- Type of Barriers Communication: Examples Definition and FAQs
- BOLDEPOTA AMINIA SENIOR MADRASAH (FAZIL)
- মেঘের গায়ে জলখানা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
- কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
- ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
মেঘের গায়ে জলখানা প্রবন্ধটি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘রং মশাল’ পত্রিকায় ছোটোদের উপযোগী করে প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে প্রবন্ধটি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ (১৯৫১) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়।
দ্বাদশ শ্রেণি: মেঘের গায়ে জলখানা – বিশ্লেষণধর্মী, বর্ণনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী [প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫]
- B.A.SR.M (FAZIL)
- Bengali
- Books
- Exam Result
- General Topics
- Geography
- History
- Holiday
- Islamic history
- Math
- Political science
- Theology
- প্রবন্ধ ও রচনা
1️⃣“জেলখানা একটা আলাদা জগৎ।” – জেলখানার ভিতরের যে ছবি ‘মেঘের গায়েজেলখানার রচনায় ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
✅“মেঘের গায়ে জলখানা’ রচনা লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, “জেলখানা একটা আলাদা জগৎ”। উঁচু পাঁচিলে ঘেরা বক্সা জেলখানায় কয়েদিদের ঠাসাঠাসি করে থাকতে হত। সকালে খোলা প্রাঙ্গণে তারা থাকতে পারত। ঢোকা-বেরোনোর সময় তাদের আচরণে কোনোরকম ভুলত্রুটি ঘটলে তাদের কপালে জুটত ডান্ডা অথবা লোহার নাল বসানো বুটজুতোর লাথি। কয়েদিদের দিয়ে জেলখানার চৌহদ্দির ভিতরকার হাড়ি-মেথরের কাজ থেকে শুরু করে “দঁড়িচাল্লি, ধোবিচাল্লি, ঘানিকর, মিস্ত্রিঘর, ছাপাখানা, গোয়ালঘর, তরকারি বাগান” প্রভৃতি স্থানের যাবতীয় কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করানো হত।
কোনো কয়েদির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কেসটেবিলে ডাক পড়ত তার। অপরাধ প্রমাণিত হলে ডিগ্রিবন্ধ, মার্কাকাটা, কম্বল-ধোলাই, মাড়ভাত, পায়ে বেড়ি ইত্যাদির কোনো-না-কোনো একটি শাস্তি জুটত তার কপালে। জেলখানার নির্জন, বন্ধ কুঠুরিতে কয়েদিকে মাসের পর মাস বন্ধ রাখাতে বলা হত ডিগ্রিবন্ধ। দরজার নীচের সরু ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হত তাদের খাবার।
জেলের কয়েদিরা একবছর ভালোভাবে বন্দিজীবন কাটালে তাদের শাস্তির মেয়াদ তিনমাস কমে যেত। এটাই হল মার্কা। কর্তাদের মন জোগাতে না পারলেই এই মার্কা প্রাপ্তি স্বাভাবিক অধিকার থেকে কয়েদিদের বঞ্চিত করা হত। জেলের নিয়মশৃঙ্খলা ভাঙলে বা জেলের কর্তাব্যক্তিদের তোয়াজ না করলে কয়েদিদের এইসব শাস্তি ভোগ করতে হত। এভাবেই বক্সা জেলের কয়েদিরা অত্যাচারিত হত এবং দুর্দশাগ্রস্ত ও দুরবস্থার জীবন কাটাত।
2️⃣কলকাতাবাসী লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা থেকে কীভাবে বক্সা পৌঁছেছিলেন, তার বর্ণনা করো। অথবা, মেঘের গায়ে জেলখানা দেখার যাত্রী লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় যাত্রাপথে বর্ণনা দাও।
✅’মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় বিশ শতকের পাঁচের দশকের কোনো একদিন বাড়ি থেকেহাওড়া স্টেশনে পৌঁছে সাহেবগঞ্জগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ওঠেন। সেই ট্রেন ঢিমে তালে বাংলার সীমান্ত পেরিয়ে পরদিন অবিভক্ত বিহারের সাহেবগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছোয়। সেখান থেকে গঙ্গানদীর সকরিগলি ঘাটে পৌঁছোন লেখক।
তারপর রাতের বেলাতেই খেয়াপারাপারকারী স্টিমারে নদী পার হয়ে পৌঁছোন মণিহারি ঘাটে। গঙ্গার ঘাট থেকে নেমে নিয়ে লেখক পৌঁছোন স্টেশনে। মিটারগেজ লাইনের সেই ট্রেন যাত্রা শুরু করে কাটিহার, পূর্ণিয়া, কিষাণগঞ্জ অতিক্রম করে একসময় বাংলাদেশের প্রবেশ করে। ট্রেন এরপর হিমালয়ের কাছাকাছি পৌঁছোয়। নকসালবাড়ি, হাতিঘিষা, বাঘডোগরা প্রভৃতি স্টোশন পার হয়ে ট্রেন শিলিগুড়ি পৌঁছোয়। শিলিগুড়ি জংশন পার হয়ে ট্রেনটি ডানদিকে বাঁক নিয়ে কিছুটা এগিয়ে তিস্তা রেল সেতু অতিক্রম করে।
লেখক তখন নীচ দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোত তিস্তাকে দেখতে পান। এক ছোট্ট স্টেশনে ট্রেন থামলে লেখক কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ দেখতে পান। এরপর একসময় রাজাভাত খাওয়া স্টেশন এলে সেখানে নেমে পড়েন তিনি। সেখান থেকে ট্রাকে সওয়ারি হয়ে দীর্ঘ চা-বাগান এলাকা অতিক্রম করে পাহাড়ি চড়াই পথে একসময় পৌঁছোন ‘সাম্ভালবাড়ি’। সেখান থেকে দু-মাইল চড়াই পথ পায়ে হেঁটে লেখক পৌঁছোন বক্সায়।
3️⃣’মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বনে জেলের কয়েদিদের দুর্দশা ও দুরবস্থার বর্ণনা দাও। অথবা, “জেলখানা একটা আজব জগৎ”। – সেই জগতের যে চিত্র ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ পাঠে ধরা পড়েছে, তা নিজের ভাষা লেখো।
✅‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, “জেলখানা একটা আলাদা জগৎ”। উঁচু পাঁচিলে ঘেরা বক্সা জেলখানায় কয়েদিদের ঠাসাঠাসি করে থাকতে হত। সকালে খোলা প্রাঙ্গণে তারা থাকতে পারত। ঢোকা-বেরোনোর সময় তাদের আচরণে কোনোরকম ভুলত্রুটি হলেই তাদের কপালে জুটতে জমাদারের ডান্ডা অথবা লোহার নাল বসানো বুটজুতোর লাথি। কয়েদিদের দিয়ে জেলখানার চৌহদ্দির ভিতরকার হাড়ি-মেথরের কাজ থেকে শুরু করে দড়িচাল্লি, ধোবিচাল্লি, ঘানিঘর, মিস্ত্রিঘর, ছাপাখানা, গোয়ালঘর, তরকারি-বাগান প্রভৃতি স্থানের যাবতীয় কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করানো হত।
কোনো কয়েদির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কেসটেবিলে ডাক পড়ত তার। অপরাধ প্রমাণিত হলে ডিগ্রিবন্ধ, মার্কাকাটা, কম্বল-ধোলাই, মাড়ভাত, পায়ে বেড়ি ইত্যাদির কোনো-না-কোনো একটি শান্তি জুটত তার কপালে। জেলের কয়েদিরা একবছর ভালোভাবে বন্দিজীবন কাটালে তাদের শান্তির মেয়াদ তিনমাস কমে যেত। এটাই হল মার্কা।
কোনোরকম বেচাল দেখলেই এই মার্কা-প্রাপ্তির স্বাভাবিক অধিকার থেকে কয়েদিদের বঞ্চিত করা হত। বেচাল করলে কোনো কোনো কযেদিকে কম্বলে ঢেকে প্রহার করা হত। আবার কোনো বেচাল কয়েদির পায়ে পরিয়ে দেওয়া হত লোহার ভারী বেড়ি। জেলের নিয়মশৃঙ্খলা ভাঙলে বা জেলের কর্তাব্যক্তিদের তোয়াজ না করলে কয়েদিদের এইসব শান্তি ভোগ করতে হত। এভাবেই বক্সা জেলের কয়েদিরা অত্যাচারিত হত এবং দুর্দশাগ্রস্ত ও দুরবস্থার জীবন কাটাত।
4️⃣“আজ ইংরেজ নেই, তবু আগের ব্যবস্থাই বহাল আছে বক্সায়।”—কোন্ ব্যবস্থার কথা এখানে বলা হয়েছে ? যখন বক্সায় ইংরেজরা বন্দিশিবির তৈরি করেছিল, তখন সেখানকার পরিবেশ কেমন ছিল ?
✅কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, ইংরেজ চলে গেলেও বক্সাতে তখনও আগের অবস্থাই বহাল ছিল। যাদের একমাত্র অপরাধ হল দেশকে ভালোবাসা—সেইসব দেশবাসার স্থান তখনও ছিল বক্সা জেলখানা, লেখক-উল্লিখিত সময়েও তাই। এমনকি, দু-যুগ আগেও যাঁরা এখানে ছিলেন, এমন অনেককেই তখনও পর্যন্ত বক্সা জেলখানায় থাকতে দেখেন লেখক।
তাই খা সাহেব, নীরদ চক্রবর্তী, শিবশংকর মিত্রকে এ জেলখানায় দেখেন লেখক। বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দী বিস্তৃত মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিগর্ভ ইতিহাসে যাঁর জীবন উৎসর্গীকৃত হয়ে আছে—সেই সতীশ। পাকড়াশিও রয়েছেন বক্সা জেলে। এ ছাড়া এই জেলে রয়েছে। বাংলাদশের অগণিত মানুষের অন্যান্য বিশ্বস্ত প্রতিনিধিরাও।
যে সমস্ত মানুষ দুরন্ত অজয় নদের তীরে দাঁড়িয়ে বন্যারোধী বাঁধ বেঁধেছেন, যাঁরা অন্ধকার খনিগর্ভে পৌঁছে দিয়েছেন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় নতুন দিনের সুসমাচার, হেলে-পড়া ধানের শিষগুলোকে যাঁরা সাহস জুগিয়ে বর্শার ফলার মতো টানটান করে দিয়েছেন, কারখানার চিমনির ধূমায়িত মুখে যাঁরা যুগিয়ে দিয়েছেন আগুনের ভাষা-তাঁদের সবার ঠাঁই হয়েছে বক্সার জেলে। এই ব্যবস্থার কথাই বলা হয়েছে উদ্ধৃতিটিতে।
ভুটানের রাজার কাছ থেকে দীর্ঘকালীন মেয়াদে ইজারা নিয়ে ইংরেজরা যখন বক্সার জেল তৈরি করে, তখন এই অঞ্চলটা ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা। পাহাড়ের কাছে গেলে তখনও বাঘের ডাক শোনা যেত। তা ছাড়া এই অঞ্চলের বিষধর সাপেরা লেখকের বক্সা-ভ্রমণের সময়েও ফণা তুলে ঘুরে বেড়াত। বক্সার বায়ু খুব দূষিত। আর ঝরনার জলে জীবাণু থিকথিক করে। এই অঞ্চলের আশেপাশে না আছে দোকান-বাজার, না আছে হাসপাতাল। তাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মৃত্যু এখানে অনিবার্য।
5️⃣“মেঠো রাস্তার ওপর দিয়ে কাতারে কাতারে চলেছে মানুষ”—লেখক কখন, কোথায় এই দৃশ্য দেখেছিলেন ? সেদিন আর কোন্ কোন্ দৃশ্য দেখেছিলেন লেখক ?
✅পদাতিকের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, উত্তরবঙ্গের বক্সা যাওয়ার জন্য লেখক যখন মণিহারি ঘাট থেকে ট্রেনে চেপে কাটিহার, পুর্ণিয়া, কিষানগঞ্জ অতিক্রম করে একসময় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন, তখন ট্রেনে বসে লেখক দেখতে পান, পাশের মেঠো রাস্তার ওপর দিয়ে কাতারে কাতারে মানুষ হেঁটে চলেছে।
লেখক সেইসময় আরও লক্ষ করেন যে, লোকগুলির মাথায় রংবেরঙের পাগড়ি। পাশে পাশে চলেছে গোরুর গাড়িও। গোরুর গাড়ির ছই-এর ওপর রয়েছে লাল ও নীলরঙা কাগজের পতাকা। সেইসব গোরুর গাড়ির চাকায় ওড়া ধুলো আকাশে ঠেলে উঠেছে। কয়েকটা ছোটো ছেলেকে সেই মেঠো পথ ধরে হেঁটে যেতে দেখেছেন লেখক। ওই ছেলেদের পেটগুলো অপুষ্টিজনিত কারণে ছিল বড়ো। তাদের সবার হাতে ছিল তালপাতার ভেঁপু।
ট্রেনটা আর একটু এগিয়ে গেলেই লেখক বুঝতে পারেন যে, তারা সবাই মেলা থেকে ফিরেছে। ট্রেনটি এরপর একটি স্টেশনের কাছে পৌঁছোলে লেখক অদূরবর্তী একটি মাঠে অসংখ্য খোলা ছাতা দেখতে পান। প্রবল রোদ্দুরে সেই মেলার মাঠে উপুড় হয়ে বসা ছাতাধারীদের অবশ্য লেখক দেখতে পাননি। লেখক বুঝতে পারলেন, নিশ্চয় কোনো মজার অনুষ্ঠান সেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাঠের চারদিকে অনেকগুলো তাঁবু ফেলা রয়েছে। সমস্ত এলাকাটা তখন গমগম করছিল। সেদিন চলন্ত ট্রেনে বসে এসব দৃশ্যই দেখেছিলেন লেখক।
6️⃣সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বন করে বক্সা-জেলের অভিজাত কয়েদিদের বর্ণনা দাও। এবং তাদের প্রতি জেল কর্তৃপক্ষের আচরণ পর্যালোচনা করো।
✅‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় বক্সা জেলখানা ভ্রমণকালে একদল অভিজাত কয়েদির সাক্ষাৎ পান। খাদ্যে ভেজাল বা বিষ মিশিয়ে অথবা নোট জাল করে কিংবা ব্যাংক লুঠ করে এরা জেলে এসেছে। অথচ বুক ফুলিয়ে জেলে এরা ঘুরে বেড়ায়। এইসব তথাকথিত ভদ্র, শিক্ষিত কয়েদিদের জেলের কর্তাব্যক্তিরা আপনি-আজ্ঞে করে। অন্যান্য কয়েদিরাও তাদের সম্মান করে। এরা অধিকাংশই অভিজাত এবং ধনী পরিবারের ছেলে। ট্রামে-বাসে কারও পকেট মারেনি তারা, ছুরি দেখিয়ে কারও হাত থেকে টাকার থলি ছিনিয়েও নেয়নি।
ছোটোলোক একেবারেই নয় তারা। রীতিমতো স্কুল-কলেজে পড়া যুবক। অভাব কাকে বলে, তাও কখনও জানতে পারেনি এরা। এমন নরম মনের যুবক তারা যে, রক্ত দেখলে তাদের মূর্ছা যাবার জোগাড় হয়। তবুও তারা ব্যাংক লুঠ করে হাজার হাজার গরিব বা বিধবাকে সর্বস্বান্ত করেছে, খাদ্যে বিষাক্ত ভেজাল মিশিয়ে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, নোট জাল করে হাজার হাজার পরিবারকে পথের ভিখিরি করে দিয়েছে।
এসব করেও জেলে এসে তারা পরম সুখে বাস করছে। জেলের সুয়োরানির ছেলে তারা। অন্যদিকে যারা অভাবের তাড়নায় কারও পকেট মেরেছে অথবা জমি হারিয়ে জমিদারের পাইক বরকন্দাজদের সঙ্গে লাঠালাঠি করেছে—তারা জেলে নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে। এইসব গরিব, অকুলীন কয়েদিরা হল জেলের দুয়োরানির ছেলে। সুতরাং বক্সার জেল কর্তৃপক্ষ অভিজাত কয়েদিদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণই করে।
7️⃣সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বন করে জেলের সাধারণ কয়েদিদের ওপর জেল। কর্তৃপক্ষ এবং জেল-কর্মচারীদের অত্যাচার বর্ণনা করো।
✅‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, বক্সা জেলখানায় কয়েদিদের পশুর পালের মতো খোঁয়াড়ের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে লকআপে থাকতে হত সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। সকালে খোলা প্রাঙ্গণে তারা থাকতে পারত। এই ঢোকা বেরোনোর সময় তাদের আচরণে কোনোরকম ভুলত্রুটি ঘটলে তাদের পিঠে জমাদারের ডাণ্ডা পড়ত অথবা বর্ষিত হত লোহার নাল বসানো বুটজুতোর লাথি। জেলখানার চৌহদ্দির ভিতরকার সমস্ত কাজ, হাড়ি-মেথরের কাজ থেকে শুরু করে দড়িচাল্লি, ধোবিচাল্লি, ঘানিঘর, মিস্ত্রিঘর, ছাপাখানা, গোয়ালঘর, তরকারি-বাগান – প্রভৃতি স্থানের যাবতীয় কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করানো হত কয়েদিদের দিয়ে।
কোনো কয়েদির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কেসটেবিলে ডাক পড়ত তার। অপরাধ প্রমাণিত হলে ডিগ্রিবন্ধ, মার্কাকাটা, কম্বল-ধোলাই, মাড়ভাত, পায়ে বেড়ি—ইত্যাদির কোনো-না কোনো একটি শাস্তি জুটত তাদের কপালে। জেলখানায় যেসব ছোটো, বদ্ধ কুঠুরি থাকে, তা হল ডিগ্রি। ডিগ্রিবদ্ধ সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে মাসের পর মাস সেই নির্জন কুঠুরিতে বন্ধ করে রাখা হত। দরজার নীচের সরু ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হত তাদের খাবার। অন্যদিকে, জেলের কয়েদিরা একবছর ভালোভাবে বন্দিজীবন কাটালে তাদের শাস্তির মেয়াদ তিনমাস কমে যেত। এটাই হল মার্কা।
কোনোরকম বেচাল দেখলেই কয়েদিদের মার্কা কাটা হত, অর্থাৎ মার্কা-প্রাপ্তির স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হত তারা। বেচাল কয়েদিকে কম্বল দিয়ে ঢেকে যে প্রহার করা হত, তাই-ই কম্বল-ধোলাই। আবার কোনো বেচাল কয়েদির পায়ে পরিয়ে দেওয়া হত লোহার ভারী বেড়ি। জেলের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভাঙলে বা জেলের কর্তাব্যক্তিদের তোয়াজ না করলে কয়েদিদের এইসব শাস্তি ভোগ করতে হত। এভাবেই বক্সা-জেলের কয়েদিরা অত্যাচারিত হত।
8️⃣সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বন করে বক্সা জেলখানার বর্ণনা দাও।
✅সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনায় উল্লিখিত বক্সা জেলখানাটি ছিল বক্সা তেরাস্তার একটি রাস্তার শেষে। জয়ন্তী পাহাড় এবং ভুটান পাহাড়ে ওঠার রাস্তা দুটি বাদে অবশিষ্ট রাস্তাটিই ঘাস ও কাঁকরে ভরা ছোটো একটা মাঠ পেরিয়ে কাঁটাতারে ঘেরা বক্সা জেলখানার পাথরের সিঁড়িতে গিয়ে শেষ হয়েছিল। দূর থেকে পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত জেলখানাটিকে লেখকের পাহাড়ের হাঁটু বলে মনে হচ্ছিল।
আসলে পাহাড়টি কেটে ওপর-নীচে পরপর তিনটি বড়ো বড়ো খাঁজ তৈরি করে তার ওপরই জেলখানাটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলেই তাকে ওরকম দেখাচ্ছিল। পাহাড়ের তিনটি খাঁজেই রয়েছে অসংখ্য সারিবদ্ধ ঘর। সেই ঘরগুলোর দেয়াল হল পাথরের, ছাদ হল রং করা কাঠের। প্রতিটি ঘরেই ছাদের কাছে গরাদ-আটা গবাক্ষ আর দুটো করে দরজা।
একটা পেটাই করা লোহার, অন্যটি মোটা কাঠের। প্রতিটি ঘরের সামনে রয়েছে কাঁটাতার ঘেরা ছোট্ট উঠোন। জেলখানায় চৌহদ্দির মধ্যে যে পরিমাণ কাঁটাতারের বেড়া, সব এক করলে লম্বায় তা কয়েক মাইল পর্যন্ত হবে। জেলখানার ভেতরের রাস্তাগুলি এঁকেবেঁকে এদিক-ওদিক চলে গেছে। ইলেকট্রিক পোস্টগুলিকে দিনের বেলাতে ফাঁসির মঞ্জু বলে মনে হচ্ছিল লেখকের। পাহাড়ের ওপর জেলখানার চৌহদ্দির বাইরে একশো-হাত অন্তর রয়েছে উঁচু করে তৈরি করা সেন্ট্রি-বক্স। সেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে বন্দুকধারী পাহারাওয়ালারা দিন-রাত পাহারা দেয়।
লেখক জেলখানাটির সদর দরজার ছোটো গেটের মধ্য দিয়ে মাথা ঝুঁকে ভেতরে ঢোকেন। ভেতরে ঢুকে বাঁদিকে দেখতে পেলেন জেলের অফিস, সেপাইদের শিবির এবং নীচুপদের কর্মীদের কোয়ার্টার। আরও দুটো ফটক পার হওয়ার পর লেখক খোলা আকাশের দেখা পান। জেলের ভেতরের দেয়ালের গায়ে ছাপার অক্ষরে লেখা উপদেশাবলিও দেখতে পেয়েছিলেন লেখক।
9️⃣’মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বন করে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রাজাভাতখাওয়া থেকে সান্তালবাড়ি অবধি যাত্রাপথের বর্ণনা দাও।
✅‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রাজাভাতখাওয়া স্টেশন থেকে ট্রাকে যাত্রা শুরু করে বেশ কিছুটা পথ চা-বাগান এলাকার মধ্য দিয়ে যান। পিচ-রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে ধড়হীন মানুষের মতো ধোঁয়ায় ঢাকা পাহাড়শ্রেণি তাঁর চোখে পড়ে। ট্রাকটি ফাঁকা, সুন্দর রাস্তা দিয়ে এমন জোরে চলতে থাকে যে, লেখকের মনে হতে থাকে এই বুঝি ট্রাকটি পাশের গড়ানো জমিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দু-পাশের সবুজ চা-বাগান এবং সেখানে বেতের ঝুড়ি পিঠে বেঁধে কাজ করা চা-শ্রমিকদের দেখতে থাকেন তিনি। তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ চেহারা এবং পোশাক-পরিচ্ছদ, পাতা দিয়ে ছাওয়া বাসস্থান, তাদের শুকনো মুখ লক্ষ করতে থাকেন তিনি।
পথে যেতে যেতে চা সাহেবদের ফুল-বাগান শোভিত রংচঙে বাংলো এবং ঝাঁ-চকচকে গাড়িও চোখে পড়ে তাঁর। হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি খেয়ে তিনি দেখেন যে, চা-বাগান এলাকা অতিক্রম করে ট্রাকটি খানাখন্দে ভরা মেঠো রাস্তা দিয়ে চলেছে। মাঝে মধ্যে সে রাস্তায় পড়ছে কাঠের সেতু। সেই মেঠো বনপথ দিয়ে প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে ট্রাকটি একসময় ডুয়ার্সের ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করে।
তারপর ট্রাকটি নুড়ি-পাথরপূর্ণ পথে চলতে শুরু করলে সামনে গন্ডারের পিঠের মতো কালো একটা দেয়াল চোখে পড়ে লেখকের। তিনি বোঝেন যে, চড়াই পথে চলছে ট্রাকটি। সেটি কানে তালা ধরানো গোঁ গোঁ আওয়াজও করতে থাকে। এভাবেই বেশ কিছুটা ওঠার পর তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা একজায়গায় এসে ট্রাকটি থেমে যায়। ট্রাক থেকে নেমে লেখক দেখেন যে, সামনে কাঠের ফলকে লেখা রয়েছে ‘সান্তালবাড়ি’। এভাবেই লেখকের ট্রাক যাত্রার সমাপ্তি ঘটে। কারণ, সেখান থেকে বক্সা অবধি দু-মাইল চড়াই পথে ট্রাক যেতে পারে না।
- Type of Barriers Communication: Examples Definition and FAQs
- BOLDEPOTA AMINIA SENIOR MADRASAH (FAZIL)
- মেঘের গায়ে জলখানা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
- কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
- ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | |||
5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 |
12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 |
19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 |
26 | 27 | 28 | 29 | 30 |