ভূমিকা :
কুসংস্কারের উৎপত্তির কারণ :
অশুভ ঘটনা থেকেই কুসংস্কার :
কুসংস্কার ও বিজ্ঞান মনস্কতা :
কুসংস্কারের প্রকৃতি ও যুক্তিহনতা :
উপসংহার :

ভূমিকা : সংস্কার শব্দ থেকেই কুসংস্কার উৎপত্তি। কুসংস্কার বলতে বোঝায় যে আচার এবং প্রথার মধ্যে কোনো যুক্তি নেই। কেবল বহুদিন ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে বলে মানুষ তা মান্য করে তা বোঝায়। তার মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা বা যুক্তি নেই। কুসংস্কার আমাদের প্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। কুসংস্কার আমাদের অন্ধ বিশ্বাসকে লালন করে। বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞানের মধ্যে কোনো অলৌকিকত্ব নেই। তাই সমাজের প্রগতি ও উন্নতির জন্য কুসংস্কারকে বর্জন করে বিজ্ঞান মনস্কতা একান্ত প্রয়োজন।

কুসংস্কারের উৎপত্তির কারণ : মানুষ তার সৃষ্টি লগ্ন থেকেই নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তখন জগৎ ও জীবনের রহস্য ছিল অজ্ঞাত। সেই অজ্ঞাত বিষয়কে তারা বৈদ্য শক্তি বলে মেনে নিয়েছিল। এভাবেই মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে কুসংস্কারের ধারণা। তারা ধরে নিয়েছিল দৈব্য ঘটনার নিয়ন্ত্রনের উপর মানুষের কোন ঘটনাকে নিয়ন্ত্রন করতে কিংবা তার বিরোধিতা করতে তারা সাহসী হয়নি।

অশুভ ঘটনা থেকেই কুসংস্কার : অতীতের কোনো ঘটনা কোনো কারণে অশুভ হওয়ার ফলে সেই কারণটিই কুসংস্কারে দাঁড়িয়ে গেছে। কোনো এক সূদূর অতীতে কোনো ব্যাক্তি হাঁচি ও টিকটিকি উপেক্ষা করে যাত্রা করার ফলে হয়তো কোনো অশুভ ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তীকালে হাঁচি ও টিকটিকি অশুভের প্রতীক বলেমনে করা হয়েছে। কুসংস্কারের ভিত্তি অন্ধ বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের ফলে দেখা যায় গ্রহের দোষ কাটানোর জন্য অনেকের আঙুলে আংটি ধারণ করতে। আবার অনেকে মাদুলি, কবচ ধারণ করে নানা উদ্দেশ্যে। সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় অনেকে খাদ্য গ্রহণ করে না। অনেকে পেঁচার ডাককে অশুভ মনে করে। এর পিছনে আছে যুক্তিহীন কুসংস্কার।

কুসংস্কার ও বিজ্ঞান মনস্কতা : বিজ্ঞানচর্চার ফলে সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে। বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ নতুন তত্ত্বের সন্ধান পেয়েছে। মানুষ যেসব জিনিস অলৌকিক বলে মনে করত বিজ্ঞান তার মধ্যে অনেক জিনিসের যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছে। কুসংস্কার মানুষের জীবনের অন্ধকার দিক। বিজ্ঞান আলোর দিক। তাই বিজ্যানচর্চার মাধ্যমে কুসংস্কাররগুলি দূর করা উচিত।

কুসংস্কারের প্রকৃতি ও যুক্তিহনতা : এখনও অনেক শিক্ষিত মানুষ রোগ দূর করার জন্য মাদুলি বা কবচ ধারণ করেন। গ্রহের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য পাথর বসানো আংটি পরেন। পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীকে ডিম বা কলা খেতে দেওয়া হয় না। শনিবার ও মঙ্গলবার কোন নতুন কাজ শুরু করা হয় না। কাউকে ডাইনি সন্দেহে পুড়িয়ে মারা হয়। দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নারিকেল বা বলি দেওয়া হয়। এইভাবে কুসংস্কার আমাদের একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। কিন্তু বিজ্ঞান আমাদের সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত করেন।

উপসংহার : কুসংস্কার দূর করার জন্য চাই শিক্ষার বিস্তার। বিজ্ঞান মনস্কতা যত বাড়বে কুসংস্কার তত কমে যাবে। যতদিন মানুষের জীবন থেকে কুসংস্কারগুলি দূর না হয় তত দিন পরিপূর্ণ উন্নতি সম্ভব নয়। কিন্তু যুগযুগ ধরে সঞ্চিত কুসংস্কার গুলি সমাজের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। সেগুলি দূর হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমাদের ঘরের জানালা দিয়ে যত বিজ্ঞানের আলো প্রবেশ করবে ততই কুসংস্কারের অন্ধকার দূর হবে।