বহির্জাত প্রক্রিয়া : ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ [পর্ব – ১]
The Extrinsic Process Part 1

বহির্জাত প্রক্রিয়া : ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ [পর্ব – ১]

বহির্জাত প্রক্রিয়া : [পর্ব – ১] দশম শ্রেণী [CLASS – 10]

বহির্জাত প্রক্রিয়া (Exogenetic Process) :

ভূবহিস্থ বা ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যখন ভৌত এবং রাসায়নিক বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের বিবর্তন ও পরিবর্তন ঘটায় বা ভূমিরূপের বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করে সেই শক্তিকে বলা হয় বহির্জাত প্রক্রিয়া।

নদী বা প্রবাহিত জলধারা, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল প্রভৃতি যেহেতু ভূ-পৃষ্ঠের উপর ক্রিয়াশীল থেকে ভূ-পৃষ্ঠের বা ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় তাই এগুলিকেই বলা হয় বহির্জাত শক্তি। এছাড়া আবহবিকারের ফলেও যেহেতু ভূমিরূপের পরিবর্তন সাধিত হয় তাই আবহবিকারও বহির্জাত প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য হয়।

ভূমিরূপ গঠনে বহির্জাত প্রক্রিয়ার ভূমিকা :

ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূমির উত্থান বা অবনমন ঘটে। ফলে তার উপর অভিকর্ষজ বল ক্রিয়াশীল হয় এবং এই বলের প্রভাবেই ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী শক্তিগুলি ক্ষয়, বহন ও সঞ্জয়কার্যের মাধ্যমে ভূমির চেহারার, পরিবর্তন ঘটায়।

ভূ-পৃষ্ঠের উঁচু অংশ কোনো না কোনো শক্তির মাধ্যমে একটু একটু করে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং উচ্চতা হ্রাস পায়। একে বলে অবরোহণ)। আর ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট পদার্থগুলি নিচু স্থানগুলিকে ভরাট করে ভূমির উচ্চতা বাড়ায়। একে বলে আরোহণ। এভাবেই কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিভাগ সমতলে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ার নাম হল পর্যায়ন। অর্থাৎ, অবরোহণ + আরোহণ = পর্যায়ন। যা সংগঠিত হয় বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

জলচক্রের মডেল : bnginfo.com

নদীর বিভিন্ন কাজ (ক্ষয়, বহন, অবক্ষেপণ) দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ :

নদী কাকে বলে : নদী হল ভূ-পৃষ্ঠের স্বাভাবিক জলধারা, যা সাধারণত কোনো উচ্চভূমির (পর্বত, মালভূমি ইত্যাদি) বরফগলা জল বা বৃষ্টির জল দ্বারা উৎপন্ন হয়ে অভিকর্ষজ আকর্ষণে ভূমির ঢাল অনুযায়ী প্রবাহিত হয়ে কোনো সাগর, হ্রদ বা জলাভূমিতে গিয়ে পতিত হয়।

কোনো জলধারা বা নদী উৎস থেকে উৎপন্ন হয়ে অন্য কোনো মূল নদীতে এসে মিলিত হলে ওই নদীকে মূল নদীটির উপনদী বলা হয়, যেমন যমুনা, গঙ্গার উপনদী।

আবার মূল নদী থেকে অন্য কোনো জলধারা বা নদী বেরিয়ে এসে যদি অন্য কোনো নদী বা সাগরে বা হ্রদে পতিত হয় তখন ওই নদীকে মূলনদীর শাখা নদী বলা হয়। যেমন- ভাগীরথী-হুগলি নদীটি গঙ্গার শাখা নদী।

নদী অববাহিকা :

কোনো একটি প্রধান নদী এবং তার সব উপনদী ও শাখা নদী মিলিতভাবে যতটা অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলকে বলে নদী অববাহিকা।

গুরুত্ব পূর্ণ (প্রশ্ন – উত্তর)

🟥 বহিস্থ বা বহির্জাত প্রক্রিয়া কাকে বলে ?

✅ যে প্রক্রিয়ায় (ক্ষয়, অপসারণ, বহন ও সয়) নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল প্রভৃতি বাইরের প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ ভূপৃষ্ঠ ও উপপৃষ্ঠীয় অংশে ক্রিয়াশীল হয়ে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়, তাকে বহিস্থ বা বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া এবং এই প্রক্রিয়ায় অসমতল ভূমিরূপ পর্যায়িত অবস্থায় আসার চেষ্টা করে।

🟥 ক্ষয়ীভবন কাকে বলে ?

✅ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ঘাতপ্রতিঘাতে যখন শিলা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয় এবং অন্যত্র অপসারিত হয়, তখন তাকে ক্ষয়ীভবন বলে। এতে ভূত্বকীয় শিলা অনেক গভীর পর্যন্ত উন্মুক্ত হয়ে যায়, একে নথীভবন-ও বলে। অবরোহণের ফলে ভূমির চাল ও বিভিন্ন ক্ষয়জাত ভূমিরূপ (নদীসৃষ্ট গিরিখাত, হিমবাহসৃষ্ট সার্ক ইত্যাদি) তৈরি হয়।

🟥 ধারণ অববাহিকা কী ?

✅ যে অঞ্চলের ছোটো ছোটো জলধারা থেকে নদী সর্বপ্রথম জল সংগ্রহ করে তার প্রবাহকে বাড়ায়, সেই অঞ্চলকে ধারণ অববাহিকা বলে। এই অববাহিকা সবসময় উচ্চ পাহাড় বা পর্বতে অবস্থান করে।

🟥 পর্যায়ন প্ৰক্ৰিয়া কাকে বলে ?

✅ যে প্রক্রিয়ায় বহিস্থ শক্তিগুলি ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে উঁচু-নীচু ভূভাগকে সমুদ্রপৃষ্ঠের সমান উচ্চতায় একটি মসৃণ তল বা পৃষ্ঠে আনার চেষ্টা করে, সেই প্রক্রিয়াকে বলে পর্যায়ন। আরোহণ ও অবরোহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পর্যায়ন সাধিত হয়।

🟥 আরোহণ কাকে বলে ?

✅ যে প্রক্রিয়ায় নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয়জাত ও পরিবাহিত সমস্ত পদার্থ একরে সঞ্চিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার সাময়িক বৃদ্ধি ঘটায়, ওকে আরোহণ বলে। এর ফলে ভূমির ভাল হ্রাস পায় ও সমতলভূমি গঠিত হয়। নদীর নিম্নপ্রবাহে গঠিত বালুচর, বদ্বীপ, প্লাবনভূমি ইত্যাদি হল আরোহণ প্রক্রিয়ার উদাহরণ।

🟥 নদী কাকে বলে ?

✅ ভূমির ঢালকে অনুসরণ করে একটি নির্দিষ্ট খাতে উৎস থেকে বহু দূরে মোহানা বা সঙ্গম পর্যন্ত বৃষ্টি, প্রস্রবণ, বরফগলা জলে পুষ্ট স্বাভাবিক জলধারার প্রবাহকে বলে নদী। গঙ্গা, যমুনা, সোন ইত্যাদি হল এক একটি নদী।

🟥 নদী অববাহিকা বলতে কী বোঝ বা নদী অববাহিকা কাকে বলে ? 

✅ প্রধান নদী ও তার উপনদী, প্রউপনদী ও শাখানদী একত্রে যে নদীগোষ্ঠী তৈরি করে তাকে বলে নদী ব্যবস্থা। যে নদী ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার ধুয়ে আসা জলে একটি নদীগোষ্ঠী পুষ্ট হয়, সেই নির্দিষ্ট এলাকা বা ক্ষেত্রকে বলে মূল নদী অববাহিকা। যেমন— দামোদর নদ অববাহিকা।

🟥 অবরোহণ কাকে বলে ?

✅ যেসব প্রক্রিয়ার দ্বারা ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলি ক্ষয় হওয়ার মাধ্যমে নীচু হয় অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস পায় তাকে বলে অবরোহণ অবরোহণের ফলে ভূপৃষ্ঠের অবনমন ঘটে। আবহবিকার, ভর অপসারণ বা পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়কার্য—এই তিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবরোহণ ঘটে থাকে।

🟥 জলচক্র বলতে কী বোঝ বা জলচক্র কাকে বলে ?

✅ বারিমণ্ডলের অন্তর্গত হ্রদ, জলাশয় বা সমুদ্র থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে যায় এবং সেখানে ঘনীভবন ঘটিয়ে অধঃক্ষেপণরূপে পুনরায় বারিমণ্ডলে ফিরে আসে। বিভিন্ন ভৌত অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে বারিমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে জলের এরূপ নিরবচ্ছিন্ন আবর্তনকে জলচক্র বলে।

🟥 শাখানদী কাকে বলে ?

✅ নিম্নপ্রবাহে যে নদী প্রধান নদী থেকে বেরিয়ে বহুদূরে প্রবাহিত হওয়ার পর পুনরায় ওই নদীতে কিংবা অন্য কোনো নদী, হ্রদ বা সমুদ্রে যেগে তাকে শাখানদী বলে। ভাগীরথী, হুগলি হল গঙ্গার শাখানদী। [শাখানদীর মাধ্যমে প্রধান নদী তার জলকে বন্টন (distribute) করে। তাই এর ইংরেজি হল distributary]

🟥 পুঞ্জিত ক্ষয় কী ?

✅ অনেকসময় আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট শিলাচূর্ণ ও আলগা মাটি একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণে অভিকর্ষ বলের টানে ভূমির ঢাল বরাবর নীচে নেমে আসে, একে পুঞ্জিত ক্ষয় বা ভর অপসারণ বলে।

🟥 উপনদী কাকে বলে ?

✅ যেসব নদী প্রধান নদীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং জলদান করে প্রধান নদীর জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, তাদের বলে উপনদী। নিম্নপ্রবাহে দামোদর হল হুগলির উপনদী। [প্রধান নদীকে জল দিয়ে tribute অর্থাৎ সম্মান জানায় বলে উপনদীকে ইংরেজিতে tributary বলে।]

  • communication of barriers

    Type of Barriers Communication: Examples Definition and FAQs

  • কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

    মেঘের গায়ে জলখানা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

  • কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”

    কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

  • 'ছাতির বদলে হাতি' সুভাষ মুখোপাধ্যায়

    ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

  • Type of Barriers Communication: Examples Definition and FAQs

    Barriers to communication refer to any obstacles that prevent effective exchange of information, ideas, and thoughts between individuals or groups. Some common barriers include.

  • মেঘের গায়ে জলখানা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

    মেঘের গায়ে জলখানা প্রবন্ধটি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘রং মশাল’ পত্রিকায় ছোটোদের উপযোগী করে প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে প্রবন্ধটি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ (১৯৫১) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়।

  • কলের কলকাতা : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

    সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “আমার বাংলা” গ্রন্থের উল্লেখিত ‘কলের কলকাতা’ এই প্রবন্ধের সূচনায় লেখক তার গ্রামের কিশোর মোনা ঠাকুরের জবানীতে ‘আজব শহর কলকাতা’র রূপটিকে ব্যক্ত করেছেন। রচনার লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় এগারো বছর বয়সে কলকাতায় আসেন। প্রবন্ধে তিনি দম দেওয়া কলের পুতুলের মতো মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনসংগ্রামের ছবি যেমন এঁকেছেন, তেমনই রূপ দিয়েছেন শহরাঞ্চলের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা গুলি উল্লেখ করেছেন।

  • ছাতির বদলে হাতি : সুভাষ মুখোপাধ্যায়,”আমার বাংলা”- bnginfo.com

    ‘ছাতির বদলে হাতি’ প্রবন্ধটি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “আমার বাংলা” গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ছাতির বদলে হাতি’ রোচনাটিতে লেখক সরাসরি প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছেন জমিদারি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। চেংমান এবং কয়েকজন গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজনরা কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে শোষণ করে চলেছে, তার ছবি তুলে ধরেছেন।

  • গারো পাহাড়ের নীচে : সুভাষ মুখোপাধ্যায়, bnginfo.com

    সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার বাংলা’ প্রথম পর্যায়ের রচনা “গারো হাজং এর দেশে” রংমশাল পত্রিকার ১৩৫৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখে প্রকাশিত হয়। সংকলনের প্রথম রচনায় গারো পাহাড়ের নীচে সুসং পরগনায় বাস করে হাজং, গারো, কোচ, বানাই, ডালু, মার্গান প্রভৃতি নানা সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবনযাত্রার নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়।

  • বাংলা চিত্রকলা: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০১৭,১৮,১৯,২০ সালের।

    বাংলা চলচ্চিত্রে মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো। বাংলায় চিত্রকলা চর্চার ক্ষেত্রে নন্দলাল বসুর অবদান আলোচনা করো। বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান সম্বন্ধে আলোচনা করো। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায়ের অবদান আলোচনা করো।

Leave a Reply