You are currently viewing উনিশ শতকের নারী শিক্ষা | bnginfo.com
উনিশ শতকের নারী শিক্ষা | bnginfo.com

উনিশ শতকের নারী শিক্ষা | bnginfo.com

১৯৭০ এর দশক থেকে নারী শিক্ষার বিশেষজ্ঞরা লিঙ্গ এবং এর সাথে জাতি, জাতিগত পটভূমি, শ্রেণি, বয়স, ধর্ম, যৌনতা এবং সমাজে শক্তি কাঠামো তৈরির সক্ষমতা এবং প্রতিবন্ধকতা বোঝার জন্য আধূনিক নারীবাদের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেন এ পদ্ধতিতে ভাষা, সামাজিক আধিপত্যতা এবং লিঙ্গগুলোর পরিচিতি এবং গঠনের উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়।

The Spread of Women’s Education in 19th Century India. in English

ঊনবিংশ শতকে বাংলায় শিক্ষাবিস্তার তথা নব্য ভাবধারার যে উন্মেষ—সেসবই ঘটেছিল পুরুষদের কেন্দ্র করে। মহিলাদের কথা প্রাথমিকপর্বে তেমনভাবে ভাবাই হয়নি। তবে অষ্টাদশ শতক ও ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় প্রধানত হিন্দুদের উচ্চবর্ণের পরিবারের মহিলারা মোটামুটিভাবে শিক্ষিত ছিলেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। সেই সব মহিলারা কমবেশি কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীদাসের মহাভারত, কিছু কিছু বৈষ্ণব পদাবলি, এমনকি, ভারতচন্দ্রের রচনার সঙ্গে পরিচিত ছিল। কিন্তু গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার আলো ছিল না। এ প্রসঙ্গে কিছু সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। যেমন, বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথা এবং মহিলা শিক্ষিকার অভাব। উইলিয়ম ওয়ার্ড তাঁর রংপুর জেলা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে (১৮৩৫ খ্রি.) বলেছিলেন যে, সামাজিক কুসংস্কার এমনই ছিল যে, সাধারণভাবে কোনো পুরুষ শিক্ষিতা কন্যাকে বিবাহ করতে রাজি হত না। উপরন্তু কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে নতুন যে বাঙালি অভিজাত শ্রেণির বিকাশ ঘটল সেই শ্রেণিভুক্তরা প্রাথমিকপর্বে ছিল বিশেষ রকমে রক্ষণশীল। ঘরে-বাইরে রক্ষণশীলতা প্রদর্শন করাই হয়ে ওঠে কাজ যা অবশ্য অধিককাল বজায় রাখা সম্ভব হয়নি।

সামগ্রিকভাবে নারীশিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিরাই প্রথমে উদ্যোগ করে। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট মে চুঁচুড়াতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে এই যজ্ঞের সূচনা করেন। তিনি ৬০০ টাকা সরকারি অনুদানও লাভ করতেন। লক্ষণীয় যে, কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপনার পূর্বেই এটি স্থাপিত হয়েছিল। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় স্কুল সোসাইটি স্থাপিত হলে নারীশিক্ষার বিস্তারের প্রসঙ্গে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। সোসাইটির সম্পাদক শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব স্ত্রীশিক্ষার পক্ষে থাকলেও অন্য সদস্যরা তাঁর পক্ষে ছিলেন না। ফলে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশীয়দের উদ্যোগ হোঁচট খেল। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপ্‌টিস্ট মিশনারিদের উদ্যোগে • রেভারেন্ড ডবলু. এইচ. পিয়ার্সের সভাপতিত্বে গঠিত হল ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি। সোসাইটি রাধাকান্ত দেবের সমর্থন লাভ করে। তাদের উদ্যোগে কলকাতায় মোট ছটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। রাধাকান্ত দেব এই সময়ে গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কারকে স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক নামে একটি পুস্তিকা রচনায় ও প্রকাশে উৎসাহিত পর্যন্ত করেছিলেন। সোসাইটি কলকাতায় যে বালিকা বিদ্যালয় খুলেছিল সেখানে শুরু থেকে পড়ুয়ার অভাব দেখা দেয়। কারণ ছিল একটাই। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলারা স্কুলে যেতে আদৌ আগ্রহী ছিল না।

১৮২১ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি-র সহযোগিতায় ফরেন স্কুল সোসাইটি অফ ইংল্যান্ড ভারতে নারীশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ইংল্যান্ডে অর্থসংগ্রহ করতে শুরু করে। এদেশে শিক্ষাদানের জন্য ইংল্যান্ড থেকে কুমারী মেরী এ্যন কুক ১৮২১ খ্রিস্টাব্দেরই নভেম্বর মাসে কলকাতায় আসেন। কিন্তু ক্যালকাটা, স্কুল সোসাইটি-র পক্ষে সম্পাদক রাধাকান্ত দেব পরিষ্কার ভাষায় জানান যে, কুমারী কুকের কাছে স্কুলে বা নিজগৃহে, কোনো স্থানেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের বালিকারা পাঠ নেবে না। সম্ভবত মিশনারিদের স্কুলে ধর্মান্তকরণের ভয়টাই কাজ করছিল। উপরন্তু তাদের স্কুলের শ্রেণীকক্ষে নিম্নবর্ণের ও গণিকাদের মেয়েদের পাশাপাশি বসে পাঠ নিতে কেউ বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। এই সংকট কিন্তু কুমারী কুককে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তাঁকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসে চার্চ মিশনারি সোসাইটি। কুক বাংলা ভাষা শিক্ষা করেন ও নারীশিক্ষা বিস্তারে কার্যত জীবনপণ করে ফেলেন। নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ৩০টি বালিকা বিদ্যালয় খুলে ফেলেন।

এই সময়েই কলকাতার পোস্তার রাজা সুখময়ের পুত্র বৈদ্যনাথ রায়ের প্রদত্ত ২০ হাজার টাকায় একটি বৃহৎ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবশেষে ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে লেডি আমহার্স্ট এই বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয় গঠনের পশ্চাতে দ্য লেডিস সোসাইটি ফর নেটিভ ফিমেল এডুকেশন এর অবদান ছিল বিশেষরকমে। এই সংস্থা চার্চ মিশনারি সোসাইটির পরিচালনাধীন বালিকা বিদ্যালয়গুলির দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়।

ডেভিড হেয়ার এই উদ্যোগের অন্যতম সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। একই সময়ে শ্রীমতী উইলসনের তত্ত্বাবধানে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে প্রায় ৩০টি বালিকা বিদ্যালয়ের জন্ম হয়েছিল। উৎসাহী মিশনারিরা প্রধানত অনাথ বালিকাদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। এই পর্বে নারীশিক্ষা বিস্তারের পক্ষে এক প্রধান ব্যক্তি ছিলেন ইয়ংবেঙ্গল-এর অন্যতম সদস্য কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে তাঁর রচিত নেটিভ ফিমেল এডুকেশন নামক পুস্তিকা বিশেষভাবে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু মিশনারিদের পরিচালিত স্কুলগুলিতে উচ্চ ও সম্ভ্রান্ত বংশের বালিকারা কখনোই শিক্ষালাভের জন্য ভরতি হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিশনারিদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মান্তকরণ করানো এবং আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের সময়ে তারা ছাত্রীদের নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখতে দিত না। এই পরিস্থিতির কথা অ্যাডাম তাঁর শিক্ষাসংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেওছিলেন।

সমস্যা ছিল কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক শিক্ষাদান করা যায়—সেই বিষয়ে। অন্যদিকে নারীশিক্ষা বিস্তারে অর্থব্যয় করতেও সরকারের কুণ্ঠা ছিল। কিন্তু এত রকমের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে কতিপয় ব্যক্তির উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে চব্বিশ পরগনার বারাসতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হল। এই বিদ্যালয়ে স্থানীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের কিছু বালিকা যোগ দেওয়ায় পরিমণ্ডলে যে-পরিবর্তন ঘটতে চলেছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার ও পরিচালকদের নানাভাবে হেনস্থা করার পরও বিদ্যালয় বন্ধ করা গেল না।

ওদিকে কলকাতায় জন ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন গভর্নর জেনারেল-এর কার্যনির্বাহী পরিষদে নতুন আইন-সদস্যরূপে যোগ দিলেন। এই বেথুন লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলে বাংলার রক্ষণশীল ধর্মসভার উকিল হিসেবে সতীদাহ নিষেধ সংক্রান্ত বেন্টিঙ্কের আইনের বিরোধিতা করেছিলেন। ভারতে পদার্পণ করে ও ভারতীয় বিশেষত, হিন্দুসমাজে নারীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাঁর মনের পরিবর্তন ঘটে। তিনি নারীশিক্ষা বিস্তারে অগ্রণীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সঙ্গী হিসেবে লাভ করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। যোগেশচন্দ্র বাগল মনে করেছিলেন যে, প্রিভি কাউন্সিলে নিজের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বেথুনের মনে যে পাপবোধের সঞ্চার হয়, সেখান থেকে মুক্তি পেতেই তিনি এদেশে নারীশিক্ষা বিস্তারে এগিয়ে আসেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে হিন্দু বা ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল গঠনের মধ্য দিয়ে নারীশিক্ষা প্রসারের যজ্ঞ সূচিত হল। কেউ বলেন এই বিদ্যালয়ের নাম ছিল ভিক্টোরিয়া বেঙ্গলি স্কুল।

বিদ্যাসাগর ব্যতীত দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার ও শম্ভুনাথ পণ্ডিতের মতো উদারচেতা ভারতীয়রা সক্রিয়ভাবে বেথুনের সহযোগিতা করেছিলেন। দক্ষিণারঞ্জন ১০ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি সহ নগদ ৮ হাজার টাকা দান করেছিলেন। মদনমোহন নিজের দুই কন্যা যথাক্রমে, ভুবনমালা ও কুন্দমালাকে এই বিদ্যালয়ে ভরতি করান। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রীশিক্ষার পক্ষে তিনি এক জ্বালাময়ী প্রবন্ধ লেখেন। বিদ্যালয়ের প্রথম সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। বেথুনের মৃত্যুর পরে লর্ড ডালহৌসির পত্নী এই স্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যু ঘটলে ডালহৌসি নিজেই তা বহন করতে এগিয়ে এসেছিলেন। ডালহৌসি পদত্যাগ করে স্বদেশ রওনা হলে সরকার স্কুলের দায় বহন করতে মনস্থির করে। সেই ব্যবস্থা বর্তমানকালেও চলেছে।

নারীশিক্ষার বিস্তারে প্রধান বাধা ছিল ভারতীয় হিন্দুদের বর্ণব্যবস্থা। মুসলমানদের ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল আরও জটিল। মুসলমান বালকরা পাশ্চাত্যের শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে মুসলমান বালিকাদের যে বিদ্যালয়ে পাঠানো আদৌ সম্ভব ছিল না, তা বলাই বাহুল্য। তবে হিন্দু বালকরা পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণে ধীরে ধীরে উৎসাহী হতে থাকায় বালিকাদের মনেও সেই শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ সঞ্চারিত হয়। কিন্তু বাল্যবিবাহ তৈরি করেছিল অন্য এক সমস্যা। বিবাহের পর রমনীকে পুরোদস্তুর পর্দার আড়ালে রাখার যে প্রচেষ্টা, তারই ফলে ঊনবিংশ শতক জুড়ে নারীশিক্ষার প্রসার নিয়ে অসুবিধা দেখা দেয়।

আবার শিক্ষিকার সমস্যাও ছিল কারণ, বালিকা বিদ্যালয়ে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ করা চলত না। তাই উপযুক্ত শিক্ষিকা পেতে মহিলাদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। প্রশিক্ষণ দানের জন্য গড়া হল নর্মাল স্কুল। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে কুমারী মেরী কার্পেনটার কলকাতায় আসেন এবং মূলত তাঁরই উদ্যোগে সরকার বালিকা বিদ্যালয়গুলিকে সাহায্য করতে নর্মাল স্কুল খুলতে সচেষ্ট হয়।

প্রাথমিক পর্বে বিদ্যাসাগর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরবর্তীকালে নানা রকমের সমস্যা দেখে এই কাজের থেকে নিজেকে পৃথক করে নেন। তাঁর যুক্তি ছিল যে, ১০/১১ বছরের বালিকাদেরই যখন বাড়ি থেকে বাইরে যেতে দেওয়া হয় না তখন, পরিণত যুবতীদের শিক্ষালাভের জন্য কোনোভাবেই বাড়ি থেকে ছাড়া হবে না। সহজ পন্থা হিসেবে বিধবা রমণীদের শিক্ষিকার প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা হলেও বিদ্যাসাগর সে ব্যবস্থাকেও সমাধান হিসেবে মানতে পারেননি। কারণ, ওই শিক্ষিকাদের নানারকমভাবে সন্দেহের শিকারে পরিণত করা ছিল সহজ। তাই স্ত্রীশিক্ষার এক অন্যতম অনুরাগী হওয়া সত্ত্বেও নর্মাল স্কুল সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে বিদ্যাসাগর যুক্ত থাকলেন না। বিদ্যাসাগরের দূরদৃষ্টি ছিল যথেষ্ট। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই নর্মাল স্কুলগুলি বন্ধ হল।

তবে মিশনারিদের উৎসাহ ছিল অদম্য। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করে মহিলা শিক্ষয়ত্রীদের সাহায্যে বিদ্যালয় চালু করল। প্রধানত ইউরোপীয় মহিলারাই এই কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ভারতীয় খ্রিস্টান রমণীরাও যোগ দেন। সাধারণভাবে কিছু বাছাই করা ভাষা ও সাহিত্য-বিষয়ক পুস্তক পাঠ, গণিত, বিদ্যাসাগর অনূদিত ইতিহাস বই, সূচীশিল্প প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন কুমারী ব্রাইটন নামে এক ব্রিটিশ রমণী। তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে গিয়ে শিক্ষা দিতেন। বেতন বাবদ ছাত্রীকে মাসে দুটাকা দিতে হত এবং সরকার ছাত্রী পিছু মাসিক এক টাকা হারে সাহায্য দিত। এই অর্থে বিদ্যালয় চালনা করা সহজ কাজ ছিল না। তাই মিশনারিদের অর্থব্যয় করতেই হত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আমেরিকান মিশনারিরা প্রতিমাসে এই বাবদে ১২০০ টাকা সাহায্য করত। বিধবা রমণীদের অবৈতনিক শিক্ষাদান করা হত।

বাংলার নানাস্থানে মিশনারিদের উদ্যোগে এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদান হলেও স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের কাজ সন্তোষজনক ছিল না। কিছুক্ষেত্রে সমস্যা ছিল অন্যরকম। শিক্ষিকারা বাইবেল পাঠের ওপর গুরুত্ব আরোপ করায় তাদের প্রতি সন্দেহ দানা বাঁধে। কুমারী ব্রাইটন ও তাঁর মতো অনেকে ধর্মান্তকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। অর্থাৎ মিশনারিদের শিক্ষাদানের পশ্চাতে সুপ্ত আকারে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের যে-আয়োজন চলছে, তা অনেকেই বুঝতে পারেন। সমকালীন বহু সংবাদপত্রে তাই এই ধরনের শিক্ষাদানের বিরোধিতা করা হচ্ছিল। ফলে নারীশিক্ষাদানের পথে প্রতিবন্ধকতা ছিল বিস্তর। দেখা গেল যে, বাল্যবিবাহ, অবরোধ ব্যবস্থা, যথাযথ শিক্ষিকার অভাব এবং নারীশিক্ষার প্রসারে পুরুষদের অনীহার কারণে ফলবতী কিছু হওয়া কঠিন। ঊনবিংশ শতকের শেষের দশকগুলিতে ব্রাহ্মরা সক্রিয় হয়ে ওঠায় এবং বিশেষ করে কেশব চন্দ্র সেন ও তাঁর অনুগামীরা শিক্ষাবিস্তারের আন্দোলন শুরু করায় নারীশিক্ষা বিস্তারের কাজে গতি আসে।

Leave a Reply