You are currently viewing ভাত | মহাশ্বেতা দেবী | Class 12
ভাত

ভাত | মহাশ্বেতা দেবী | Class 12

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :-

1, লোকটির চাহনি প্রথম থেকেই বড়ো বউ-এর ভালো লাগেনি, কারণ—লোকটির চাহনি ছিল — ক) উগ্র। খ) শান্ত। গ) হিংস্র। ঘ) মিষ্টি।

উত্তর :- ক) উগ্র।

2,  ভাত খাবে কাজ করবে – একথা বলেছিল — ক) বড়ো পিসিমা। খ) বামুন ঠাকুর। গ) বাসীনী। ঘ) বড়ো বউ।

উত্তর :- খ) বামুন ঠাকুর।

3, এ সংসারে সব কিছুই চলে— ক) বড়ো বউয়ের নিয়মে। খ) বড়ো কর্তার নিয়মে। গ) বড়ো পিসিমার নিয়মে। ঘ) বামুন ঠাকুরের নিয়মে।

উত্তর :- গ) বড়ো পিসিমার নিয়মে।

4, ‘তাঁর বিয়ে হয়নি’—এখানে তাঁর বলতে বোঝানো হয়েছে— ক) বাসিনীর।

খ) বুড়ো কর্তার। গ) বড়ো ছেলে। ঘ) বড়ো পিসিমার।

উত্তর :- ঘ) বড়ো পিসিমার।

5, উনি আমার পতি দেবতা’— এখানে উনি হলেন— ক) শিব। খ) গনেশ। গ) শ্রীকৃষ্ণ। ঘ) ব্রহ্মা।

উত্তর :- ক) শিব।

6, রেঁধে বেড়ে শাশুড়িকে খাওয়ানো কাজ— ক) বড়ো বউয়ের। খ) মেজো বউয়ের। গ) বাসিনীর। ঘ) বড়ো পিসিমার।

উত্তর :- খ) মেজো বউয়ের।

7, ‘শ্বশুর তার কাছে ঠাকুর দেবতা সমান’—তার বলতে বোঝনো হয়েছে— ক) বড়ো বউয়ের। খ) মেজো বউয়ের। গ) সেজো বউয়ের। ঘ) ছোটো বউয়ের।

উত্তর :- ক) বড়ো বউয়ের।

8, বাড়ির কর্তার হোম যজ্ঞের জন্য তান্ত্রিক এনেছেন — ক) বাসিনী। খ) উচ্ছব। গ) ছোটো বউয়ের বাবা। ঘ) বামুন ঠাকুর।

উত্তর :- গ) ছোটো বউয়ের বাবা।

9, হোমের জন্য কালো বিড়ালের লোম আনতে গিয়েছিল — ক) বাসিনী। খ) ভজন চাকর। গ) চমুনী। ঘ) বামন ঠাকুর।

উত্তর :- খ) ভজন চাকর।

10, ‘বাদায় থাকে অথচ ভাতের আহিংকে এতখানি’— ‘আহিংকে’ শব্দের অর্থ হল— ক) আকাঙ্খা বা চাহিদা। খ) অহংকার। গ) দেমাক। ঘ) প্রার্থনা করা।

উত্তর :- ক) আকাঙ্খা বা চাহিদা।

11, গ্রামের মৃত মানুষদের শ্রাদ্ধের জন্য খবর দেওয়া হয়েছিল — 

ক) মোড়লকে। খ) চৌকিদারকে। গ) মহানাম শতপথিকে। ঘ) উৎসবকে।

উত্তর :- গ) মহানাম শতপথিকে।

12, তোরেও তো টেনে নেচ্ছেল— কথাটি বলেছিল – ক) সতীশ মিস্তিরি। খ) সাধন দাশ। গ) বড়ো পিসিমা। ঘ) ভজন চাকর।

উত্তর :- খ) সাধন দাশ।

13, উৎসবের বাদায় পাওয়া যেত— ক) প্রচুর যান। খ) গেঁড়ি। গ) কচুশাক। ঘ) গুগলি, গেঁড়ি, কচুশাক, সুশনো শাক।

উত্তর :- (ঘ) গুগলি, গেঁড়ি, কচুশাক, সুশনো শাক।

14, পিসিমার মতে দাদার বাঁচার কথা ছিল — ক) ৮২ বছর। খ) ৮৮ বছর। গ) ৯২ বছর। ঘ) ৯৮ বছর।

উত্তর :- (ঘ) ৯৮ বছর।

15, ভাত গল্পের লেখিকা হলেন— ক) কুসুমকুমারী দাশ। খ) মহাশ্বেতা দেবী। গ) চারুলতা দেবী। ঘ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তর :- খ) মহাশ্বেতা দেবী।

অনধিক ২০টি শব্দে উত্তর দাও :—

প্ৰ. ‘ভাত’ গল্পে বর্ণিত লোকটির চেহারা ও পোশাক সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উ. ‘ভাত’ গল্পে বর্ণিত লোকটি বলতে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব ওরফে উচ্ছব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে। তার চাহনি ছিল উগ্র, চেহার ছিল বুনো বুনো আর পরনে ছিল কোমর পর্যন্ত অত্যন্ত ছোটো একটা ময়লা লুঙ্গি।

প্র. ‘অমন বড়োলোক হয়েও ওরা মেয়ের বিয়ে দেয়নি কেন ?

উ. বুড়ো কর্তার স্ত্রী মারা গেলে তিনি সংসার নিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন। তাই সংসার ঠেলবার কারণে বুড়ো কর্তা তাঁর মেয়ের বিয়ে দেননি।

প্র. বড়ো পিসিমা সংসারে কী কী কাজ করেছেন ?

উ. মা মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গে বড়ো পিসিমা বাবার সংসারে হেঁসেল দেখেছেন, ভাড়াটে বাড়িতে মিস্তিরি লাগিয়েছেন এবং তাঁর বাবার সেবা করেছেন। মোটকথা, এখনও এ সংসারের সব কিছুই বড়ো পিসিমার নিয়মে চলে।

প্র. বাড়িতে হোম যজ্ঞি হবার কারণ কী ?

উ. বড়ো বউয়ের শ্বশুর ৮২ বছর বয়সে মরতে বসেছে। কারণ তার লিভারে ক্যানসার হয়েছে। ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিয়েছে বলেই বাড়ির কর্তাকে বাঁচানোর জন্য এই হোম যজ্ঞি।

প্র. শাশুড়ির মাছ খাওয়া ঘুচে যাবার কারণ কী? এর জন্য বাড়িতে কী কী মাছের যজ্ঞি লেগেছে ?

উ. শ্বশুর মারা গেলে শাশুড়ি বিধবা হবেন ফলে তার মাছ খাওয়া ঘুচে যাবে। এর জন্য মেজো বউয়ের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে বড়ো ইলিশ, পাকা পোনার পেটি, চিতলের কোল, ডিমাপোরা ট্যাংরা এবং বড়ো ভেটকি মাছের যজ্ঞি লেগেছে।

প্র. ‘তার আসার কথা ওঠে না’—তার বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার আসার কথা ওঠে না কেন ?

উ. ‘তার’ বলতে বাড়ির সেজো ছেলের কথা বলা হয়েছে। বাবার অসুস্থতার সময়ে তার না আসার করণ হল—সে চাকুরী সূত্রে বিলেতে থাকে।

প্র. ‘সেজন্যই তাদের চাকরি করা হয়ে ওঠেনি – কাদের, কেন চাকরি করা হয়ে ওঠেনি ?

উ. বাড়ির বড়ো, মেজো এবং ছোটো ছেলের চাকরি করা হয়ে ওঠেনি, কারণ তারা ঘুম থেকে বেলা এগারোটার আগে ওঠে না। তাছাড়া আঠারোটি দেবত্র বাড়ি এবং বাবার প্রচুর অসাগর জমি থাকায় চাকরির প্রয়োজন তারা অনুভব করেনি।

প্র. ‘কত কাজ করতে হত সারাজীবন ধরে’ –কে কার জন্য কী কাজ করত ?

উ. বাড়ির বড়ো বউ তার ঠাকুর দেবতা সমান শ্বশুরের সেবার কাজ করত। এর জন্য সে শ্বশুরকে দই পেতে ইসবগুল দিয়ে শরবত করে দিত, নিজ হাতে শ্বশুরের জন্য রুটি লুচি করত, তাছাড়া শ্বশুরের বিছানা পাতা, তাঁর পা টিপে দেওয়ার কাজ ও করত সে।

প্র. হোম যজ্ঞির জন্য কী কী আনা হয়েছিল ?

উ. হোম যজ্ঞির জন্য আধমন করে বেল, ক্যাওড়া, অশ্বত্থ, বট, তেঁতুল কাঠ আনা হয়েছিল। এছাড়া কালো বিড়ালের লোম, শ্মশানে থেকে বালি ইত্যানি আনা হয়েছিল।

প্র. ‘উচ্ছব তাড়াতাড়ি হাত চালায়’/’এসব কথা শুনে উচ্ছব বুকে বল পায়’–উচ্ছব তাড়াতাড়ি হাত চালায় কেন?/উচ্ছব বুকে বল পায় কেন ?

উ. ভাত গল্পে দেখা যায় উচ্ছব ছিল অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। বেশ কয়েকদিন তাকে না খেয়ে কাটাতে হয়েছে। বড়ো বাড়িতে সে এসেছে কাজের বিনিময়ে দুটো খেতে পাবে সেই আশায়। বড়ো পিসিমা যখন জানিয়েছে, কাঠ কাটলে হোম, হোম হলে ভাত। তাই উচ্ছব তাড়াতাড়ি হাত চালায়। বহুদিন পরে ভাত খাবে সে, তাই সে বুকে বল পায়।

প্র ‘গরিবের গতর এর সস্তা দেকে – বক্তা কে? একথা বলার কারণ কী ?

উ. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পে বর্ণিত উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হল——বাসিনী। বড়ো বাড়ির লোকেরা অসহায়, ক্ষুধার্ত উচ্ছবকে একমুঠো খেতে দেয়নি একথা বলার মাধ্যমে বাসিনী তাদের মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ কিংবা বিবেকবোধের দিকে ইঙ্গিত করেছে।

প্র. ‘ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়ো উতলা করে – কাকে ফুটন্ত ভাতের গন্ধ উতলা করে ? কেন ?

উ. উৎসব তথা উচ্ছব নাইয়াকে ফুটন্ত ভাতের গন্ধ বড়ো উতলা করে। কারণ, সে ছিল কুধার্ত। বহুদিন সে ভাতের মুখ দেখেনি। তাই ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়ো উতলা করে।

প্র. ‘উচ্ছরের সংসার মাটিতে লুটোপুটি গেল—কারণ উল্লেখ করো।

উ. সুন্দরবন অঞ্চলের নদী হল মাতলা। তুমুল ঝড় বৃষ্টিতে মাতল৷ নদী মাতাল হয়ে ওঠে। নদীর জলোচ্ছ্বাস শুধু উচ্ছবের ঘরকে নয়- তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সকলকেই কেড়ে নেয়। মাতলা নদীর জলোচ্ছ্বাস উৎসবকে নিঃস্ব করে দেওয়ায় তার সংসার মাটিতে লুটোপুটি গেল।

প্র. ‘তুমি হাত চালিয়ে নাও দিকি বাবা’— কে কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে ? কেন ?

উ. বাসিনী উচ্ছরকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছে। উচ্চব বাহিনীর সঙ্গে বড়ো বাড়িতে এসেছে কাজ করবে খেতে পাবে এই শর্তে। হোমের জন্য সে আড়াই মন কাঠ কাটবে–প্রত্যেকটি কাঠ হবে দেড় হাত লম্বা। তার পর খেতে পাবে। সেইজন্যই বাসিনী তাকে হাত চালাতে বলেছে।

প্র. পিসিমা দেকতে পেলে সব্বনাশ হবে – বক্তা কে ? কীজন্য একথা 

বলা হয়েছে ?

উ. আলোচ্য অংশটির বক্তা হল – বাসিনী। ক্ষুধার্ত উচ্ছব বাসিনীর কাছ থেকে যখন শোনে বাদায় এদের প্রচুর চাল হয় পিসিমা লুকিয়ে বিক্রিও করে, তখন সে বাসিনীর কাছে বিক্রি করতে দেওয়া চাল থেকে একমুঠো চেয়ে বসে পেটের জ্বালা নিবারণ করার জন্য। কিন্তু সাবধানী বাসিনী জানায় পিসিমা দেখতে পেলে সর্বনাশ হবে। সুযোগ বুঝে সে উচ্চবকে চাল দিয়ে যাবার কথা বলে।

প্র. ‘ভাত খাবে কাজ করবে – কে কার সম্পর্কে বলেছিল ?

উ. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের বামুন ঠাকুর উচ্ছব বা উৎসব নাইয়ার সম্পর্কে কথাটি বলেছিল।

প্র. ‘এ গল্প গ্রামের সবাই শুনেছে’ – কোন গল্পের কথা বলা হয়েছে ?

উ. আলোচ্য অংশটিতে যে গল্পের কথা বলা হয়েছে, তা হল—বাসিনী, যে বাড়িতে কাজ করে, তার সেই মনিব বাড়িতে হেলা ঢেলা ভাত অর্থাৎ ভাতের প্রাচুর্য রয়েছে। নিঃস্ব, ক্ষুধার্ত উচ্ছব বাসিনীর কলকাতার মনিব বাড়িতে গিয়ে খেয়ে মেখে আসতে চায়।

প্ৰ. ‘উৎসব প্রেত হয়ে আছে একথা বলার কারণ কী ?

উ. বাদা অঞ্চলের মানুষ উচ্ছব অনেক দিন ভাত খায়নি। মাতলার জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়িসহ স্ত্রী পুত্র-কন্যাদের হারিয়ে সে যেন পাগলপ্রায়। সর্বস্ব হারানোর শোক ভুলে উচ্ছব যখন সংবিত ফিরে পায়, তখনও সে ভাতের চিন্তাতেই বিভোর থাকে। ভাত পেটে পড়লেই সে মানুষ হবে। পেটে ভাত নেই বলেই উচ্ছব প্রেত হয়ে আছে।

প্র. ‘সে অত্যন্ত ঘাবড়ে যায়—কে, কেন ঘাবড়ে গিয়েছিল ?

উ. উচ্ছব যখন শিব মন্দিরের চাতালে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে তখন দেখতে পায় রাস্তায় বেশ কয়েকটা গাড়ি এবং মানুষের ছোটো ছোটো জটলা, পূর্বের ঘটনা সম্পর্কে অর্থাৎ বাড়ির কর্তার মৃত্যুর কথা না জানার কারণে সদা ঘুম থেকে জেগে ওঠা উচ্ছব চারিদিকের পরিস্থিতি দেখে ঘাবড়ে যায়।

প্র. অ দাদা বাগ্যতা করি’— বাগ্যতা কথার অর্থ কী? কে, কাকে, কেন এই বাগ্যতা করে ?

উ. ‘বাগ্যতা’ কথার অর্থ হল—মিনতি, অনুরোধ বা প্রার্থনা করা। এই অনুরোধ করেছিল। বাসিনী তার গ্রাম সম্পর্কের দাদা উচ্ছবকে। কারণ ক্ষুধার্ত উচ্ছব দুটি ভাত খাবার বাসনায় অণ্ডচ বাড়ির ভাতের হাঁড়ি নিয়ে যখন দূরে চলে যেতে উদ্যত হয় তখন বাসিনী তাকে অনুরোধ জানায় ওই অশুচ বাড়ির ভাত যেন সে না খায়।

প্র. ‘সে স্বর্গসুখ পায়’— সে কে ? কীসে সে স্বর্গসুখ পায় ?

উ. সে বলতে ‘ভাত’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে। হাঁড়ি ভরতি ভাতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে উচ্ছব ভাতের স্পর্শে স্বর্গসুখ অনুভব করে।

প্র. ‘ওই পাঁচ ভাগে ভাত হয় ? – বক্তা কে ? পাঁচ ভাগটা কী কী ?

উ. অংশটির বক্তা হল উচ্ছব নাইয়া বড়োবাড়ির রান্নার প্রসঙ্গে অবাক হয়ে সে বাসিনীতে একথা বলেছে।

প্র. কিন্তু সাগরে শিশির পড়ে’ – কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। ?

উ. বড়োবাড়িতে কর্তাকে বাঁচানোর জন্য চলছে হোম যজ্ঞ। ক্ষুধার্ত উচ্ছব হোম শেষ না হওয়া। পর্যন্ত খেতে পারবে না। তাই সুযোগ বুঝে বাসিনী তাকে একটা ঠোঙায় করে কিছু ছাতু দিয়ে। যায় এবং বলে ছাতু খেয়ে রাস্তার কল থেকে জল খেয়ে আসতে। উচ্ছব বাসিনীর কথামতো মিষ্টির দোকান থেকে ভাঁড় চেয়ে জল খায়। কিন্তু তার ক্ষুধা এতটাই তীব্র যে ছাতু খাবার পরও পেটে কিছু পড়েছে কী না সে টের পায় না। এখানে ছাতু হল শিশির, পেট হল সাগর।

অনধিক ১৫০টি শব্দে উত্তর দাও :– পূর্ণমান-৫

প্রশ্ন: ‘ভাত গল্প অবলম্বনে উৎসব ওরফে উচ্ছব নাইয়ার চরিত্রালোচনা করো।

উত্তর: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের মূল বিষয় হল মাতলা নদীর জলোচ্ছ্বাসে উৎসব নাইয়ার সর্বস্ব হারানোর কাহিনি। গল্পে দেখা যায় হরিচরণ নাইয়ার পুত্র, বাদা অঞ্চলের মানুষ উৎসব ওরফে উচ্ছব নাইয়া একজন অবহেলিত, উপেক্ষিত, নির্যাতিত মানুষ। তাকে ঘিরেই গল্পের হয়ে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। সুতরাং আমরা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব নাইয়ার চরিত্রের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করতে পারি।

(১) দুর্ভাগ্য পীড়িত চরিত্র :– গল্পের শুরুতেই বামুন ঠাকুরের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি ‘ভাত খাবে কাজ করবে’—এই শর্তে একজন লোক এসেছে বাসিনীর মনিব বাড়িতে। এই লোকটিই হল উৎসব ওরফে উচ্ছব নাইয়া—যার বাসস্থান মাতলা নদীর পাড়ে, বাদা অঞ্চলে। মাতলা নদীর মাতাল মাতনে স্ত্রী-তিন সম্ভান-ঘরবাড়ি হারিয়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। জলের টানে ভেসে গিয়েও সে গাছে বাঁধা পেয়ে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যায়। সুতরাং সর্বস্ব হারানোর যন্ত্রনায় কাতর উচ্ছব কে আমরা দুর্ভাগ্য পীড়িত চরিত্র বলতে পারি।

(২) বাস্তববুদ্ধির অভাব :– উচ্ছবের মধ্যে যথেষ্ট পরিমানে বাস্তববুদ্ধির অভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। সে স্ত্রী সন্তানের বিয়োগ ব্যথায় এতটাই পাগল হয়ে গিয়েছিল যে সরকার থেকে দেওয়া ‘রান্না খিচুড়ি তার খাওয়া হয়নি।’ তাছাড়া সরকার থেকে ঘর তৈরি করতে সাহায্য করবে শুনেও সে কলকাতায় যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল।

(৩) কর্তব্য ও স্নেহপরায়ণ স্বামী ও পিতা :– পিতাও স্বামী হিসেবে উচ্ছর ছিল যথেষ্ট কর্তব্য ও স্নেহপরায়ণ। মাতলা নদীর জলোচ্ছ্বাসে তার ‘সংসার মাটিতে লুটোপুটি’ গেলে সে ঘরের চালের নীচ থেকে সাড়া পাবার আশায় পাগল হয়ে থকে। সে তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে ডেকে বলে—অ চুন্নুনীর মা! চন্নুনীরে! তোমরা রা কাড়না ক্যান—কোতা অইলে গো

(8) ধৈর্য ও সহনশীল :– উৎসব সব হারিয়েও বাঁচার স্বাদ ত্যাগ করেনি, আর তাই সমস্ত দুঃখ বুকে চেপে গ্রাম ছেড়ে সে শহরে আসে এবং গল্পের শেষে দেখা যায় নিজেকে বাঁচাতে সে বাসিনীর নিষেধ সত্বেও ‘অশুচ বাড়ির ভাত খেতে কুণ্ঠিত হয় না।

(৫) সমব্যথী :– উচ্ছব যে জীবনযন্ত্রনার শিকার তা থেকে সে যেমন নিস্তার পেতে চায়, তেমনি তার মতো হা-ভাতে গরিবদেরও মুক্ত করতে চায়। আর তাই সে সিদ্ধান্ত করে প্রকৃত বাদার খোঁজ পেলে – “তাদেরও বলবে।’

(৬) ভাতের কাঙাল :– সর্বহারা মানুষরা একমুঠো ভাতের আশায় যে কী করতে পারে উচ্ছব তার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ভাত খাবার বাসনায় সে উন্মাদ হয়েও স্বাভাবিক হয়। বাদা অঞ্চলের সরল মনের কর্মঠ মানুষ উৎসব পেট ভর্তি খিদে নিয়েও ‘আড়াই মন কাঠ কাটে ভাতের হুতাশে।’ কাঠ কাটতে কাটতে – ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়ো উতলা করে।’ ভাত খাবার আশায় সে হিংস্ৰ কামট হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ভাত খেতে পেলেও পরিতৃপ্তির ঢেকুর তোলার আগেই তাকে জেলে যেতে হয় ডেকচি চুরির অপরাধে। সুতরাং উচ্ছব মানবিক দোষগুণ নিয়ে গড়ে ওঠা একটি জীবন্ত চরিত্র।

প্রশ্ন: “দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতো হিংস্র ভঙ্গি করে” – কে কার প্রতি এমন আচরণ করেছিল ? এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: দরিদ্র মানুষের জীবন সংগ্রামের রূপকার মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব ওরফে উচ্ছব নাইয়া তার গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল। 

আচরণের কারণ :– মাতলা নদীর মাতাল মাতনে উচ্ছব সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। ভগ্নস্তূপের চার পাশে সে যখন স্ত্রী-সন্তানদের খুঁজছিল—“তখন তার বুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল। ফলে সরকার থেকে দেওয়া 

(১) রান্না খিচুড়ি তার খাওয়া হয়নি। 

(২) ঘর বাঁধার খরচ নেওয়া হয় নি।

সম্বিত ফিরলে উচ্চবের পেটের খিদে আঁচড়দেয় আর সেই মৌলিক চাহিদার নিবৃত্তি করতে গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনির সঙ্গে উচ্ছবের কলকাতায় আসা “ভাত খাবে, কাজ করবে এই শর্তে”। কলকাতায় বড়ো বাড়িতে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত বড়ো কর্তার মৃত্যু আটকাতে যে হোম যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে উচ্ছবের দায়িত্ব পড়ে কাঠ কাটার। লেখিকা জানিয়েছেন “আড়াই মন কাঠ কাটলে সে ভাতের হুতাশে, নইলে দেহে ক্ষমতা ছিল না। অবশেষে উচ্ছব সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে মন্দিরের চাতালে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের জটলা দেখে সে অত্যন্ত ঘাবড়ে যায়। কর্তা মারা যাওয়ায় বড়ো পিসিমা বলেন—“বাসিনি সর্বস্ব রান্না পথে ঢেলে দিগা যা। ঘরদোর মুক্ত কর সা”। উচ্ছব বুঝতে পারে সব ভাত এর রাস্তায় ফেলে। দেবে। সে বাসিনির কাছ থেকে মোটা চালের বড়ো ডেগচি নিয়ে বলে—”দূরে ফেলে দে আসি”। বহু প্রতীক্ষার পর উচ্ছব তার কাঙ্খিত ভাত পেয়ে দিগবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে খানিক হেঁটে আধা দৌঁড় মারে। বাসিনী ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে বলে—“অশুচ বাড়ির ভাত খেতে নি দাদা। উচ্ছব বাসিনীর এমন আচরণে বিরক্ত হয়ে বলে –“তুমিও ঝেয়ে বামুন হয়েছ’? বাসিনী উচ্ছবকে অশৌচের কারণ দেখিয়ে ঐ ভাত থেকে দূরে রাখতে চাইলেও ক্ষুধার্ত উচ্ছব তা মেনে নিতে পারেনি। ফলে সে হিংস্র হয়ে ওঠে। নদীর কামট যেমন তার চলার পথের প্রতিবন্ধকতাকে কামড়ে সরিয়ে দেয়, তেমনি ভাত খাওয়ার উগ্র বাসনার পথে বাসিনীকে প্রতিবন্ধক ভেবে তার দিকে সে ফিরে তাকায়। চোখে তার কামটের হিংস্র চাহনি তার বাসিনীর দিকে—” দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতো হিংস্র ভঙ্গি করে”।

Leave a Reply