You are currently viewing ইতিহাসে বাবরের গুরুত্ব
ইতিহাসে বাবরের গুরুত্ব

ইতিহাসে বাবরের গুরুত্ব

জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। বাবর ভারতবর্ষে কয়েকটি পর্যবেক্ষণমূলক অভিযানে সফলতা লাভের পর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদীকে হত্যা করে দিল্লি সালতানাতের – স্থলে মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

বাবরের চরিত্র ও কৃতিত্ব

শাসক হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব

বিস্তারিত বর্ননা

সারসংক্ষেপ

বাবরের চরিত্র ও কৃতিত্ব

জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ছিলেন এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শাসক। বিভিন্নমুখী প্রতিভার অধিকারী বাবর এশিয়ার ইতিহাসে এক আকর্ষণীয়, রোমাঞ্চকর ও কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্র। বাবর ছিলেন সমসাময়িক এশিয়ার শাসকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দীপ্তিমান চরিত্রের অধিকারী। বাবরের চরিত্রে সামরিক প্রতিভা, বীরসুলভ দুঃসাহসিকতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, অদম্য অধ্যবসায়, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়, অনন্যসাধারণ দুঃসাহসিকতা, অটুট মনোবল, অতুলনীয় রণনিপুণতা, দূরদর্শী রাজনৈতিক মেধা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, পিতৃবাৎসল্য এবং গভীর মমত্ববোধ প্রভৃতি গুণাবলির এক অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল। বাবরের ধমনীতে বিশ্ব ত্রাস সৃষ্টিকারী তৈমুর লঙ ও দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খানের শোণিত ধারা প্রবাহিত ছিল।

বাবরের মধ্যে তুর্কীদের সাহস ও কর্মদক্ষতার সাথে সাথে মোঙ্গলদের তেজস্বিতা ও সমর নিপুণতার এবং দুর্ধর্ষ যাযাবর তাতারদের বীরত্ব ও অস্থিরতার সঙ্গে পারসিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছিল। বাবর ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান একজন খাঁটি সুন্নী মুসলমান। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীকে, ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার যুদ্ধে মেবারের রাজপুত নেতা রানা সংগ্রাম সিংহকে, ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে চান্দেরী অভিযানের সময় মেদেনী রাওকে এবং সর্বশেষ ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে গোগরার যুদ্ধে সম্মিলিত আফগান শক্তিকে পরাস্ত করার মধ্যে বাবরের উন্নত সামরিক কৌশল, রণনিপুণতা এবং একজন সফল সময় নায়কের কৃতিত্ব ফুটে উঠে। ভারতবর্ষে মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠা করে জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর এক নতুন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন।

শাসক হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব

জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্য শাসন করেন। তাঁর সময় মুঘল সাম্রাজ্য পশ্চিমে কাবুল থেকে পূর্বে বিহার এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে চান্দেরি পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। মাত্র চার বছরের সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালে বাবর বিশাল সাম্রাজ্যে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় স্বল্পতার কারণে বিজিত অঞ্চলব্যাপী চলমান শাসনব্যবস্থাকেই অব্যাহত রাখেন। তবে বাবর খলিফার ক্ষমতাকে অস্বীকার করে স্বয়ং ‘বাদশাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন। তিনি পূর্ববর্তী আমলে প্রচলিত সামন্ত প্রথা ও জায়গীরদারী প্রথা চালু রাখলেও তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব সীমিত করেন। বাবরের শাসনামলে বিভাগীয় প্রধান এবং বাদশাহের সাথে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতেন প্রধানমন্ত্রী নিজামউদ্দিন খলিফা। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হত ওয়ালী (প্রাদেশিক গভর্নর) দিওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা), সিকদার (সমর কর্মকর্তা) ও কোতয়াল (নগর কর্মকর্তা) প্রমুখ কর্মকর্তাদের দ্বারা। বাবর সমগ্র সাম্রাজ্যব্যাপী ১৫ মাইল অন্তর অন্তর ডাকচৌকির ব্যবস্থা করেন।

বিস্তারিত বর্ননা।

শিল্প ও সাহিত্যানুরাগী হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ছিলেন শিল্প ও সাহিত্যানুরাগী এবং একজন রুচিশীল শাসক। তিনি দিল্লি ও আমায় ২০টি ড্যান, বহু পাকা নর্দমা, সেতু ও অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। বীরযোদ্ধাও সমরকুশলী বাবরের সাহিত্যানুরাগ ছিল। প্রগাঢ়। তিনি তুর্কী ও ফার্সি ভাষায় যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি তুর্কি ও ফার্সি ভাষায় অসংখ্য কবিতা রচনা করেন। তাঁর রচিত তুর্কি কবিতার সংকলন ‘দিওয়ান” নামে পরিচিত। ফার্সি ভাষায় বাবর এক প্রকার নতুন ছন্দ আবিষ্কার করেন সাধারণত ‘মুবইয়ান’ নামে সুপরিচিত। জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের সাহিত্যানুরাগের শ্রেষ্ঠ নির্দশন তুর্কি ভাষায় রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘তু–गानরী”। “চুমুक–বাবরী’ মুঘল ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল।

বাবরের তুজুক থেকে জানা যায় যে, ১৫২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং প্রতিবারেই সেই অসুস্থতার মেয়াদ কমবেশি দুই সপ্তাহ হতই। দীর্ঘকাল যাবৎ স্থান থেকে স্থানান্তরে যাতায়াত, বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন কাটানো এবং একাদিক্রমে যুদ্ধযাত্রা-এসবের ফলেই তাঁর স্বাস্থ্যহানি দেখা দেয় এবং ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর আগ্রায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্বে বাবর ভারতকেই তাঁর দ্বিতীয় ‘গৃহ’ হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, যদিও আফগানিস্তানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ বড়ো একটা কম ছিল না। তাঁর অনেক বেগ ভারতে থাকতে চাইছিল না এবং তাদের অনেকেই ভারত ত্যাগ করে। তথাপি বাবর ভারতকেই তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসাবে তৈরি করেছিলেন এবং ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, তিনি ভুল সিদ্ধান্ত কেরেননি।

আফগানিস্তানকে বাবর ভারত সাম্রাজ্যেরই একটি অঙ্গ হিসাবে গড়ে তোলেন। ভারতের প্রাচীনকালের ইতিহাসে আফগানিস্তানের সঙ্গে এদেশের নিবিড় সম্পর্কের কথা থাকলেও বহুকালযাবৎ রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল ছিন্ন। বরং মধ্যযুগের সূচনাকাল থেকে আফগানিস্তানই হয়ে উঠেছিল ভারত আক্রমণের প্রথম সোপান। গজনীর মামুদ যে পথে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন সেই পথই বহু আক্রমণকারীকে এদেশে নিয়ে এসেছিল। এদেরই সর্বশেষ ব্যক্তিটি হলেন বাবর, যিনি কাবুলকে কেন্দ্র করে ভারত আক্রমণ করেছিলেন। বাবর তাই আফগানিস্তানের গুরুত্ব বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং ভারতের নিরাপত্তার তাগিদে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি মনে করেছিলেন। মুঘল সম্রাটদের এক অন্যতম পররাষ্ট্রনীতিই ছিল পশ্চিম এশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখা। অক্ষু নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলির গুরুত্ব তাই তাঁদের কাছে ছিল অসীম। তাই উজবেকদের সঙ্গে পারস্যের দ্বন্দ্বের সুযোগ তিনি নিতে চেয়েছিলেন এবং ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দেই হুমায়ুনকে সমরখন্দ অধিকারের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

আফগানিস্তানের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পেছনে ওই অঞ্চলের অর্থনীতিও বহুলাংশে দায়ী। ভারতের সঙ্গে পারস্যের যে বাণিজ্যপথ, সেই পথে কাবুল ও কান্দাহারের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। আফগানিস্তানের পূর্বদিকে চীন, উত্তরের অক্ষু নদীর সংলগ্ন অঞ্চল, পশ্চিমে খোরাসান, ইরাক প্রভৃতি অঞ্চল থেকে নিয়মিত বাণিজ্যিক পণ্য আসত। বাবরকৃত ব্যবস্থাই পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা অনুসরণ করেছিলেন এবং উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে ভারতের সঙ্গে লোহিত সাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত যে বাণিজ্যপথ ছিল, তাকে তাঁরা চিরকাল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।

ইব্রাহিম লোদী ও রানা সঙ্গকে পরাজিত করেছিল বাবরের গোলন্দাজ বাহিনী। ভারতের ইতিহাসে বাবরই প্রথম কামান আমদানি করেছিলেন—এমন একটা সাধারণ ধারণা প্রচলিত। গোলাবারুদ ভারতে নতুন ছিল না। অন্তত ত্রয়োদশ শতক থেকেই কেল্লার প্রাকার রক্ষার জন্য বারুদের ব্যবহার হচ্ছিল এবং এই কৌশল চীন থেকে এদেশে আসে। তবে কামানে বা বন্দুকে বারুদের ব্যবহার এসেছিল ইউরোপ থেকে। এশিয়ায় প্রথম এর ব্যবহার জনপ্রিয় করেন অটোমান সুলতানরা। ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে চালদিরানের যুদ্ধ অটোমানরা পারস্যের বিরুদ্ধে কামানের ব্যবহার করে জয়ী হয়। বাবরকে ওই যুদ্ধ বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।

সমরনায়ক হিসাবে বাবরের সাফল্যের পেছনে তাঁর এই মানসিকতার মূল্য ছিল অসীম। মনে রাখতে হবে যে, গোলাবারুদের সাহায্যেই স্থানীয় শাসককুলকে নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব হয়েছিল এবং মুঘলদের সাফল্যের দীর্ঘ ইতিহাস পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে, কীভাবে গোলাবারুদ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করতে সাহায্য করেছে। শুধুমাত্র গোলাবারুদই নয়, অটোমান এবং উজবেকদের কাছ থেকে বাবর সমর কৌশলও শিক্ষা করেছিলেন। তিনি তুলঘুমা পদ্ধতি আমদানি করেন। এই ব্যবস্থায় কিছু কাঠের শকটকে লোহার শিকলের সাহায্যে গ্রথিত করে তাদের ওপর গোলন্দাজিদের নিযুক্তির মাধ্যমে এবং শকটগুলির সামনে পরিখা খনন করে তিনি তাঁর বিরোধীদের থেকে অনেক বেশি সামরিক সুবিধা লাভ করেন। এভাবেই তিনি ইব্রাহিম লোদীকে পরাস্ত করেছিলেন।

ড. সতীশচন্দ্রের মতে, বাবর ভারতে সম্রাটের ক্ষমতা ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আফগান শাসকদের রাজত্বে সম্রাটরা কোনোভাবেই গোষ্ঠীগত ধারণা ও সামাজিক ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। ফলত সম্রাটের বিশেষ অধিকার ও মর্যাদার মূল্য আফগান অভিজাতরা দিতে চাইত না। বাবর কিন্তু চেঙ্গিস খানের আদর্শের দ্বারা চালিত হন, যেখানে সম্রাটের আসন ছিল সবার ঊর্ধ্বে। চেঙ্গিসের মতোই বাবরও মনে করতেন যে, অভিজাতরা (বেগ) তাঁর ভৃত্য মাত্র। মোঙ্গল সম্রাটের অনুকরণে বাবর নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধিরূপে কল্পনা করতেন। মোঙ্গলরা এই ধারণার দ্বারাই লালিত ছিল এবং সেজন্য তারা কোনও সময়ে সম্রাটের (প্রধান খান) মর্যাদা খাটো করতে চাইত না।

বাবরের দৃষ্টিতে সম্রাটের যে বিশেষ মর্যাদা তা মুঘল রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করে এবং মধ্যযুগীয় ভারতে রাজতন্ত্র এক নতুন চরিত্র লাভ করতে সমর্থ হয়। এভাবেই দরবারী আদবকায়দা এবং নীতিনিয়মের বিকাশ ঘটল। অবশ্য বাবর তাঁর বেগ-দের কোনওভাবেই ছোটো করতে চাননি। তিনি সর্বদাই তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন এবং পুত্র হুমায়ুনকেও সেই পথ অনুসরণ করতে নির্দেশ দেন। তিনি তাদের খুশি রাখারও চেষ্টা করতেন এবং পানিপথের বিজয়ের পর আগ্রায় এসে তিনি ইব্রাহিম লোদীর রত্নভাণ্ডার উন্মুক্ত করে বেগ-দের মধ্যে উদার হাতে বণ্টন করতে থাকেন। তবে দোষী বেগ-দের তিনি শাস্তি দিতেও ছাড়তেন না।

ধর্ম সম্পর্কে বাবরের মনোভাব বিশেষ কঠোর ছিল না বলেই অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন। তবে রানা সঙ্গর বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তিনি জিহাদ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে যে-কোনো সামরিক অভিযানকে এই চোখেই দেখতে চাইতেন। চান্দেরীর মেদিনী রাইয়ের বিরুদ্ধেও তিনি জিহাদ ঘোষণা করেন। অবশ্য হিন্দুদের ধর্মস্থান ধ্বংস করার কোনও চেষ্টা তিনি করেননি। এমনকি, মথুরাতেও সে চেষ্টা হয়নি। কেবলমাত্র উরুয়া উপত্যকায় কিছু জৈন মন্দিরের নগ্ন দেবমূর্তিগুলি তিনি ধ্বংসের নির্দেশ দেন।

অযোধ্যায় তাঁর সেনাপতি মীর বাকী এবং সম্ভলে মীর হিন্দু বেগ কিছু হিন্দুমন্দির ধ্বংস করে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁরা দুজনেই প্রভুর আজ্ঞাপ্রাপ্ত বলে দাবি করেন। কিন্তু বাবর এইসব ঘটনায় যথাযথ কতখানি যুক্ত ছিলেন সে বিষয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। বাবর ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ কঠোর মনোভাব পোষণ করতেন—এমন বলা প্রায় অসম্ভব। তিনি নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এমন কিছু ব্যবস্থা অবশ্যই নিয়েছিলেন, যেগুলিতে ধর্মের মোড়ক ছিল। কিন্তু তেমন ঘটনার সংখ্যা কম। এখানে তিনি নিরপেক্ষ। রানা সঙ্গর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রকে বাবর যথাযথ সাহায্য করতে দ্বিধা করেননি।

বাবরের উদার মানসিকতার কারণেই মুঘল দরবার চিত্রকলা ও সঙ্গীতচর্চার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি নিজেও ছিলেন যথেষ্ট শিক্ষিত। চুঘতাই তুর্কী-তে রচিত তাঁর তুজুক (আত্মজীবনী) এক অসাধারণ সাহিত্যকর্ম। শুধুমাত্র নিজের জীবনের কথাই নয় – আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া এবং ভারতের নানা ঘটনা, সমাজ কাঠামো, এমনকি প্রকৃতি নিয়েও তিনি লিখেছেন।

সারসংক্ষেপ

জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১১ বছর বয়সে পিতৃ সিংহাসনে আরোহণকারী বাবর কালের পরিক্রমায় পিতৃরাজ্য ফারগানা ও সমরকন্দ থেকে বিতাড়িত হয়ে | ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার সুযোগে কাবুল দখল করেন। বাবর ভারতবর্ষে কয়েকটি পর্যবেক্ষণমূলক অভিযানে সফলতা লাভের পর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদীকে হত্যা করে দিল্লি সালতানাতের – স্থলে মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

Leave a Reply