভাগ খরাজ (ভূমিরাজস্ব) হিসেবে আদায়ের কথা বলা আছে সেইহেতু ওই পরিমাণের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা দেখা যায়।

মুঘল রাজত্বে ভূমিরাজস্ব দুই ভাগে বর্ণিত ছিল। 

  1. প্রথম তার নির্ধারণ (তসখিস) এবং 
  2. দ্বিতীয়ত তার আদায় (তহশিল)। 

এতে যা নির্ধারিত হত তাকে বলা হত জমা এবং বাস্তবে যা আদায় হত তাকে বলা হত হাসিল। তবে রবি (শীতকালীন) এবং খারিফ (শরৎকালীন) ফসলের জন্য পৃথক পৃথক হারে রাজস্ব ধার্য করা হত। রাজস্ব নির্ধারণের পর সরকার পাট্টা প্রদান করত যার বিনিময়ে কৃষক কবুলিয়তের মাধ্যমে নিজের দায় স্বীকার করত।

মুঘল রাজত্বে আদায় পদ্ধতি

রাজস্ব তিন পদ্ধতিতে আদায় হত, যথা— ঘল্লাবক্স, জাবৎ এবং নশক। 

উৎপাদিত শস্য বিভাজনের মাধ্যমে যে-রাজস্ব আদায় হত তাকে বলা হত ঘল্লাবক্স। আবুল ফজলকে উদ্ধৃত করে ইরফান হাবিব লিখেছেন যে, 

ঘল্লাবক্স পদ্ধতি

ঘল্লাবক্স আবার তিন প্রকারের ছিল। 

(১) নির্দিষ্ট ব্যবস্থা (করার দাদ) অনুসারে ফসল ঝাড়াইয়ের সময়ে তার বিভাজন, 

(২) খেতের নির্দিষ্ট অংশ বিভাজন (খেতবাট) এবং 

(৩) ফসল কাটার পর তার পরিমাণ দেখে বিভাজন (লাং-বাটাই)। 

যেসব অঞ্চলে নিয়মিত বা পর্যাপ্ত ফসল ফলত না সেইসব অঞ্চলে ঘল্লাবক্স পদ্ধতি খুবই কার্যকরী ছিল। তবে আবুল ফজল মনে করেন যে, এইভাবে রাজস্ব আদায়ের জন্য খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হত।

এই পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় করতে হলে সরকারি কর্মচারীরা গ্রাম পর্যবেক্ষণ করে উত্তম ও অধম প্রকৃতির জমির তালিকা তৈরির পর তাদের গড় তৈরি করত এবং তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ করত (হস্ত-ও-বুদ)। আবার গ্রামে যতগুলি লাঙল ছিল তাদের সংখ্যার ভিত্তিতে এবং সেই অঞ্চলে লাঙল পিছু কী পরিমাণ উৎপাদন হত তার পরিমাণের ভিত্তিতেও রাজস্ব নির্ধারিত হত। 

বোঝাই যাচ্ছে যে এই পদ্ধতি আদৌ বৈজ্ঞানিক ছিল না এবং একজন কর্মচারীর ব্যক্তিগত দক্ষতা ও সততার ওপরই তা নির্ভর করত। অবশ্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে কানকুৎ (জমি জরিপের মাধ্যমে প্রতিটি ফসলের জন্য পৃথক রাজস্ব হার) ব্যবস্থা চালু করে জমি জরিপের পর রাজস্ব নির্ধারণ হত। কিন্তু এক্ষেত্রেও রাজস্ব ধার্য হত ফসলে, নগদে নয়। ফসলের পরিমাণকে নগদ মূল্যে পরিবর্তিত করে সরকার কৃষকের কাছ থেকে তা আদায় করত।

জাবৎ পদ্ধতি 

মুঘল রাজস্ব ব্যবস্থার সবথেকে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিটি ছিল জাবৎ। জাবৎ অর্থ জরিপ। 

বলা হয় শের শাহ ও ইসলাম শাহ সমগ্র ‘হিন্দুস্তানে’ এই পদ্ধতি চালু করেছিলেন। এক্ষেত্রে যেসব জমি প্রতি মরশুমেই চাষ হত (পোলাজ) এবং যেসব জমি খুব অল্প সময়ের জন্য পতিত রাখা হত ( পারৌতি) তাদের জরিপ করিয়ে যে যে রকমের ফসল ফলত তাদের পরিমাণের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ হত। উৎপাদনকেও তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছিল, যেমন – উত্তম, মধ্যম এবং অধম। এদের গড়ের ভিত্তিতে কৃষককে রাজস্ব দিতে হত।

তবে লাহোর থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত ব্যাপ্ত এই বিশাল ভূখণ্ডে (হিন্দুস্তান) কীভাবে সর্বজনগ্রাহ্য রাজস্ব দর ধার্য করা হত এ নিয়ে ইরফান হাবিব সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আবুল ফজল নিজেই স্বীকার করেছেন যে, পূর্ববর্তী সময়ে যে-রাজস্ব ধার্য ছিল (জমা-ই-রকমী) তা অত্যন্ত চড়া হারে বাঁধা। এই রাজস্ব দর (দপ্তর) খুশিমতো বৃদ্ধির কথাও তিনি লিখেছেন। ফলত জাগীরদার-রা নিয়মিত একটা অভিযোগ করত যে, নির্ধারিত রাজস্ব (জমা)-র সঙ্গে আদায়ের (হাসিল) পার্থক্য ছিল বিপুল। অর্থাৎ সরকারি দপ্তরে একটি এলাকার যে-রাজস্ব তালিকা দেওয়া থাকত কোনোমতেই তা বাস্তবানুগ নয়।

এই সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যে ১৫৭৯-৮০ খ্রিস্টাব্দে আকবর পূর্ববর্তী দশ বছরের আদায়ের গড়ের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণের নির্দেশ দেন। একেই বলা হল জমা-ই-দহসালা। মোরল্যান্ডের মতে, এই কাজের পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেনি। যেহেতু ১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিহার ছাড়া সমগ্র ‘হিন্দুস্তান’ খালিস-এ রূপান্তরিত করা হয়েছিল সেইহেতু আদায়ের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা সরকারি দপ্তরে পাওয়া সম্ভব ছিল। তাছাড়া নতুন রাজস্ব আদায়কারীদের (ক্রোড়ী) কৃষির প্রসার ঘটাতে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়ার ফলে উৎপাদনের পরিমাণে যেমন বৃদ্ধি ঘটেছিল, তেমনি নতুন এলাকায় রাজস্ব আদায়ের জন্য জরিপ করে তা নির্দিষ্ট শ্রেণীর ফসলের উৎপাদনের ভিত্তিতে ধার্য করাও সম্ভব হয়েছিল।

এই জাবৎ ব্যবস্থা মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গে সপ্তদশ শতক জুড়ে চালু ছিল। ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত ফরাঙ্গ-ই-কারদানী অনুসারে প্রতি মরশুমের শুরুতে জমি জরিপের পর সরকারি প্রাপ্য (দপ্তর) ধার্য হত এবং তাকেই জমা বলে গ্রহণ করা হত। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের খামখেয়ালিপনা বহুলাংশে দূর হয়েছিল। তবে কৃষকের সমস্যা পুরো মিটেছিল এমনও বলা চলে না, কারণ জমির আকৃতি ও উৎপাদিকা শক্তি সর্বত্র এক ছিল না বা উৎপাদনের মধ্যেও সমতা ছিল না। 

পাশাপাশি জরিপের সময়েও দুর্নীতি করা সম্ভব ছিল। এ তথ্য আকবরের অজানা ছিল বলা যাবে না। কারণ ১৫৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি খালিস এলাকায় এইভাবে রাজস্ব নির্ধারণের প্রক্রিয়া বন্ধ করেন। এর জন্য প্রচলিত লম্বা ঘাসের দড়ি বাতিল করে লোহার বলয় দিয়ে চিহ্নিত বাঁশ জমি জরিপের কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। অবশ্য এই পদ্ধতিতেও দুর্নীতির সম্ভাবনা ছিল যথেষ্ট এবং কৃষককে সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণে বাধ্য করা হত।জাবৎ ব্যবস্থায় প্রতি বিঘা জমি জরিপের জন্য কৃষকের কাছ থেকে এক দাম হিসাবে জাবিতানা আদায় করা হত।

নশক পদ্ধতি 

তৃতীয় যে পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় করা হত তাকে বলা হয় নশক। 

আবুল ফজল এই শব্দের উল্লেখ বহু ক্ষেত্রে করেছেন কিন্তু তার অর্থ ব্যাখ্যা করেননি। ইরফান হাবিব এই প্রসঙ্গে লিখেছেন যে, ১৫৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে শিহাবুদ্দীন খান খালিস এলাকায় প্রতি বছর জাবৎ পদ্ধতি বাতিল করে নশক চালু করেছিলেন যদিও ১৫৮৩-৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিবছর জরিপ ইত্যাদি করে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দরে রাজস্ব নির্ধারণের প্রক্রিয়া চালু ছিল। 

অর্থাৎ নশক এলাকায় বার্ষিক জরিপের ব্যবস্থা ছিল না। এ প্রসঙ্গে টোডরমলের একটি যুক্তি ছিল। ১৫৮২-৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি লেখেন যে, প্রতি বছরই খালিস এলাকায় জরিপের পর জমির পরিমাণ কমছে। সুতরাং একবার যে জমি জরিপ করা হয়েছে সেখানে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ধরে রাজস্ব নির্ধারণ করতে হবে। একে নশক বলা হল। যদি কৃষক এই ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করত তাহলে অবশ্য পুনরায় বার্ষিক জরিপের ব্যবস্থা করা হত।

নশক ব্যবস্থা বলতে যে কেবল এই রকমই বোঝাত তা নয়। গুজরাটে জাবৎ কিছুটা চালু ছিল এবং তার সঙ্গেই ছিল নশক। কিন্তু বেরার, কাশ্মীর এবং বাংলায় যে নশক চালু ছিল তার আকৃতি ছিল ভিন্ন। 

দাক্ষিণাত্যে নশক পদ্ধতি

দাক্ষিণাত্যে নশক পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় করার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের দুর্ভিক্ষের ইতিহাস লিখতে গিয়ে সমসাময়িক প্রতিবেদক সাদিক খান মুঘল দাক্ষিণাত্যের নশক-এর যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এরূপঃ গ্রামের মোট লাঙলের সংখ্যা শুনে প্রচলিত দরে তাদের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারিত হত। এক্ষেত্রে জমি জরিপ বা উৎপাদনের পরিমাণ আদৌ দেখা হত না, বাংলায় ঠিক এমনটাই ছিল বলা হয়। বাংলায় জমিন্দার-দের সঙ্গে সরকারের যে রাজস্ব বন্দোবস্ত ছিল তা আকারে কিছুটা চিরস্থায়ী, অবশ্য খুশিমতো তার বৃদ্ধি ঘটানোর তথ্যও আমাদের আছে। যেহেতু বাংলায় বার্ষিক জরিপ বা রাজস্ব নির্ধারণের ব্যবস্থা ছিল না সেইহেতু বাংলাকেও নশক এলাকাভুক্ত করা হয়েছিল।

কাশ্মীরে নশক পদ্ধতি

কাশ্মীরে আবার অন্যভাবে নশক চালু থাকতে দেখা যায়। আবুল ফজলের ভাষায় সেখানে নশকী-ই ঘন্নাবক্স চালু ছিল। অর্থাৎ নশকও বটে আবার শস্য বিভাজনও বটে। এ পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের জন্য এলাকাভিত্তিক বাজারদর ধার্য ছিল। এভাবে গ্রাম-পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাধার বহনযোগ্য (খারওয়ার) চাল রাজস্ব হিসেবে দাবি করা হত। এভাবেই কোনোরকম বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা না মেনে রাজস্ব আদায় করা হত।

নশক ব্যবস্থা প্রদেশে প্রদেশে বিভিন্ন রূপে চালু থাকলেও একটি ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মিল আছে। কোনও ক্ষেত্রেই বার্ষিক নির্ধারণের কোনও সুযোগ ছিল না। একবার তৈরি করা জমা-র ভিত্তিতেই বছরের পর বছর রাজস্ব আদায় করা হত। আবার অন্যভাবে দেখতে গেলে বলা চলে যে, অতীতে কোনও সময়ে তৈরি করা রাজস্ব তালিকাকেই কাজে লাগানো হত। খুলাসাতুস সিয়াক অনুসারে আওরঙ্গজেব কার্যত এই ধরনেরই নির্দেশ দিয়েছিলেন যেখানে বিগত ১০ অথবা ১২ বছরের গড় আদায়ের ভিত্তিকেই নশক এলাকায় রাজস্ব নির্ধারণের ভিত্তি বলে ধরা হয়েছে।

মুঘল রাজত্বে বিভিন্ন অঞ্চলে রাজস্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়া

আবুল ফজল লিখেছেন যে, শের শাহের পূর্বে ‘হিন্দুস্তানে’ জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ধারণের কোনও ইতিহাস নেই। আকবরের রাজত্বের প্রাথমিক বছরগুলিতে আগ্রা, এলাহাবাদ, অযোধ্যা, মালব, লাহোর এবং দিল্লি অঞ্চলে শের শাহকৃত জাবৎব্যবস্থা চালু ছিল, কিন্তু এই ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ১৫৬৮-৬১ খ্রিস্টাব্দে বার্ষিক জরিপের কাজ বন্ধ করে বহু ক্ষেত্রেই খালিস এলাকায় নশক প্রথায় আদায় শুরু হয়। পুনরায় ১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিহার ছাড়া সমগ্র ‘হিন্দুস্তানে’ জাবৎ চালু হয়। এ ব্যবস্থা মুলতান এবং আজমিড় সুবা-তে প্রসারিত হয়েছিল। 

১৫৯৫-৯৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিহারের অধিকাংশ অঞ্চলেই জাবং বলবং হয়েছিল। অবশ্য বার্ষিক জরিপের কাজ সম্ভবত চালু রাখা যায়নি। ফলত নশক প্রথায় ওই এলাকাগুলি থেকে রাজস্ব আদায় হতে থাকে। একই সঙ্গে কানকু‍ পদ্ধতি অনুসরণ করে শস্য-বিভাজনের মাধ্যমেও রাজস্ব আদায় হতে থাকে। এভাবেই কেবলমাত্র উৎকৃষ্ট শ্রেণীর জমি যেমন, পোলাজ ও পারৌতি নয়, নিকৃষ্টতর জমি যেমন চাচর (যে জমি উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ৩-৪ বছর পতিত রাখা হত) এবং বানজার (দীর্ঘকাল পতিত) থেকেও রাজস্ব আদায় হতে থাকে। 

আবুল ফজলের বিবরণী অনুসারে পূর্বে যেসব অঞ্চলে শস্য-বিভাজনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হত সেখানেও কৃষকরা জাবৎ পদ্ধতি বলবৎ করে চলত। পাঞ্জাবে কোনো অঞ্চলে শস্য-বিভাজন আবার কোনও অঞ্চলে জরিপের মাধ্যমে মূল্যায়ন করার প্রথা। চালু ছিল। দিল্লি সুবায় কোথাও শস্য-বিভাজনের দ্বারা আবার কোথাও বিঘার অনুপাতে রাজস্ব আদায় চলত।

এমনিভাবে নানা উপায়ে কাশ্মীরে রাজস্ব আদায় হত। প্রতি গ্রামে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি চিহ্নিত থাকত সেখান থেকে সরকার তার নির্দিষ্ট রাজস্ব আদায় করে নিত। প্রধান প্রধান ফসলের ক্ষেত্রে উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ ছিল সরকারি রাজস্ব। তারই ভিত্তিতে খারওয়ার নিয়মে শস্যে রাজস্ব সংগ্রহ করা হত। এবং সেই পরিমাণে প্রতি বছরই আদায় হত। কিন্তু এই ব্যবস্থায় কৃষকের ওপর চাপ ছিল অনেক বেশি। ১৫৮৯-৯০ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরে সর্বপ্রথম হিসাব পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় যে, কৃষককে অনেক ক্ষেত্রেই চারগুণ অধিক রাজস্ব দিতে বাধ্য করা হচ্ছিল। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ ভাগের স্থলে দুই-তৃতীয়াংশ ভাগ রাজস্ব আদায় করা হত। আকবর সাধারণভাবে অর্ধ ভাগ রাজস্ব নির্ধারণ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ আদায় হতই। ইরফান হাবিব ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে জারি করা শাহজাহানের এক ফরমান উদ্ধৃত করে এটাই প্রমাণ করেছেন।

সিন্ধুর ভক্কারে যা মুলতান সুবার অন্তর্গত ছিল, আকবরের রাজত্বে রাজস্ব শস্যে আদায় করা হত। কিন্তু ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত মজহর-ই-শাহজাহানী র ভাষ্য অনুসারে ভক্কারে জাবৎ ব্যবস্থায় শরৎকালীন ও শীতকালীন উভয় সময়ের শস্যের ওপর নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব ধার্য ছিল। আবার দক্ষিণ সিন্ধুতে শস্য-বিভাজন এবং জাবৎ দুটোই চালু ছিল। ভক্কারে রাজস্ব (দস্তর) ধার্য ছিল শস্যে, নগদে নয়। কিন্তু ঘটায় বরাবরই শস্য বিভাজনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হত। পার্শ্ববর্তী সুবা আজমিড়ে অবশ্য পুরোপুরি জাবৎ চালু ছিল। কিন্তু সত্যপ্রকাশ গুপ্তা পূর্ব রাজস্থানের রাজস্ব ব্যবস্থার ইতিহাসে লিখেছেন যে, শরৎকালীন খারিফ ফসলের ক্ষেত্রে জাবৎ পদ্ধতিতে এবং শীতকালীন রবি ফসলের ক্ষেত্রে শস্য-বিভাজনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হত।

গুজরাটে নশক পদ্ধতি

গুজরাটের ক্ষেত্রে চিত্রটা খুবই গোলমালের। আবুল ফজল লিখেছেন যে, গুজরাটে মূলত নশক পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় হত। কিন্তু একই সঙ্গে সামান্য কিছু এলাকা ছাড়া গুজরাটের রাজস্ব সংক্রান্ত নথিতে জরিপ ইত্যাদির অনুপুঙ্খ উল্লিখিত। মীরাট-ই-আহমদী-কে উল্লেখ করে বলা চলে যে, ১৫৭৭ থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে গুজরাটে ব্যাপকভাবে জমি জরিপ করা এবং নতুন এলাকাকে চাষযোগ্য করার ব্যবস্থা হয়েছিল। 

তথাপি গুজরাটেও সীমিত আকারে নশক চালু হয় কারণ জরিপ নিয়মিত করা এবং শস্যের মূল্যায়ন করা সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ কৃষকের ওপর বোঝার পরিমাণ ভালোই ছিল। ১৬৩০-৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের পর এটা লক্ষ্য করা গেল যে, রাজস্বের বোঝা কত বেশি। নতুন সুবাদার মির্জা ইশা তারখান (১৬৫২-৫৪ খ্রি.) শস্য-বিভাজন প্রথায় রাজস্ব আদায় করতে শুরু করায় গ্রামে গ্রামে উন্নতির জোয়ার এসেছিল। 

কিন্তু শস্যের দর কমে গেলে জাগীরদার-রা ক্ষুব্ধ হত। আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে এই সমস্যা দেখা দেয়। জাগীরদার-দের যখন জাগীর বণ্টন করা হয়েছিল তখন বাজারে চালু শস্যের দরের ভিত্তিতে তাদের জাগীর-এর মূল্যায়ন হয়েছিল। দর পরবর্তীকালে পড়ে যাওয়ায় জাগীরদার-রা শস্য- বিভাজনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পরিমাণ তো আদায় করতই উপরন্তু দর কমের ফলে তাদের যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল তা পুরণের জন্য কৃষকদের কায়িক পরিশ্রম করতে বাধ্য করত। এভাবে দেখা গেল যে, কার্যত উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশ ভাগই কৃষকদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

দাক্ষিণাত্যের বেরারে নশক চালু থাকলেও অন্যত্র জাবৎ বা শস্য-বিভাজন কোনোটাই চালু ছিল না। সেখানে প্রাচীনকাল থেকেই কৃষক তার খুশিমতো জমিতে ফসল ফলাত। প্রতিটি লাঙল-পিছু তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ রাজস্ব হিসেবে দিতে হত। কিন্তু ড. ইরফান হাবিব মনে করেন যে, সেখানেও কোনও এক পদ্ধতিতে নশক প্রথায় রাজস্ব ধার্য হত। এর ফলে লাভ বিশেষ হয়নি। সুবাদার হিসেবে আওরঙ্গজেব এমন মন্তব্যও করেছিলেন যে, এই পদ্ধতির জন্য গ্রামাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

১৬৮২ খ্রিস্টাব্দের পর আওরঙ্গজেবের আগ্রহে মুর্শিদকুলি খান দাক্ষিণাত্যে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে নিযুক্ত হন। নির্দিষ্ট হয়। বৃষ্টিপাত যে-অঞ্চলে ভালো হত সেখানে উৎপন্ন ফসলের অর্ধ ভাগ এবং সেচসেবিত এলাকায়। তিনি সমগ্র দাক্ষিণাত্যে শস্য-বিভাজন প্রথা চালু করেছিলেন। বিভিন্ন শস্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের মাপকাঠি উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ নেওয়া হত। তবে ইক্ষু, মশলা এবং ফলের বাগানের ক্ষেত্রে যে-বছর। কমল ফলত সেই বছরগুলিতেই উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-চতুর্থাংশ ভাগ রাজস্ব আদায় করা হত। মুর্শিদকুলি বিঘা পিছু ফসলের তালিকা প্রস্তুত করান এবং বাজারদরের ভিত্তিতে প্রতিটির ক্ষেত্রে রাজস্ব (দস্তর) ধার্য করেন। অর্থাৎ একই সঙ্গে জমি জরিপ এবং শস্য-বিভাজন দুটোই চলছিল।

আবুল ফজল বাংলায় নশক প্রথায় রাজস্ব আদায়ের কথা লিখেছেন। তাঁর কথায় কৃষকরা কিস্তিতে রাজস্ব

দিত এবং এজন্য তারা সরকারি দপ্তরে সোনা-রুপোর টাকা নিয়ে যেত। অর্থাৎ বাংলায় শস্য-বিভাজন ব্যবস্থা ছিল না। বাংলায় কিন্তু রাজস্ব জমিন্দার-এর কাছ থেকে আদায় করা হত, কৃষকের কাছ থেকে নয়। আবুল ফজলের ভাষ্যে এটা পরিষ্কার নয় যে, রাজস্ব যথাযথভাবে কে জমা দিত – জমিদার না কৃষক। মুঘল যুগে জমি জরিপের কোনও তথ্য পাওয়া যায় না, যদিও মির্জা নাথান তাঁর বাহারীস্তান-ই-ঘায়েরী-তে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে জমা পরীক্ষা করার জন্য জমি জরিপের কথা উল্লেখ করেছেন। ড. ইরফান হাবিব এক্ষেত্রে ১৭০৮ খ্রিস্টাব্দে গোবিন্দপুর গ্রামের কথা বলেছেন, যেখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিঘা-পিছু উৎপাদিত শস্যের হিসাবে রায়তরা খাজনা মেটাত। একথা সত্য যে, মুর্শিদকুলি খান বাংলার দেওয়ান হলে প্রতিটি গ্রামে চাষযোগ্য জমি জরিপের ব্যবস্থা হয়। সম্ভবত দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা জমা পরিবর্তনের জন্য বাংলায় কোনও কোনও সময়ে জমি জরিপ করা হত।

মুঘল রাজত্বে ভূমিরাজস্ব ছাড়া অন্যান্য কর

ভূমিরাজস্ব ছাড়া কৃষকদের বহু রকমের কর দিতে বাধ্য করা হত। এইসব করকে বলা হয় জিহাত, যা ভূমিরাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য আদায় করা হত। ভূমিরাজস্বের (মাল) সঙ্গে জিহাত এক হয়ে যাওয়ায় সাধারণভাবে বলা হত মাল-ও-জিহাত। এর অতিরিক্ত গ্রামাঞ্চলে যা আদায় হত তাকে বলা হল সেয়ার-জিহাত। এগুলি ছিল সরকার নির্ধারিত। কিন্তু জমিন্দার-রা বহু রকমের কর আদায় করত যেগুলি তাদের জমা-র সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত ছিল না। এগুলিকে বলা হত ফুরুয়াত বা সাধারণভাবে আবওয়াব।

কৃষিখেত ছাড়া গবাদিপশু এবং বাগানের ওপর রাজস্ব ধার্য ছিল। আবুল ফজল লিখেছেন যে, জমিতে খরাজ (ভূমিরাজস্ব) ধার্য হওয়া উচিত সেই জমি যদি পশুচারণের জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে। প্রতি মহিষ পিছু ৬ দাম এবং বলদ বা গাভী পিছু ৩ দাম হিসাবে ওই জমির মালিককে দিতে হত। অবশ্য প্রতি কৃষককে ৪টি বলদ, ২টি গাভী এবং ১টি মহিষ রাখার জন্য কোনও কর দিতে হত না। একইভাবে গোশালা বা পিজরাপোলকে কোনও কর দিতে হত না। 

আকবর গাউ-শুমারী (গাভীর ওপর কর) প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু ইরফান হাবিব এর চরিত্র নিয়ে সন্দিহান, কারণ এই একই কর জাহাঙ্গীরকেও প্রত্যাহার করতে দেখা যায়। তবে ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুর সিওয়ানে একজন জাগীরদার ওই কর আদায় করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল। অর্থাৎ ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে গাউ-শুমারী চালু ছিল না।

তবে পশুচারণের জন্য পৃথক কাহ-চড়াই চালু থাকায় আদৌ গবাদি পশুকে করের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ মীরাট-ই আহমদী থেকে জানা যায় যে, আওরঙ্গজেব গাউ-শুমারী এবং কাহ-চড়াই এই দুটি করই প্রত্যাহার করেছিলেন।

গ্রামাঞ্চলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যয়ভার প্রজাদেরই বহন করতে হত। তারা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তাদের কাজের মজুরি বাবদে রসম আদায় করত। মীরাট -ই-আহমদী থেকে জানা যায় যে, আওরঙ্গজেব এক নির্দেশে বলেছিলেন যে, রাজস্ব আদায় এবং ফসল রক্ষার জন্য নিযুক্ত সরকারি কর্মীদের ভরণপোষণের খরচ আদায় করতে হবে। তবে সে বাবদে দেয় অর্থ ভূমিরাজস্ব থেকে বাদ দিতে হবে। আদৌ এই ব্যবস্থা চালু ছিল কি না, জানা যায় না। 

ইরফান হাবিব এমন কিছু করের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলি সরকারিভাবে ছিল বেআইনি। যেমন সেলামী বা ভেট(উপহার), বালাদস্তী (হরেক রকমের জরিমানা এবং জরিমানা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ঘুষ), পাট্টাদারী (জমির নতুন পাট্টা প্রদানের সময়ে আদায়), তহশিলদারী এবং খরাজ-ই-সাদির ও ওয়ারিদ (গ্রামে সরকারি কর্মীদের উপস্থিতির জন্য) ইত্যাদি। 

এগুলি ছিল সবই আবওয়াব এবং এই আবওয়াব প্রত্যাহারের জন্য জাহাঙ্গীর একবার ও আওরঙ্গজেব পুনরায় একবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় যে, সম্রাট যেভাবেই ভাবুন না কেন অধস্তন কর্মচারীদের রক্তচক্ষুকে প্রজারা এড়িয়ে যেতে কোনোভাবেই পারেনি। নগদ অর্থ বা শস্য ছাড়া গ্রামবাসীদের বহুক্ষেত্রে বেগার খেটে দিতে হত। মূলত ফসল কাটা বা জলসেচ ইত্যাদির জন্যই তাদের বেশি ব্যবহার করা হত । এজন্য কোনও পারিশ্রমিক শ্রমিকদের দেওয়া হত না। ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান এক সাধারণ ঘোষণায় বেগার প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হয়েছিলেন, তা বলা যায় না ৷

People also Rate This Content

মুঘল রাজত্বে কৃষি সংকট ও কৃষক বিদ্রোহ

Leave a Reply