You are currently viewing TOP 10 প্রশ্ন উত্তর | বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন
TOP 10 প্রশ্ন উত্তর | বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন

TOP 10 প্রশ্ন উত্তর | বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন

  1. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে কৃষকসমাজ যুক্ত ছিল না কেন ? 
  2. অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দাও। 
  3. বারদৌলি সত্যাগ্রহ কীভাবে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণীত ছিল ?
  4. একা আন্দোলনকে কীভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ?
  5. অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের ভূমিকা লেখো। 
  6. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও। 
  7. মোপলা বিদ্রোহ কী ? বিবরণ দাও।
  8. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।
  9. ‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ’ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
  10. বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।

সূচনা:বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন আনে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাড়শের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা স্বদেশি আন্দোলনে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন।

বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জি

১৯০১ খ্রি.-রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-এরষ্ঠ১৯২৫ খ্রি.-ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা
১৯০৬ খ্রি. – লখনউ-এ সর্বভারতীয় কিষান সভা প্রতিষ্ঠা১৯২৫ খ্রি.-লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা
১৯০৮ খ্রি-বোম্বাইয়ে শ্রমিক ধর্মঘট১৯২৮ খ্রি.-বোম্বাইয়ে বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট
১৯০৯ খ্রি.- ফরওয়ার্ড ব্লক-এর প্রতিষ্ঠা১৯২৮ খ্রি. বারদৌলি সত্যাগ্রহ
১৯১৮ খ্রিঃ যুক্তপ্রদেশে কিষান সভা প্রতিষ্ঠা১৯২৯ খ্রি.-মিরটি ষড়যন্ত্র মামলা
১৯২০ খ্র. ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস এর প্রতিষ্ঠা১৯৩০-৩২ খ্রি. –বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের খাজনা প্ৰদাম ব্য
১৯২০ খ্রি.-ভাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা১৯৩৪ খ্রি. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা
১৯২০-২১. বাংলায় ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট১৯৩৬ খ্রি. – সারা ভারত কিষান কংগ্রেস-এর প্রতিষ্ঠা
১৯২১-২২ খ্রি.-যুপ্রদেশে একা আন্দোলন১৯৩৭ খ্রি. – লিগ অব র্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন এর প্রতিষ্ঠা
১৯২২ খ্রি.-চৌরিচৌরার ঘটনা১৯৩৮ খ্রি—অন্ম উপকূলে কৃষকদের পদযাত্রা
১৯২৪ খ্রি. –কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা১৯৪০ খ্রি. র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠা
বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জি, bnginfo.com

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে কৃষকসমাজ যুক্ত ছিল না কেন ?

উ.বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনর সময় কৃষক আন্দোলন বড়োলাট লর্ড কার্জন জাতীয় কংগ্রেসের পীঠস্থান বাংলা ও বাঙালির ঐক্য ধ্বংস

করার উদ্দেশ্যে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দু-ভাগ করেন। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হয় কলকাতা এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ

পূর্ববঙ্গের রাজধানী হয় ঢাকা। এর ফলে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন (১৯০৫-১১ খ্রি.) শুরু হয়। এই আন্দোলনে জাতীয়

কংগ্রেস সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। নরমপন্থী কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে ‘গভীর জাতীয় বিপর্যয়’ আখ্যা

দিয়ে তা প্রতিরোধের ডাক দেন। কংগ্রেস বিভিন্ন প্রচার-পুস্তিকা, জনসভা প্রভৃতির মাধ্যমে গণসংযোগ গড়ে তুলে আন্দোলনকে শক্তিশালী করার

চেষ্টা চালায়। আন্দোলনে ‘বয়কট’ ও ‘স্বদেশি’ আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় ‘বয়কট’ বলতে বিলাতি জিনিস বর্জন করা এবং “স্বদেশি’ বলতে দেশে

তৈরি জিনিসের ব্যবহার বোঝায়। কিন্তু কংগ্রেস এই আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করে অর্থনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো চেষ্টা করেনি। অরবিন্দ ঘোষ আশঙ্কা করেন যে, কৃষকরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করলে দেশপ্রেমিক জমিদাররা ক্ষুব্ধ হবেন। ড. বিপানচন্দ্র বলেন যে,

এই আন্দোলন বাংলার কৃষক সমাজকে স্পর্শ করতে পারেনি। ড. সুমিত সরকার বলেছেন যে, ‘সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি’র অভাবে এই

আন্দোলনে কৃষকদের যুক্ত করা যায়নি। তবে এই সময়পর্বের মধ্যে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কৃষকরা ৫২৩টি গ্রাম্য বিবাদ নিয়ে সরকারি আদালতে না

গিয়ে অশ্বিনীকুমার দত্তের ‘স্বদেশ বান্ধর সমিতি’-তে গিয়ে মীমাংসা করে। পূর্ববঙ্গে দরিদ্র কৃষকরা তাদের জমিদারের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।

বিহারের চম্পারণ জেলায় মতিহারিবেতিয়া অঞ্চলে নীলচাষিরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে। লর্ড মিন্টো ১৯০৭-এ পাঞ্জাবে

এক নতুন আইন চালু করে অতিরিক্ত জলকর দিতে কৃষকদের বাধ্য করেন। লালা লাজপত রায় ও অজিত সিংহ কৃষকদের সাথে এই আইনবিরোধী

আন্দোলনে যোগ দেন। ফলশ্রুতিতে মিন্টো আইনটি বাতিল করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মেবারের বহু কৃষক সীতারাম দাস নামে

এক সাধুর নেতৃত্বে মহারানার বিরুদ্ধে কর বন্ধের আন্দোলন করে।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উ. অহিংস অসহযোগ আন্দোলন-গর্বে কৃষক আন্দোলন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতা হিসেবে উঠে

আসেন মহাত্মা গান্ধি। তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপৎ রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পরিকল্পনা পেশ করেন। প্রস্তাব পাস হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.)

ছড়িয়ে পড়ে। (এন্ধিজির ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষকরাও এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে (৫ ফেব্রুয়ারি) যুত্তরপ্রদেশের

গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নিসংযোগ করে ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারলে গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে

নেন। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন জায়গায় কৃষক আন্দোলন চালু ছিল।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় যুক্তপ্রদেশে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) কৃষক আন্দোলন খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর আগে কৃষকদের ওপর

জমিদারদের অত্যাচার ও শোষণের ফলে মদনমোহন মালব্যের সমর্থনে গৌরীশঙ্কর মিশ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ ত্রিবেদীর উদ্যোগে যুক্তপ্রদেশে কিষান সভা

(১৯১৮ খ্রি.) গড়ে ওঠে। এই সভার অনেক সদস্যই কংগ্রেসের অধিবেশনে উপস্থিত থাকতেন। এই সভা কৃষকদের নিয়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে

তোলে। এর প্রধান নেতা ছিলেন। বাবা রামচন্দ্র। কিষান সভার আন্দোলন কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে মিশে গেলে আন্দোলন প্রবল হয়ে

ওঠে। রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, সুলতানপুর প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। অবশেষে সরকার রামচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে বিদ্রোহ

দমন করে। তবে কৃষকদের লুঠতরাজ ও ছোটোখাটো সংঘর্ষের ঘটনা, জমিদারদের বিরোধিতা প্রভৃতির ফলে মহাত্মা গান্ধি এই কৃষক আন্দোলনকে

সমর্থন করেননি। বাবা রামচন্দ্রের গ্রেপ্তারের পর কৃষকদের উদ্যোগে ‘একা আন্দোলন’ ও ‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন’

শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাবা রমচন্দ্র মুক্তিলাভের পর জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘অযোধ্যা কিষানসভা’ (১৯২০ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

আন্দোলনের চাপে সরকার ‘অযোধ্যা খাজনা আইন’ (১৯২০ খ্রি.) পাস করে কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমনে বাধ্য হয়। অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলনের

প্রভাবে কেরালার মালাবার অঞ্চলে মুসলিম মোপলা কৃষকরা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ হাজি-র নেতৃত্বে জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু

করে। এটি মোপলা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। বিদ্রোহের তীব্রতায় আতঙ্কিত হয়ে সরকার ইয়াকুব হাসান, আলি মুসালিয়ার, গোপাল মেনন,

বাধবন নায়ার প্রমুখকে গ্রেপ্তার করে।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ কীভাবে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণীত ছিল ?

উ. বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন : গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষই ছিল নিম্নবর্ণের

‘কালিপরাজ’ শ্রেণিভুক্ত। তাদের বেশিরভাগই ছিল ভূমিহীন খেতমজুর বা ভাগচাষি। তারা ‘হালি প্রথা অনুসারে বংশানুক্রমে উচ্চবর্ণের জমি মালিকদের

অধীনে শ্রমিকের কাজ করত। ‘কালিপরাজ’ কৃষকরা ছিল উচ্চবর্ণের উিজলিপরাজ’ জনগোষ্ঠীর দ্বারা সীমাহীন। এখানকার গান্ধিবাদী সত্যাগ্রহী নেতা

কল্যাণজি মেহড়া ও দয়ালজি দেশাই ‘হালি’প্রথা, মদ্যপান, পণপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এখানকার কৃষকদের সচেতন করে তোলেন। গঠনমূলক কর্মসূচি

হিসেবে বারদৌলি অঞ্চলে বিদ্যালয়, সত্যাগ্রহ শোষণ, দারিদ্র্য ও অবজ্ঞার শিকার। অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল

শিবির বা আশ্রম প্রভৃতি স্থাপন করা হয়। সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘পতিদার যুবক মণ্ডল’ গড়ে তোলা হয়। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভয়ানক বন্যার ফলে

বারদৌলির কৃষকদের ফসল নষ্ট হলে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তা সত্ত্বেও সরকার বারদৌলির কৃষকদের উপর প্রথমে ৩০ শতাংশ এবং পরে তা

পরিবর্তন করে ২১.৯৭ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে কৃষকরা খাজনা বন্ধ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গান্ধিবাদী কংগ্রেস

নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্যাটেল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বারদৌলির কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে সত্যের পথে থেকে যে অহিংস

প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন তা ‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত। প্যাটেল বারদৌলি তালুককে ১৩টি অঞ্চলে ভাগ করে ১৩ জন নেতাকে

সত্যাগ্রহ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকলে আন্দোলনে শামিল হয়। নরহরি পারিখ, রবি শঙ্কর ব্যাস, মোহনলাল পাণ্ডে প্রমুখ

প্যাটেলের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। সেখানকার মেয়েরা তাঁকে ‘সর্দার’ উপাধি দেন। মিঠুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, শারদা মেহতা, ভক্তি বাই

প্রমুখ মহিলা এই আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। সত্যাগ্রহের খবর শীঘ্রই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশবাসী সাগ্রহে আন্দোলনের খবর রাখতে শুরু

করে। আন্দোলন বিরোধীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। আন্দোলনের সমর্থনে বম্বে আইনসভার সদস্য কে. এম. মুন্সি ও লালজি নারাণজি

পদত্যাগ করেন। গান্ধিজিও বারদৌলিতে এসে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি ৬:০৩

শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি ঘোষণা করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।

একা আন্দোলনকে কীভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ?

উ.একা আন্দোলন সরকার বাবা রামচন্দ্রকে কারারুদ্ধ করলেও যুক্তপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যা অর্থাৎ হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ

প্রভৃতি জেলায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগ এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে কৃষক আন্দোলন আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা একতাবদ্ধ

থাকার শপথ নেওয়ায় এর নাম হয় ‘একা’ বা ‘একতা’ আন্দোলন। কৃষকদের নির্ধারিত করের ওপর আরও বাড়তি ৫০ শতাংশ নতুন কর আরোপ, কর

আদায়ে কৃষকদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার, মালিকের জমি ও খামারে বিনা মজুরিতে কৃষকদের বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে

ক্ষুদ্ধ হয়ে কৃষকরা আন্দোলনে শামিল হয়। কংগ্রেস ও খিলাফৎ নেতারা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানান।

চরমপন্থী নেতা মাদারী পাশীর নেতৃত্বে আন্দোলন খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অপর নেতা বাবা পরিষদাস স্বরাজের দাবি করেন। আন্দোলনকারী

কৃষকরা শপথ নেয় যে তারা নথিভুক্ত কর ছাড়া অন্য কোনো করের অর্থ দেবে না; অপরাধীদের সাহায্য করবে না, বেগার শ্রম দেবে না; জমি থেকে

উৎখাত করলেও জমি ছেড়ে চলে যাবে না; পঞ্চায়েতের যাবতীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবে। কিন্তু ‘একা’ আন্দোলন অল্পদিনের মধ্যেই অহিংস পথ ছেড়ে

হিংসার পথ ধরলে কংগ্রেস ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যান। সরকারের তীব্র দমননীতির ফলে কৃষকরাও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের

মার্চ মাস নাগাদ আন্দোলন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের ভূমিকা লেখো।

উ. ভারতে, ব্রিটিশ শাসনের আমলে যেসব ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলন হয়েছিল তাতে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২) ছিল অন্যতম

গণ আন্দোলন। মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবি বা ছাত্রসমাজ শুধু নয় আপামর ভারতবাসী এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিল,

তার মধ্যে কৃষক সম্প্রদায় ছিল অন্যতম মূল উপাদান। 

(i) উত্তর ভারতের পরিস্থিতি :- 

অহিংসা অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতম আকার ধারণ করে। 

বাংলা: অসহযোগ আন্দোলন পর্বে বাংলায় কৃষক আন্দোলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে কাঁথি ও তমলুক মহকুমায় ইউনিয়ান

বোর্ড বিরোধী আন্দোলন ও বীরভূমে জীতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজশাহীতে সোমেশ্বর প্রসাদ চৌধুরির নেতৃত্বে আন্দোলন চলতে থাকে।

নীলফমারিতে মুসলিম কৃষকরা জনৈক ‘গান্ধি দারোগা’-র অধীনে একটি স্বরাজ থানা স্থাপন করে।

বিহার: দ্বারভাঙ্গা, মজঃফরপুর, পুর্নিয়া, ভাগলপুর, মুঙ্গেরে কৃষক বিদ্রোহ দেখা যায়। স্বামী বিদ্যানন্দের নেতৃত্ব মধুবনী মহকুমার নারার গ্রামে

বিদ্রোহিরা বিক্ষোভ প্রকাশ করে। সীতামারি ছিল কৃষক বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র।

উত্তরপ্রদেশ: উত্তরপ্রদেশ কৃষক আন্দোলন সর্বপেক্ষা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রতাপগড় ও রায়বেরিলিতে কৃষক বিদ্রোহ শুরু। পরে ফৈজাবাদ ও

সুলতানপুরেও কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯২০ খ্রিঃ বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে ‘অযোধ্যা কিষাণ সভা’ গঠিত। পরবর্তীতে ১৯২১ খ্রি শেষদিকে বারবাকি,

সীতাপুর, হরদে অঞ্চলে মাদারির পাসীর নেতৃত্বে ‘একা আন্দোলন’ হয়।

রাজস্থান: রাজস্থানও ছিল কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান অঞ্চল। বিজয় সিং-এর নেতৃত্বে বিজোলিয়া। মতিলাল তেজওয়াতের নেতৃত্বে মেবারে

বিদ্রোহ হয়। আলোয়ারের বিক্ষুব্ধ জনতা গুরগাঁও জেলায় থানা আক্রমণ করে।

(ii) দঃ ভারতের পরিস্থিতি :-

অরণ্য সত্যাগ্রহ: অন্ধের গুন্টুর জেলায় পালনাদ তালুক ও কুডভাপ্পার রায়চোটি তালুকে অরণ্যের অধিকার নিয়ে গান্ধিবাদী কৃষক নেতা কোনাডা

ভেঙ্কটাপ্লাইয়ার নেতৃত্বে ‘অরণ্য সত্যাগ্রহ’ শুরু হয়।

রাম্পা বিদ্রোহ: দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা নামে সর্বাধিক জনপ্রিয় নদী, গোদাবরীর উপত্যকায় রুম্পা উপজাতিদের নিয়ে (১৯২২-২৪ খ্রি.) পর্যন্ত চলা

বিদ্রোহ ‘রাম্পা বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। আপ্লুরি সীতারাম রাজু নামক এক তরুন নেতার অধীনে এই বিদ্রোহ পরিচালিত হয়। ২৫০০ মাইল এলাকা

ছিল বিদ্রোহ অগ্নিতে ভরপুর। আন্দোলন দমন করতে মাদ্রাজ সরকার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচা করতে হয়।

মোপলা বিদ্রোহ: দঃ ভারতে সর্বাপক্ষা ব্যাপক আন্দোলন ছিল এই মোপলা বিদ্রোহ। কেরলের মালবার উপকূলে মুসলিম কৃষকদের বিদ্রোহ ছিল এটি

অহিংসা অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ঘটে চলা কৃষক বিদ্রোহগুলি ছিল মূলত জঙ্গিবাদী তাই গান্ধিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র ছিলনা।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উ. আহংস অসহযোগ আন্দোলনর সময় শ্রমিক আন্দোলন (১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবে শ্রমিকদের

অসামান্য অবদান ভারতীয় শ্রমিকদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। এবছর কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গাখি আমেদাবাদ বস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে সত্যাগ্রহ

আন্দোলন করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সরকারের মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন নিয়ে ভারতীয়দের অসন্তোষ, কুখ্যাত রাওলাট আইন প্রণয়ন,

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড প্রভৃতি ঘটনায় ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা আমেদাবাদে পুনরায় ধর্মঘট ও বিক্ষোভে শামিল হয়। এরপর গান্ধিজির নেতৃত্বে

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.) শুরু হলে ভারতে শ্রমিক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন কংগ্রেস নেতা এই

আন্দোলনে সমর্থন জানান। এসময় বি. পি. ওয়াদিয়া, এন. এম. যোশী, যোসেফ ব্যাপ্তিস্তা, প্রভাত কুসুম রায়চৌধুরি, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুরেন্দ্রনাথ

হালদার প্রমুখ বামপন্থী নেতৃবৃন্দও শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন। তাদের উদ্যোগে শ্রমিকদের নিয়ে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘অল ইন্ডিয়া

ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ (AL.T.U.C) গঠিত হয়। এর প্রথম সভাপতি হন লালা লাজপৎ রায়। এ আই ট. ইউ. সি. এক ইস্তেহারে জাতীয় রাজনীতিতে

অংশগ্রহণের জন্য শ্রমিকদের আবেদন জানায়। এই সময়ের শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সাবিদাওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক

দাবিদাওয়াও যুক্ত হয়েছিল।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, রেলওয়ে, ট্রাম, খনি, চা বাগান প্রভৃতির শ্রমিক ও কুলিরাও আন্দোলনে যোগ দেয়।

১৯২০-২১ খ্রিস্টাব্দে শুধু বাংলাতেই ১৩৭টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়। কলকাতা, বোম্বাই, কানপুর, শোলাপুর, জামালপুর প্রভৃতি স্থানের ওয়ার্কশপ ও উত্তর-

পশ্চিম রেলওয়ের শ্রমিকরা সক্রিয় ধর্মঘট চালায়। আসামের চা বাগানের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক ধর্মঘট করে। কলকাতার ট্রাম, বন্দর ও বিভিন্ন

পাটকলের শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। ইস্টবেঙ্গল রেল ও স্টিমার কোম্পানি, জামশেদপুরের টাটা ইস্পাত কারাখানা প্রভৃতি স্থানে ধর্মঘট হয়। রানিগল্পের

ক্যালাখনিতে শ্রমিকরা স্বামী বিশ্বানন্দ ও স্বামী দর্শনানন্দের নেতৃত্বে ব্যাপক ধর্মঘট করে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে প্রিন্স অব ওয়েলস-এর ভারত

সফর বয়কট করে শ্রমিকরা সারা দেশে ধর্মঘট পালন করে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে শ্রমিক আন্দোলন

কিছুদিনের জন্য দুর্বল হয়ে পড়লেও সিক্লারাভেলু চেট্টিয়ারের নেতৃত্বে শ্রমিকরা মাম্রাজের সমুদ্রতটে ‘মে দিবস’ (১৯২৩ খ্রি.) পালন করে। ১৯২৮

খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলন আবার শক্তিশালী হতে শুরু করে। এবছর সারা দেশে ২০০টি শ্রমিক ধর্মঘট হয় এবং তাতে ৫ লক্ষাধিক

শ্রমিক অংশ নেয়। ধরুণপুর ও লিলুয়ায় রেলওয়ে এবং বাউড়িয়া ও চেশাইল চটকলের শ্রমিকরা ধর্মঘট করে।শ্রমিক ও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করার

উদ্দেশ্যে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে (১ নভেম্বর) বাংলায় কংগ্রেস দলের ভিতরেই ‘লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল

প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম কাজি নজরুল ইসলাম, হেমন্তকুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমদ, সামসুদ্দিন হুসেন প্রমুখ। ১৯২৬

খ্রিস্টাব্দে কুল্পনগরে আয়োজিত নিখিল বলা প্রজা সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই দলের নতুন নামকরণ করেন ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি অব বোল’।

এর সভাপতি হন নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত এবং যুগ্ম-সম্পাদক হন হেমন্তকুমার সরকার ও কুতুবউদ্দিন আহমদ। কিছুদিনের মধ্যে যুক্তপ্রদেশ, বোম্বাই,

পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে এই পার্টির শাখা গড়ে ওঠে। কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ সদস্যদের এই শাখাগুলিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পেজেন্টস্ পার্টির

বাংলা ও বোম্বাই শাখা কংগ্রেস দলের কাছে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং দরিদ্রশ্রেণির আর্থসামাজিক স্বাধীনতা আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করার

আবেদন জানায়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন প্রদেশের শাখাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। দলের

সাধারণ সম্পাদক হন আর. এস. নিম্বকার। এই দলের উদ্যোগে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।

বোম্বাইয়ের শ্রমিক আন্দোলনে পেজেন্টস পার্টি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। এখানে রেল, ছাপাখানা, পৌরসভা, বন্দর প্রভৃতির শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে

আন্দোলন গড়ে তোলে। সাইমন কমিশনের কাজিবুল ইসলাম বিরুদ্ধে বোম্বাই ও কলকাতার শ্রমিকরা হরতাল পালন করে। অন্যান্য রাজ্যেও শ্রমিক

আন্দোলনে পেজেন্টস্ পার্টি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আতঙ্কিত সরকার এই দলের বহু নেতাকে গ্রেপ্তার করে ‘মিরটি ষড়যন্ত্র মামলায়’

(১৯২৯ খ্রি:) অভিযুক্ত করে। ফলে কিছুদিনের জন্য শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।

মোপলা বিদ্রোহ কী ? বিবরণ দাও।

উ. অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও ভয়াবহ কৃষক আন্দোলনটি হয় ১৯২১ সূদুর কেরালা উপকূলের মালাবার অঞ্চলে, যা

মোপলা বিদ্রোহ নামেই ইতিহাসে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ,

কারণ :- (i) এখানে ব্রিটিশ সরকারের ভূমি বন্দোবস্ত নিয়ম অনুসারে হিন্দু সম্প্রদায় নায়ার ও নাম্বুদ্রি জমিদাররা সত্ত্ব স্থাপন করে

মুসলিম মোপলাদের উপর অত্যাচারের উপর অত্যাচার চালায়।

(ii) অযৌক্তিক সামন্ত তান্ত্রিক শোষণ। 

(iii) খালিফার হৃতরাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার ধর্মীয় উন্মদনা।

(iv) অস্পষ্ট প্রজাস্বত্ব আইন। ইত্যাদি কারণে মোলাদের মনে ইংরেজ বিরোধী ক্ষোভের অগ্নি তুষের আগুনের মতো জ্বলতে থাকে এবং অহিংস

অসহযোগ আন্দোলনের সময় খিলাফৎ আন্দোলনের সংযুক্তিতে মোপলারাও বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

নেতৃবৃন্দ :- গান্ধি, আলি ভ্রাতৃদ্বয়, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খাঁ প্রমুখ নেতারা মালাবার পরিভ্রমন করে কৃষকদের বিদ্রোহ

অনুপ্রানিত করেন। পরবর্তী ইয়াকুব হাসান, গোপাল মেনন, মাধবন নায়ার পি. মহদীন কেয়া প্রমুখ ব্যক্তিত্ব আন্দোলনের হাল ধরেন।

চরিত্র বা প্রকৃতি :- অহিংসা অসহযোগ আন্দোলন পর্বে এই আন্দোলন শুরু হলেও মোটেও ইহা অহিংসা ছিলনা বরঞ হিংসার বৃহৎ বহিঃপ্রকাশ

এখানে লক্ষ্য করা যায়। এরা সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করে, পুলিশচৌকি আক্রমণ করে। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার মোপলা গেরিলা যুদ্ধে সামিল

হয়। পরবর্তীতে এই আন্দোলন সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়। এরা ৬০০ হিন্দু নিহত এবং ২৫০০ হিন্দু ধর্মান্তরিক করে।

কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক :- প্রথম দিকে এই আন্দোলন অহিংস অসহযোগের আবহে শুরু হয় এমনকি গান্ধিজি সহ বেশ কিছু গান্ধিবাদী নেতা

এখানে মোপলা কৃষকদের বিদ্রোহ অনুপ্রানিত করে কিন্তু পরবর্তীতে বিদ্রোহ জঙ্গিরূপ ধারণ করায় অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে এর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

পরিনতি :-বিদ্রোহের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে সমানুপাতিক ভাবে সরকারি দমন নীতিও বাড়তে থাকে। সরকার ইয়াকুব হাসান ও ধর্মীয় নেতা আলি

মুসালিয়ারকে গ্রেপ্তার করে এবং মসজিদে হামলা করে। প্রায় ২৩৩৭ জন মোপলাকে হত্যা করে নরাঠম ইংরেজ শাস্ত হয়। ভারতের অভ্যন্তরে

যেসমস্ত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে যে সব বিদ্রোহের অগ্নিশিখার একটি হল মোপলা বিদ্রোহ। ১৯২১ খ্রিঃ ঘটে যাওয়া এই বিদ্রোহ সরকারকে আতঙ্কিত

করে তুলেছিল তাতে সন্দেহ নাই।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উ.ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলন ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে (৩ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, বোম্বাইয়ের প্রায় ৯০

হাজার শ্রমিক যুদ্ধবিরোধী ধর্মঘটে যোগ দেয়। জার্মানির হিটলার ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট রাশিয়াকে আক্রমণ করলে রাশিয়া জার্মানির বিরুদ্ধে

ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। সেজন্য ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিও মিত্রশক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভারতে ব্রিটিশদের সহযোগিতার

নীতি গ্রহণ করে। ফলে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বাধীন ভারতের শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন শুরু করে।”ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের বিরোধিতা করে কমিউনিস্ট পার্টি বরং ব্রিটিশ সরকারকে

সহযোগিতার পথ ধরে। কমিউনিস্ট নেতারা শ্রমিকদেরও আন্দোলন না করার নির্দেশ দেয়। তা সত্ত্বেও শ্রমিকশ্রেণির একটা বড়ো অংশ এসময় ভারত

ছাড়ো আন্দোলনে শামিল হয়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট কংগ্রেস ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন ঘোষণা করে। শুরুতেই আন্দোলনকে ধ্বংস করার

উদ্দেশ্যে সরকার পরের দিনই গান্ধিজি-সহ প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাদের গ্রেপ্তার করে। এর প্রতিবাদে দিল্লি, বোম্বাই, আমেদাবাদ, লখনউ, কানপুর,

নাগপুর, জামশেদপুর, মাম্রাজ, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানের শ্রমিকরা সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে। জামশেদপুরে টাটা ইস্পাত কারখানা

শ্রমিক ধর্মঘটে ১৩ দিন বন্ধ থাকে। শ্রমিকরা জানায় যে, একমাত্র জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই তারা কাজে যোগ দেবে। আমেদাবাদের বস্ত্র-

শ্রমিকরা ৩ মাসেরও বেশি সময় ধর্মঘট চালিয়ে যায়। কমিউনিস্টদের প্রভাবে শ্রমিকদের একটি অংশ এমনিতেই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। এরই

মধ্যে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়লে শ্রমিক আন্দোলনও সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন

ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯৪৫-৪৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিক আন্দোলন আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় দিল্লির লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দি

সেনাদের বিচারের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখায়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই-এ নৌবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং কলকাতায় ‘রশিদ আলি দিবস’

পালিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্লথা জানিয়ে কলকাতা ও বোম্বাই বন্দরে শ্রমিকরা ইন্দোনেশিয়াগামী ব্রিটিশ জাহাজে

অস্ত্র বোঝাই করতে অস্বীকার করে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ে নৌবিদ্রোহ শুরু হলে শ্রমিকরা বিদ্রোহীদের সমর্থনে ধর্মঘট পালন করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের মণ্ডযুদ্ধ বাধে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ৮২০টি এবং ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৬২৯টি শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত হয়।

পর্যালোচনা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের সময় ভারতে বামপন্থার প্রসার ঘটেনি। তাই এই পর্বে ভারতে কৃষক ও শ্রমিক

আন্দোলনের বিশেষ প্রসার লক্ষ করা যায় না। এসময় বাংলায় কৃষক আন্দোলনের কিছুটা প্রসার ঘটে। এরপর থেকে তুলনামূলকভাবে কৃষক

আন্দোলনের চেয়ে শ্রমিক আন্দোলন বেশি সক্রিয় ছিল।

তবে তা মূলত বাংলায় এবং কিছুটা বোম্বাইতে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যান্য প্রদেশে কংগ্রেস নেতারা এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকদের যুক্ত করার জন্য

কাঁপিয়ে পড়েননি। অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময়ও কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনে কংগ্রেসের প্রভাব অব্যাহত ছিল।

তবে এরপর থেকে এদেশে বামপন্থী ভাবধারার যথেষ্ট প্রসার ঘটে।

‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ’ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উ. গুজরাটের সুরাটের নিকট বারদৌলি তালুকে ১৯২৮ খ্রি. নাগাদ এক শক্তিশালী অহিংস সত্যাগ্রহ শুরু হয়, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। 

(i) কারণ :- বারদৌলি তালুকে প্রায় ১৩৭ টি গ্রামে ৮৭,০০০ জন কৃষক তার মধ্যে ছিল কুনবি, প্রতিতদার কৃষক এরা ছিল জমির মালিক আর কালিপ

রাজরা ছিল শোষিত ও নির্যাতিত। এরা ছিল মোট জনসংখ্যা 60%। এই সময় তুলোর দাম কমে যায় তা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার 30% রাজস্ব বৃদ্ধি করে

ফলে কৃষকরা ক্ষুদ্ধ হয়। এছাড়া কালিপরাজদের প্রতিউজালিপরাজদের শোষণ, বেগার খাটানো, নারী নির্যাতন চলত সর্বদাই। পরবর্তীতে সরকার

রাজস্বের পরিমান করেন। 21.97%।

(ii) নেতৃত্ব:- মেহতা ভ্রাতৃদ্বয় এবং দয়ালজি দেশাইয় নেতৃত্বে প্রথম হালি প্রথা, রাজস্ব বৃদ্ধি, সামস্ততান্ত্রিক শোষণের বৃদ্ধিতে আন্দোলন শুরু হয়।

পরবর্তীতে বল্লভভাই প্যাটেল এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহন করে এবং এক্যবন্ধ করে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ক্রমশ বারদৌলি একটি জাতীয়

বিষয় হয়ে ওঠে। বল্লভভাই প্যাটেলের সাংগাঠনিক দক্ষতার আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

(iii) আন্দোলন ও আন্দোলনের প্রসার :- বল্লভ ভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে আন্দোলন দ্রুত গতি লাভ করে। প্যাটেল গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের কৃষকদের

মধ্যে ঐক্য স্থাপনের প্রয়াসে ‘বোম্বাই প্রেসিডেন্সী ল্যান্ড সংঘ’ গঠন করে। অন্যদিকে সরকার আন্দোলন ভাঙার জন্য সরকারের প্রচুর সংখ্যক জমি

বাযেয়াপ্ত করে এবং কালিপরাজদের জমি দিতে চাইলে তা ব্যর্থ হয় এমনকি সরকারে বিভেদনীতি এখানে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বারদৌলি অঞ্চলে

সত্যাগ্রহীরা গঠনমূলক কর্মসূচী হিসাবে বিদ্যালয়, ৬ টি সত্যাগ্রহ শিবির, ‘পতিদার যুবক মন্ডল’ গড়ে তোলে। বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে

আন্দোলন পরিচালনা জন্য ১৩ জন নেতাকে বিভিন্ন অঞ্চলে সত্যাগ্রহ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। সত্যাগ্রহ পত্রিকায় কৃষকদের ঐক্য বজায় রাখার

উপর জোর দেওয়া হয়।

(iv) বৈশিষ্ট্য :- এই আন্দোলনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যেমন – আন্দোলনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অহিংস পথে হয়। *

আন্দোলনে হিন্দু মুসলিম ঐক্য ছিল লক্ষ্যনীয় এবং আন্দোলনে নারী সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। মনিবেন প্যাটেল, মিটুবেন প্যাটেল, শারদা

মেহতা, ভক্তিবাই সারদা বেন প্রমুখ নারীরা আন্দোলনে অংশগ্রহন করে এবং প্যাটেলকে সর্দার উপাধি দান করে।

(v) সমর্থন :- বারদৌলি সত্যাগ্রহ ক্রমে জাতীয় বিষয় হয়ে উঠলে সারাভারতে এর সমর্থনে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আমেদাবাদের সুতাকলের কর্মীগণ

১ আনা করে চাঁদা দিয়ে মোট ১৩০০ টাকা আন্দোলনের স্বার্থে দান করে। বোম্বাই কাউন্সিলের বনিক সভার প্রতিনিধিগণ

পদত্যাগ করেন কমিউনিস্টরা একে সমর্থন করে।

(vi) পরিণতি :- সরকার বাধ্য হয়ে ‘ব্লুমফিল্ড ম্যাক্সওয়েল’ নামক তদন্ত কমিটি গঠন করে। রাজস্বের হার 6.02% নামিয়ে আনা হলে কৃষকরা তা

দিতে রাজি হয়। এবং সত্যাগ্রহ সফল হয়। তবে ঐতিহাসিক ডি. এন. টনাগারের মতে এই আন্দোলনের জমির মালিকদের শোষনের

বিরুদ্ধে চালিত না হয়ে পতিদারদের স্বার্থে চালিত হয়েছিল।

বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।

উ. বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বিশ শতকে বামপন্থী দলগুলি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অত্যন্ত

শক্তিশালী করে তোলে। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের কতগুলি বিশেষ চরিত্র লক্ষ করা যায়। এদেশের বামপন্থী আন্দোলন প্রচণ্ড

প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে পরিচালিত হয়েছিল। কেন-না, কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রসার প্রতিরোধে এদেশের ব্রিটিশ সরকার অত্যন্ত সক্রিয় ছিল।

এজন্য মানবেন্দ্রনাথ রায় ভারতের বাইরে, রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’র প্রতিষ্ঠা (১৯২০ খ্রি.) করেন। ভারতের মাটিতে ১৯২৫

খ্রিস্টাব্দে কানপুরে বিভিন্ন প্রদেশের কমিউনিস্টরা মিলিত হয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুজাফ্ফর আহমেদ ও বাংলায় গোপনে

কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রচার চালান। ব্রিটিশ সরকার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে, বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতাকে ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা, ‘

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা’ প্রভৃতিতে জড়িয়ে দিয়ে বামপন্থী ভাবধারা ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বামপন্থার প্রসার ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি।

সেসময় ভূস্বামী থেকে প্রজা—সকল শ্রেণির প্রতিনিধিকে নিয়েই জাতীয় কংগ্রেস লড়াই চালাচ্ছিল। তাই কংগ্রেসের বাইরে পৃথক বামপন্থী দল

প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে কংগ্রেসও মনেপ্রাণে সমর্থন জানাতে পারেনি। এজন্য বামপন্থী মনোভাবাপন্ন কয়েকজন নেতা

এসময় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী দল গঠন করে বামপন্থী ভাবধারা বজায় রাখার চেষ্টা চালান।

বামপন্থীদের উদ্যোগে ‘রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ (১৯৩১ খ্রি.), নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন ক’ (AITUC) (১৯৩৫ খ্রি.),

ভারতের জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন’ (INTUF) (১৯৩৫ খ্রি.), খল ভারত রেলওয়ে মেন্স ফেডারেশন’

(AIRMF) (১৯৩৬ খ্রি.) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজাফ্ফর আহমেদ-সহ বিভিন্ন বামপন্থী নেতাও কংগ্রেসের ভিতরে থেকেই ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার

পক্ষে লড়াই চালিয়ে যান। ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনই ছিল বামপন্থীদের প্রধান লক্ষ্য। মাদ্রাজের কমিউনিস্ট নেতা সিল্কারভেল্লু চেটিয়ার

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেসে ঘোষণা করেন যে, “আমি একজন কমিউনিস্ট। আমরা এখনই ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চাই, পরে সমাজতন্ত্র। বামপন্থী

নেতারা ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন।

ফলে দেশের সাধারণ কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির উপর দলের সর্বাধিক প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরাই হয়ে ওঠে বামপন্থী আন্দোলনের মূলভিত্তি।

বামপন্থী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে রাশিয়ার তাসখন্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

এরপর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে (২৬ ডিসেম্বর) কানপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের

কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হলে এদেশে বামপন্থী মতাদর্শের দ্রুত প্রসার ঘটে। সরকার এতে আতঙ্কিত হয়ে

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফ্ফর আহমেদ, এস. এ. ভাঙ্গে, মিরাজকর, পি. সি. যোশী, গঙ্গাধর অধিকারী, শিবনাথ ব্যানার্জি-সহ ৩৩ জন কমিউনিস্ট

নেতাকে গ্রেপ্তার করে। ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ৰেপ্তামিন ব্যাডলি এবং ফিলিপ স্প্ল্যাট-এ গ্রেপ্তার হন। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘মিরটি ষড়যন্ত্র মামলা’

(১৯২৯ খ্রি.) শুরু হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। কংগ্রেসের দুই তরুণ নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু ভারতে

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে যুক্ত করার চেষ্টা চালান। তাঁরা মনে করতেন যে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে এদেশে

অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণের অবসান ঘটানো দরকার। এর জন্য তারা ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর এদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে

তোলার স্বপ্ন দেখেন। জওহরলাল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নিজেকে একজন সমাজতন্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। তাঁর বিশ্বাস

ছিল যে, ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম একই সঙ্গে চলতে পারে। প্রসগত উল্লেখ্য যে, জওহরলাল বামপন্থী মতাদর্শে

বিশ্বাসী হলেও কমিউনিস্ট ছিলেন না। সুভাষচন্দ্র বসু মনে করতেন যে, এদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনই ভারতীয়দের দারিদ্র্যের মূল কারণ। এই

শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে তিনি প্রয়োজনে সশস্ত্র বিপ্লবকেও সমর্থনের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে

ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন। নেহরু ও সুভাষচন্দ্রের বামপন্থী মনোভার কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতারা পছন্দ করেননি। তাই নেহবু পান্ধিজির প্রতি

আনুগত্য দেখিয়ে কংগ্রেসে জায়গা করে নিলেও গান্ধি-সুভাষ বিরোধের কারণে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন। ফলে ফ্যাওয়ার্ড ব্লক ১৯৪০

খ্রিস্টাব্দে একটি পৃথক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।

কয়েকজন ভারতীয় বিপ্লবী ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে রামগড়ে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল’ (আর.এস.পি.) প্রতিষ্ঠা করে। মানবেন্দ্রনাথ রায়ও ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দেই ‘

র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া বাংলায় ‘কৃষক-প্রজা পার্টি’, যুক্তপ্রদেশে জাতীয় কৃষক পার্টি, পাঞ্জাবে ইউনিয়নিস্ট পার্টি’,

মাম্রাজে ‘জাস্টিস পার্টি’ প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে বামপন্থার প্রসারের অন্যতম উদাহরণ। এই সবকটি দলই ভারতে

স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যে সংগ্রামে অংশ নেয়।

Leave a Reply